ইমোশনাল মার্কেটিং-১৩ : টার্গেট যখন নারী
ইমোশনাল মার্কেটিং-১২ : অপ্রকাশিত
ইমোশনাল মার্কেটিং-১১ : অপ্রকাশিত
ইমোশনাল মার্কেটিং-১০ : চাই সঠিক কৌশল-৩
বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যানকর
অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
-কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতাটি বিশ্বের সব মার্কেটারের মুখস্ত রাখতে হয়। কারণ, যে কোন প্রোডাক্ট মার্কেটিং-এর সময় মাথায় রাখতে হয় ইচ্ছে করলেই সব নারীকে, বা অভিষ্ট নারীকে ক্যাম্পেইনে অন্তর্ভূক্ত করা সহজ নয়। কঠিন কাজ। সেটি আমাদের দেশে যেমন জটিল তেমনি বিদেশেও।
তবে, মেয়েদের আবেগকে সামনে রেখে নানা ভাবে মার্কেটাররা তাদের ক্যাম্পেইন ঠিক করেন। এ ব্যাপারটা বোঝা যাবে, বিশেষ করে শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন দেখলে। মনে রাখা দরকার অন্যান্য বিউটি পণ্যের চেয়ে শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন কঠিন। কারণ শুরুতে শ্যাম্পু মোটেই কোন বিউটি প্রোডাক্ট ছিল না। ছিল ওষুধের কারবার। কালক্রমে যখন শ্যাম্পু বিউটি পন্য হিসাবে নিজের জায়গা করে নিল তখন থেকে শ্যাম্পুর বাজার ধরার জন্য আবেগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হয়েছে।
যারা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন তৈরি করে তারা সবাই কিন্তু জানে শ্যাম্পু আসরে চুল পরিস্কার করার বাইরে আর কিছুই করতে পারে না। যতোই আপনি এনিমেশন করেন আর নায়িকাদের মডেল বানান। দিনশেষে শ্যাম্পু আসলে এক ধরণের ডিটারজেন্ট মাত্র।
তো, এমন একটা পন্য যদি বিক্রি করতে হয় তাহলে সেখানে আবেগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে, সেটা বলা বাহুল্য। আর সেটাকে দেখাতে হবে নানান ভাবে।
শ্যাম্পুওয়ালার এটা শুরু করে সাইকোলজি থেকে। ২০০৯ সালে লা ফ্রান্সে প্রকাশিত “ফার্স্ট ইমপ্রেসন এন্ড হেয়ার ইমপ্রেসনে’ চুলের বাহারের সঙ্গে পুরুষ ও নারীকে বিশেষভাবে সম্পর্কিত করা হয়েছে। যেমন মেয়েদের বেলায় বলা হচ্ছে ছোট কিন্তু মজবুত চুলের অধিকারিনী (যেমন অভিনেত্রী মেগি রায়ান) হবেন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, আর সেক্সি মেয়েদের চুল হবে লম্বা, সোজা এবং ব্লন্ড। আর বুদ্ধিমতী ও ইজি গোইং-রা এর মাঝামাঝি। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসী, সেক্সী কিন্তু স্বর্থপর পুরুষদের চুল ছোট করে কাটা থাকে। লম্বা চুলের অধিকারী হিপ্পিদের ধরা হয় আকাইম্যা, কোন কাজের না। আর যথারীতি বুদ্ধিমানরা থাকে এ দুইয়ের মাঝখানে। মার্কেটাররা যখন তাদের কোন প্রোডাক্টকে বাজারে নিয়ে যায় তখন এর মধ্যে একটাকে টার্গেট করে।
ব্র্যান্ড ও বিজ্ঞাপন | বিজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা | টার্গেট গ্রুপ | কাঙ্খিত আবেগীয় রেসপন্স |
পেন্টিন,
‘স্ট্রেন্থ’ |
মডেল মেয়েরা যোগব্যায়াম আর মার্শাল আর্টে রত, চুল টেনে দেখানো হয় সেটা কতো শক্ত। | ১৮-৪৫ | একজন আধুনিক, দৃড়চেতা মেয়ে হিসাবে প্রতিদিনকার কার্যক্রমে তাদের থাকতে হয় স্ট্রং। কাজে তোমার চুল কী একইভাবে দৃঢ় হবে না? |
জনসন এন্স জনসন
‘হ্যাপি হেয়ার’ |
মা, বাবা ও তাদের সন্তানদের খেলার টাইম এবং গোসলের সময় দেখানো হয়। একটি মেয়ে নিজে নিজেই তার কবরী দোলায় | ৭ বছরের কম বয়সী শিশুর মা | প্রত্যেক বাবা-মারই ছোট বাচ্চাদের গোসল করানোর সময় দারুন সব সিচুয়েশন সামলাতে হয়। সবাই চায় এমন শ্যাম্পু দিতে যা কিনা বাচ্চাকে সুখী রাখবে। জনসন এন্ড জনসন তাই করে! |
হেড এন্ড শোল্ডার ফর মেন
‘ফ্যান ইন স্ট্যান্ড’ |
মিনেসোটার এথলেট জো মাউয়ারকে দেখা যায় তার চমৎকার চুল নিয়ে একজন মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে আলাপ করতে। | ১৩-৬৫ বছরের পুরুষ যারা নিজেদের টাফ ম্যান হিসাবে দেখাতে চায় | খুব বেশি শ্যাম্পু আসলে পুরুষদের টার্হেক করে না। বেশিরভাগ পুরুষও তাদের চুল নিয়ে আলাপ করে না। কিন্তু সবাই চায় তাদের চুলের স্টাইল যেন মেয়েদের আকর্ষন করে। এই বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় একজন সফল এথলেট দাবী করছেন তার সাফল্যের অন্যতম প্রভাবক হেড এন্ড শোল্ডার শ্যাম্পু! |
এধরণের পর্দানসীন মেয়েদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে অনেককাল আগে থেকে। এমনকী গাড়ি কোম্পানি ফোর্ড যখন কোলকাতায় তাদের অফিস খুলে তখনও তারা এই বিষয়টাকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। পালকির বিকল্প হিসাবে ফোর্ড গাড়ি। বিশ্বাস না হলে এ বিজ্ঞাপনটি দেখুন। এতে বলা হয়েছে, এ গাড়িতে আপনার পর্দা সম্পূর্ণ রক্ষা পাবে।
3 Replies to “ইমোশনাল মার্কেটিং-১৩ : টার্গেট যখন নারী”