ইমোশনাল মার্কেটিং-৮ : চাই সঠিক কৌশল-১
ইমোশনাল মার্কেটিং-৭ : পরে লেখা হবে
ইমোশনাল মার্কেটিং-৬ : দুসংবাদ বাতাসের আগে ধায়
ইমোশনাল মার্কেটিং কৌশল নানাভাবে করা যেতে পারে। কতগুলো স্ট্রাটেজির কথা বলব, সেগুলোর কম্বিনেশন হতে পারে এবং সেগুলোর যেকোন একটাও হতে পারে। আবার ইচ্ছে করলে একটা ইমোশনকে টার্গেট করতে পারে,
একাধিক ইমোশনকেও টার্গেট করা যেতে পারে। কাজেই আমরা এর কৌশলগুলো দেখি-
নো ইওর অডিয়েন্স
প্রথম কাজ হলো নিজের টারগেট অডিয়েন্সকে ভালমতো চেনা। এটা শুধু ইমোশনাল মার্কেটিংয়ের জন্য নয় যেকোনো মার্কেটিং এর জন্যই প্রযোজ্য। আমি যার জন্য প্রোডাক্ট তৈরি করেছি, বিজ্ঞাপন/ক্যাম্পেইন তার কাছে পৌঁছাবে তো? কাদের জন্য বিজ্ঞাপন বানাচ্ছি? বাটার জুতার কথা ধরা যাক। ছোটদের জন্য বাটার জুতা যদিও বাচ্চাদের, কিন্তু সিদ্ধান্তটাকে নেয় বাবা মা। কাজে দুই তরফের কাছেই সেটা পৌঁছাতে হবে। বাচ্চা যদি শুধু স্কুলে, তার ক্লাসে বিজ্ঞাপনটা দেখে তাহলে সে কিন্তু তার বাবা-মা’কে কনভিন্স করতে পারবে না। কিন্তু সেটা যদি সে এমন কোথাও দেখে যখন তার বাবা-মা তার সঙ্গেই আছে তাহলে তার জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তারমানে এই বিজ্ঞাপনটা যেন উভয় দলের উপযোগী হয়। এমন কিছু হওয়া যাবে না যা কোন এক দলকে অখুশী করবে। সে হিসাবে “হাটি হাটি পায়ে দেখো না” বিজ্ঞাপনটি খুবই চমৎকার ছিল।
তার মানে দাড়াচ্ছে অডিয়েন্স চিনলেই কেবল হবে না, বরং যাওয়ার রাস্তাটাও ঠিক করতে হবে। এটিই এখন জটিল হয়ে গেছে হাজার হাজার মিডিয়ার কারণে।
টার্গেট অডিয়েন্সকে চেনার জন্য আসলে একটা ছোট স্টাডি করে নেয়া উচিত। সাধারণ যারা মার্কেট স্টাডি করে তাদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আর যদি সেটা নেওয়া না যায় তাহলে নিজেকেই একটা মোটামুটি কাজ চালানোর মতো স্টাডি করতে হবে। এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত গাইড লাইন পরিশিষ্টে দেওয়া হবে।
কিন্তু আমাদের খুব ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে আমরা অবশ্যই বুঝতে চাই কীভাবে আমার অডিয়েন্সকে আমি চিনতে পারি, আমি কোন ধরনের ইমোশনকে ব্যবহার করবো, কোন ধরনের ইমোশনগুলোকে একত্রিত করে একটা মিক্স ইমোশন করার চেষ্টা করবো। এই সব কিছু কিন্তু নির্ভর করে আমার টার্গেট অডিয়েন্সের ওপর।
রংয়ের সঙ্গে যাও
আমরা আগেই বলেছি রঙের সঙ্গে ইমোশনের একটা চমৎকার সুন্দর সম্পর্ক আছে। কাজেই ভিন্ন ভিন্ন রং কিন্তু একটা ভিন্ন ধরনের ইমোশনকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। আমাদের এখানেও আমরা নানান ভাবে রঙের ব্যবহার করি। কোনদিন দেখেছেন একটি শোক সংবাদ লাল রঙ ব্যবহার করে করা হচ্ছে?
ধরা যাক আপনি দুটো রুমের যে কোন একটিতে যাবেন। একটির দেওয়াল উজ্জ্বল রঙের আর অন্যটি কালো রঙের। বেশিরভাগ সময় লোকে উজ্জ্বলটাতেই যায়। কেবল মন খারাপের সময় যায় কালোটিতে। তারমানে রঙের ব্যবহারে সঙ্গেও আবেগের, মনের অবস্থার একটা সম্পর্ক আছে। কাজে রঙের ব্যবহার শিখতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেমনে শিখবেন?
বিজ্ঞাপন এজেন্সীগুলো কিন্তু তাদের ক্রিয়েটিভ তৈরি করেই সেটি ক্লায়েন্টকে দিয়ে দেয় না। বরং নিজেরা প্রথমে দেখে। বড় এজেন্সীগুলোর সঙ্গে মনোবিদদের যোগাযোগ থাকে। তারা ক্রিয়েটিভটা দেখিযে নেয়। নিজেদের তো রঙের ওপর পড়াশোনা আছেই।
অন্যদিকে অনেকই একই জিনিষ একাধিক রঙ দিয়ে তৈরি করে। তারপর সবার প্রতিক্রিয়া দেখে। এখন আপনার যদি এমন এজেন্সী না থাকে তাহরে আপনি কী করবেন?
বিশেষ করে যারা ‘ওয়ানম্যান আমি’ বা পেশাদার এজেন্সীর সাহায্য নিতে পারেন না তারা কী করবেন?
তাদের জন্য সহজ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তা নেওয়া। আমার গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং, শরবতে বাজিমাত, পড়ো পড়ো পড়ো বই-এর বেলায় আমি এই কাজ করেছি। তিনটি বই-এর প্রশ্চদের ডিজাইন ঠিক রেখে রঙ আলাদা করে তিনটে কভার করেছি। তারপর আমার নেটওয়ার্কের বন্ধুদের সহায়তা চেয়েছি এবং তাদের পছন্দকে দাম দিয়েছি। এটি কেবল বই-এর কভার নয়, যেকোন ডিজাইনের বেলাতেই হতে পারে।
তবে, সব সময় আপনি ক্রাউডের কাছে নাও যেতে পারেন। অনেক সময় ক্রাউডের কাছে গেলে আপনার প্রতিদ্ধন্ধীরা সেটা জেনে ফেলতে পারে। তখন একটা ক্লোজ গ্রুপকে রঙটা দেখিয়ে নিতে পারেন।
আপনি অফিস সাজানোর সময়ও কিন্তু রঙের ব্যাপারটা মাথাতে রাখবেন। সাধারণত অফিসে উজ্জ্বল রঙের আধিক্য থাকে। একজন থেরাপিস্টের সঙ্গেও কথা বলে নিতে পারেন। ব্র্যান্ডের কালার কিন্তু খবই গুরুত্বপূর্ণ। কোকাকোলার লাল হচ্ছে পজিটিভ ফ্রেন্ডলি এনার্জি। অন্যদিকে স্টারবাকের সবুজ কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে বেড় ওঠা, ভাল স্বাস্থ্যের প্রতীক।
আপনার ব্র্যান্ডের রঙ কি?
আমার একটা গল্প আছে
তিন নম্বর হলো একটা গল্প বলা। এখন কিন্তু সবাইকে গল্পের কথক হতে হবে। স্টোরি টেলিং কিন্তু সব সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। আপনাকে অবশ্যই খুব ভালোভাবে গল্প তৈরি করতে হবে, গল্পটা বলতে হবে। শুধু বলার কারণেই একটি শাদামাটা গল্পও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে। যদি গল্প বলাটা না হয় তাহলে আপনি এগোতেই পারবেন না।
প্রক্টর এন্ড গ্যাম্বলের “থ্যাংকু মম” বিজ্ঞাপনটা দেখেন।
এটি ২০১৪ সালের অলিম্পিকের সময় তৈরি করা। এটি মূলত বেশ ক’জন অলিম্পিক হিরোর গল্প। তারা কীভাবে মায়ের সাহায্যে আজকের অবস্থানে এসেছে। পিএন্ডজি’র প্রোডাক্টগুলো মনে আছে তো? এ বিজ্ঞাপনের সময় তাদের হ্যাশট্যাগ ছিল #BecauseOfMom।
এতো গেল মায়ের গল্প। বাবা’দের নিয়েও কি একই গল্প বলা যায। হ্যা যায়। মেটলাইফ (আগের আলিকো)-এর ‘আমার বাবা মিথ্যুক “My Father is a Liar.” । এই বিজ্ঞাপন চিত্রটি দেখে নিন আগে-
এটি একটি ছোট্ট বালিকা ও তার বাবার গল্প। বাবা তার মেয়ের কাছে সুপার হিরো, বেস্ট বাবা। কিন্তু ‘সে মিথ্যা কথা বলে’। মেয়েকে এবং পরিবারকে খুশী করার জন্য সে বাবা অনেক মিথ্যা কথা বলে যা তার মেয়ে ধরে ফেলে। এ বিজ্ঞাপন দেখে নিজেকে সংবরণ করা কঠিন। বিজ্ঞাপনটা শেষ হয় মেটলাইফের ট্যাগ লাইন দিয়ে “A child’s future is worth every sacrifice, (সবকিছুর বিনিময়ে চাই সন্তানের ভবিষ্যৎ )” । যাদের কাছে মেটলাইফ পৌছাতে চায় তাদের জন্য এর থেকে ভাল গল্প আর কী হতে পারে?
পরের পর্ব -চাই সঠিক কৌশল-২
স্টে টিউন।
One Reply to “ইমোশনাল মার্কেটিং-৮ : চাই সঠিক কৌশল-১”