ফেসবুক ইজ নট বিল্ট ইন এ ডে

Spread the love

ফেসবুক কী জিনিষ সেটা এখন আর কাউকে নতুন করে বোঝানো লাগে না। বিশেষ করে যাদের ইন্টারনেট সংযোগ আছে। জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর বড়দেশ হচ্ছে চীন (১৬০ কোটি)। এর পরেই ফেসবুকের জনসংখ্যা মাত্র ১৩৫ কোটি! এর মধ্যে ৮৪ কোটি লোক দিনে অন্তত একবার ফেসবুক ব্যবহার করে। এরা প্রতিদিন পৃথিবীর সব মানুষের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারের ৬% সময় ফেসবুকে কাটায়। ১৩-১৭ বয়সী ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৮% সবসময় ফেসবুক খুলে রাখে! বাংলাদেশেও এর গ্রাহক এককোটির বেশি যাদের মধ্যে ৬০ লক্ষ মাসে অন্তত একবার ফেসবুক ব্যবহার করে।

শেরিল স্যান্ডবার্গ

হাবার্ট-এর ডরমিটরিতে শুরু হওয়া এ কোম্পানি হলো এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবিকাশমান কোম্পানি। ফেসবুক এখন বিশ্বের ২ নং জনপ্রিয় ওয়েবসাইট! (গুগলের পরে)। এর বাজার মূলধন হল ২০৬ বিলিয়ন ডলার। গতকাল এর শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ৭৪.২৪ ডলার। এর আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সম্পত্তির হিসাব বরং আমরা না নেই। ওখানে চকরি করেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী মহিলা বিলিওনিয়ার, শেরিল স্যান্ডবার্গ। ফেসবুকের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা। বেতনাদি আর স্টক মিলিয়ে শুধু গত বছরই তার সম্মপত্তি বেড়েছে মাত্র ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি! [শেরিলের গল্প পড়া যাবে এখানে]

প্রশ্ন হচ্ছে ফেসবুক কী রাতারাতি ফেসবুক হয়েছে?

২০০৬ সালে ফেসবুক সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। আমি আমার একাউন্ট তৈরি করি মনে হয় ২০০৭ সালে। পেশাগত এবং নেশাগত কারণে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে আমার কিছুটা আগ্রহ আছে। এ জন্য এ সময়ের তিনটি বড়ো কোম্পানি সম্পর্কে যখনই সুযোগ পাই তখনই পড়ার চেষ্টা করি।
বিল গেটসের বক্তৃতা, খোলা চিঠি এবং দি রোড এহেড আমাকে অনেক খানি আপ্লুত করেছে। কোথাও সুযোগ পেলে আমি আইবিএমের সঙ্গে বিলের চুক্তির গল্পটি উল্লেখ করতে ভুলি না। যেমনটি আমি প্রায়শ বলি সিলিকন ভ্যালিতে গড়ে আড়াই হাজার চেষ্টার পর একটি গুগল তৈরি হয়। গুগলের বিকাশমানতা নিয়ে আমার জানার আগ্রহ বেড়ে চলেছে সমান ভাবে। গুগল কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে তাদের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী একটা বই লিখেছেন গত সপ্তাহে। এখনও যোগাড় করতে পারি নাই। মাইক্রোসফট, গুগলের পরই আমার পড়ালেখার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ফেসবুক। ভাল করে আমরা যদি দেখি তাহলে কয়েকটি ঘটনা আমরা লক্ষ করতে পারি।
গেল শতকের ষাটের দশকে যখন কম্পিউটারের বিকাশ শুরু হয় তখন এটির কেন্দ্র ছিল হার্ড্ওয়ারকে ঘিরে। কাজে সে সময়ের সবচেয়ে বড়ো কোম্পানির নাম আইবিএম। ওদের মনোপলি ঠেকাতে আমেরিকার আইন বিভাগ আইবিএমকে কিছু একটা ছাড়তে বলেছিল। আইবিএম সে সময়ের সবচেয়ে অনুল্লেখ্য অংশ অপারেটিং সিস্টেমটি ছেড়ে দেয় বিলের হাতে। পিসি প্রতি ১ ডলারে শুরু হয় মাইক্রোসফটের যাত্রা। আশির দশক শেষ হতে না হতে বোঝা গেল কম্পিউটারের সবকিছু আাবর্তিত হবে সফট্ওয়্যারকে ঘিরে। কাজে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোকটির ফোর্ডের মতো কোন গাড়ি বা আইবিএমের মতো কোন ফ্যাক্টরি নাই। আছে হলো হাজার হাজার মানুষের জ্ঞানের ব্যবহারে গড়ে ওঠা পরিবার। তারা এমন জিনিষ বানায় যেটা ধরা যায় না।
ইন্টারনেট আর ওয়েব নিয়ে এল নতুন স্রোত। সে সময় অনেকে বলতেন এক সময় সবার একটি হোম পেজ থাকবে। কিন্তু কীভাবে থাকবে তা বোঝা যায় নি।যতো মানুষ ইন্টারনেটে ঝুকতে শুরু করলো, ততো দেখা গেল খোঁজা খুঁজির মাত্রা বাড়ছে। কাজে হাজির হলো গুগল। (১ এর পর ১০০টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় সেটির নাম গুগল)।
গুগলের ব্যবসা কীভাবে হয়? দীর্ঘদিন আমি এটা ভাবতাম। পরে বুঝলাম ব্যবসার ব্যাপারটাই গুগোলে নাই! কী আছে??? সেবা। মানে গুগোল আবর্তিত হয় সেবাকে কেন্দ্র করে। গুগোল সেবা দিতে চেয়েছে আর ব্যবসা তার পিছু পিছু হাজির হয়েছে। গুগোলের নানান বিষয় বোঁঝার জন্য এখন অনেক বই পত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালটি সম্ভবত জার্ভিসের হোয়াট উড গুগোল ডু?
হার্ড্ওয়্যার, সফটওয়্যার, সেবা – তারপর কী??


মানুষ।

”হার্ড্ওয়্যার, সফট্ওয়্যার, হিউমানওয়্যার
তিন মিললে হয় বিজয়,
মানুষই আসল তবু,
নইলে পুরো অপচয়।”

তা সে মানুষকে কেন্দ্র করে কী কিছু হবে না?
একুশ শতকে তাই মূখ্য হয়ে ওঠার কথা মানুষেরই। আমাজন ডট কমে আমরা তার একটা নমুনা দেখে ফেলেছি। আমাজন কেন সফল? কারণ আমাজনের কোন সেলসপারসন নাই!!! আমরা সবাই তার সেলসপারসন। মুক্ত দর্শনের এক বিরাট সাফল্য হলো আমাজন। সকল ক্রেতাই তার বিক্রেতা!
তবে, আমাজনের কথা কী জুকারবার্গের মনে ছিল?? না, জাকারবার্গ আসলে আমাজন ডট কম নিয়ে ভাবেই নাই। ওর চেষ্টা ছিল এমন একটা কিছু করা যা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে জোরদার করবে। ফেসবুকের আগেও এমন সাইট ছিল। তবে, সেগুলো বেশিরভাগই ডেটিং সাইট।
জুকারবার্গ এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছে যা কী না জনগণকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রাখবে, প্রত্যেক মানুষ, তার সঙ্গে অন্য মানুষের সম্পর্ক, সেগুলোর বিকাশই হবে মুখ্য। “আমি শুধু আমার কাজটা করতে চাই”। ডেভিড কার্কপ্যাট্রিকের কাছে এটা হলো তার সরল স্বীকারোক্তি। এর এ কথা বলেছে ডেভিডের সঙ্গে প্রথম যে দিন তাঁর দেখা হয় সেদিন। সেটি ২০০৬ সালের কথা। তখন থেকে ডেভিড (একটি বড়ো পত্রিকার টেক-কলাম লিখিয়ে) ফেসবুক আর তার কো-ফাউন্ডারকে দেখছে। দেখেছে কারণ একটি বই লিখতে হবে। ডেভিডরা কোন কাজ তাড়াহুড়া করে করেন না। করেন এমনভাবে যাতে সব কিছু ঠিকঠাকমতো হয়। কাজে তার “the Facebook effect” প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। ২০১১ সালে সেটির একটি হালনাগাদ ভার্সন প্রকাশিত হয়েছে।
ডেভিড বইটি শুরু করেছেন ২০০৮ সালে কলম্বিয়াতে হয়ে যাওয়া একটি ঘটনা দিয়ে। কলম্বিয়াতে একটি হাড়ে হাড়ে শয়তান তথাকথিত বিপ্লবী বাহিনী আছে (FARC)। কাজ হলো বিভিন্ন লোককে অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করা। থাকে জঙ্গলে। কাউকে কাউকে আটকে রাখে ৬-১০ বছর! কোন কোন মায়ের সেখানেই সন্তান হয়। সেই সন্তানকে ঠিকমতো দেখভাল করতে না পারলে তারা সে শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে কোথাও ফেলে দিয়ে আসে। ইমানুয়েল নামে ৪ বছর বয়সী একটি মেয়ের মুক্তির জন্য ২০০৭ সালে কলম্বিয়াতে অনেকে চেষ্টা করে সবাই। ফার্ক সেটা নিয়ে নেগোশিয়েটও করে এবং দেশবাসীকে আশ্বত্ব করে যে তারা তাকে ২০০৭ সালের ক্রিসমাসের আগেই ছেড়ে দেবে। কিন্তু ক্রিসমাসের পরে জানা যায় ইমানুয়েল আসলে তাদের কাছে নেই সেও এক বছর। ওরা ইমানুয়েলকে এক জায়গায় ফেলে দিয়েছে। এবং শেষমেষ সে সরকারি ব্যবস্থাপনার হাতে পড়েছে।
ফার্কের কাছে পুরো কলম্বিয়া প্রায় জিম্মি। সরকারও যুত করতে পারে না। ইসানুয়েলকে নিয়ে ফার্কের এই ফাজলামি যাদেরকে বিরক্তির শেষ পর্যায়ে নিয়ে যায় তাদের মধ্যে একজন তরুন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অস্কার মোরালেস। ৪ জানুয়ারি নিজের ঘৃণা বিরক্তি প্রকাশের জন্য একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেন। ফার্কের বিরুদ্ধে এক মিলিয়ন কণ্ঠ!!!

পরেরটুকু ইতিহাস। ইতিহাস বলে বলতে হয় ফেসবুক ইজ নট বিল্ট ইন এ ডে।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।

One Reply to “ফেসবুক ইজ নট বিল্ট ইন এ ডে”

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version