ইমোশনাল মার্কেটিং – কেস স্টাডি ৩: ক্রিসমাস মিরাকল

Spread the love

ইমোশনাল মার্কেটিং – কেস স্টাডি ২ : আই হ্যাড লাইক টু বা’য় দ্যা ওয়ার্ল্ড এ কোক

এটি একটি অন্যরকম মার্কেটিং অথবা এমন কিছু কেউ আগে দেখেছে কিনা কে জানে।

ঘটনা শুরু হয় ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে। কানাডার একটি স্বল্প পরিচিত এয়ারলাইন ওয়েস্টজেটের কর্মীরা তাদের যাত্রীদের কী উপহার দেওয়া যায় সেটা নিয়ে ভাবতে থাকে। ওদের ইচ্ছে বড় কিছু করার। এমন কিছু যা একাধারে হবে এক্সাইটিং এবং আনন্দময়।

তিনমাস পরে তিনটি এয়ারপোর্ট, ১৯টি হিডেন ক্যামেরা এবং ১৭৫ জন ভলান্টিয়ারের সহায়তা নিয়ে ওরা ২৫০ জনের বেশি বিমানযাত্রীর জন্য সেই আশ্চর্য ঘটনাটি ঘটায় যা এখন ক্রিসমাস মিরাকল নামে পরিচিত। আমার হিসাবে এটি এ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া ইমোশনাল মার্কেটিং-এর সফলতম উদাহরণ।

নভেম্বর ২১ তারিখে কানাডার ক্যালগরিগামী দুইটি ফ্লাইটকে তারা বেছে নেন যাত্রীদের “ক্রিসমাসের অলৌকিকতা” দেখানোর জন্য। এর একটি হ্যামিল্টন থেকে এবং অপরটি টরোন্টো থেকে।

সান্টা ক্লজ যাত্রীদের স্বাগ জানায় এয়ারপোর্টের একটি বড় স্ক্রিনে। ঐ স্ক্রিনের সামনে একটি বারকোড রিডারের সামনে যাত্রীরা তাদের বোর্ডিং পাস তুলে ধরে। সান্টা তাদের কাউক কাউকে নাম ধরে ডাকে এবং জানতে চায় ক্রিসমাসে তারা কী উপহার পেতে চায়। যাত্রীরা যখন হৈ চৈ করে তাদের ইচ্ছের কথা তুলে ধরে তখন ক্যালগারিতে বসে থাকা ভলান্টিয়াররা সেই ইচ্ছেগুলোর তালিকা তৈরি করে।

বিমান যখন আকাশে ওড়ে, তখন ক্যালগরিতে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের তালিকা নিয়ে বের হয়। আগে থেকে বেস্ট বায় এবং ক্রস আয়রন মিলসের স্টোর থেকে উপহারগুলো যোগাড় করে প্রেত্যেকের নামে নামে সেগুলো রেপিং করা হয়।

বিমান এসে পৌছায় ক্যালগারি বিমানবন্দরে। যাত্রীরা জড়ো হয় লাগেজ বেল্টে। যখন লাগেজ ট্রেইলে বাক্স প্যাটরাগুলো আসতে শুরু করে তখন যাত্রীরা অবাক হয়ে দেখে লাগেজের সামনে প্রত্যেকের নামে আলাদা আলাদা নীল রঙ্গের প্যাকেট। মোট ৩৫৭টি উপহারের মধ্যে মোজা থেকে অন্তর্বাস, স্নোবোর্ড থেকে এনড্রয়েড ট্যাবলেট কিংবা বড় পর্দার টেলিভিশন ছিল। যাত্রীরা অবাক হয় কারণ মাত্র ঘন্টাখানেক আগে তারা তাদের এই ইচ্ছের কথা বলেছিল। বাইরের তুষারের কথা ভুলে যাত্রীদের আনন্দ শুরু হয় তখন! অনেকের চোখেই ছিল অশ্রু, আনন্দের অশ্রু। এ এক অত্যন্ত দামী কিন্তু অলৌকিক দৃশ্য!!!

১৯টি ক্যামেরায় পুরো ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এডিটেড ভার্সন ওয়েস্টজেট তাদের ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ করে ডিসেম্বরের ৯ তারিখে, রাতের দিকে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র তিন লক্ষ ১৫ হাজার ভিউ হয় সেটির। পরবর্তী চার দিনে এটি মাত্র ১৯ মিলিয়ন ভিউ পায়! এবং হয়ে যায় বিশ্বের প্রথম ৫টি ভাইরাল ভিডিওর একটি। এ পর্যন্ত এটি ৪ কোটি ৮০ লক্ষবার দেখা হয়েছে।

এই বিজ্ঞাপনের ইম্প্যাক্টটাও হিসেব করা হয়েছে না না ভাবে

  • ওয়েস্টজেটের অন্যান্য ভিডিওগুলো এর পরে ৫.৫৮ মিলিয়ন মিনিট দেখা হয়েছে। গ্রাহকদের এনগেজমেন্টের কথাটা ভাবুন।
  • ওয়েস্টজেটের ব্র্যান্ড এওয়ারনেস গ্লোবালি বিপুল পরিশানে বাড়ে। ২৩৬টি দেশ ও টেরিটরি থেকে এই ভিডিও দেখা হয়েছে
  • ধারণাকরা হয়েছিল এর ভিউ হবে ৫ লাখ। হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখের বেশি। ৭০০০% বেশি
  • ইউ টিউবে এক রখ্ষ ৯২ হাজার লাইক পাওয়া গেছে, এক লক্ষ ৭২ হাজার ৮০০ শেয়ার হয়েছে, ২৯ হাজারের বেশি মন্তব্য এসেছে। তাদের চ্যানেলে নতুন সাড়ে ৩০ হাজার গ্রাহক যুক্ত হয়েছে
  • বিশ্বব্যাপী ১৬০০ এর বেশি মিডিয়া এই বিজ্ঞাপনটি চিত্রটি ৩২৮ মিলিয়ন মিনিটের বেশি ব্রডকাস্ট করেছে
  • ৩.২ এমএম ফেসবুক ও ৪২.২ এমএম টুইটার ইম্প্রেশন পাওয়া গেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে কী এমন আছে এই ক্যাম্পেইনে যা এরকম একটা আনন্দের বিস্ফোরণ তৈরি করতে পেরেছিল?

দ্বিতীয়বার দেখলেই এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

 

 

 

[এই লেখাগুলো আমার প্রকাশিতব্য ইমোশনাল মার্কেটিং বই-এর অংশ বিশেষ। আমার সকল লেখা, বক্তৃতা এবং বই প্রকাশিত হয় সৃজণী সাধারণ লাইসেন্সের আওতায়। এটি ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের বাংলা ভার্সন। এর মানে হলো যে কেউ অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এর কন্টেন্ট শেয়ার, ছাপা বা ফটোকপি করতে পারবে। আমার অনুমতির প্রয়োজন হবে না। কেবল কোন গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে সেখানে সূত্র উল্লেখ থাকলে ভাল]

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version