ইমোশনাল মার্কেটিং-১: হালাল সাবানের মাজেজা
প্রশ্ন হচ্ছে হালাল সাবানের মতো আবেগীয় বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসে প্রচার-প্রচারণা এবং বিপণন স্ট্র্যাটেজি তৈরি করলে সেটা কি অনেক ভালো হয়? হয় এবং সেটি নতুনও নয়। আবেগ বা ইমোশনাল মার্কেটিং নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাপক কাজকর্ম হয়েছে। আমার ধারণা মার্কেটিং বিভাগগুলো এগুলো পড়ায়, কেস স্টাডি করে। কাজে ব্যাপারটা নতুন নয়।
তবে, আমি ব্যাপারটা ভাবছি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে। আমাদের নতুন উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগেরই মার্কেটিং খাতে খুব একটা বাজেট থাকে না। তাছাড়া সবাই প্রায় কমবেশি “ওয়ানম্যান আর্মি”। তারা কীভাবে এধরণের মার্কেটিং-এর সুবিধা পেতে পারে। উদ্যোক্তাবান্ধব দেশগুলোতে এরকম ডামিসদের জন্য প্রচুর বই পত্র লেখা হয়। আমাদের দেশে এর বড়ই আকাল। ফলে অনেক উদ্যোক্তা এখনও মার্কেটিংকে আলাদা কিছু ভাবে। আমার “গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং” বইতে আমি চেষ্টা করেছি এ কথাটা বলতে যে মার্কেটিং কিন্তু এখন আর আলাদা কোন বিষয় নয়। যেকোন ভাবে কাস্টমারদের কাছে পৌছানোর নামই মার্কেটিং। সেটি যদি হয় যে ওয়েবসাইট ঠিক করে তাহলে সেটা মার্কেটিং। সেটি যদি হয় যে ইমেইল মার্কেটিং করা, মেইলে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো তাহলে সেটা মার্কেটিং। আবার এরকম যদি হয় যে মোড়কটা পাল্টে ফেললেও সেখানে একটা ভালো লিড পাওয়া যাবে তাহলে সেটাও মার্কেটিং।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মার্কেটিংয়ের জন্য কাস্টমারের আবেগকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়? যদিও রিসার্চ বলছে যে শুধু আবেগকে কাজে লাগিয়ে যেমন কাজ হয় না একইভাবে শুধু পণ্য খুব ভালো, কোয়ালিটি খুব ভালো এবং মানসম্মত তা দিয়েও কিন্তু কাস্টমারের লয়ালিটি তৈরি হয় না। নিশ্চয় এর মধ্যে বাড়তি কিছু দরকার। সে বাড়তি কিছু কিভাবে তৈরি করা যেতে পারে সেটি নিয়েই কিন্তু অনেক কিছু ভাবার আছে।
একটা বিষয় আমরা সবসময় খেয়াল রাখি সেটা হলো কিভাবে আমরা আরো ভালো করতে পারি এবং একটা বিষয় খুব নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে আমাদের দেশে, ধরেন— আবেগকে ব্যবহার করে খুব ভালো ব্যবসা করেছে একসময় সেটি হচ্ছে আজাদ প্রোডাক্টস। আজাদ প্রোডাক্টস তাদের যে কার্ডগুলো তৈরি করেছে সেখানে ভালোবাসার বিষয় ছিলো, সেখানে আবেগের বিষয় ছিলো এবং সে আবেগকে পুঁজি করেই কিন্তু আজাদ প্রোডাক্টসের সকল উপাদান তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এমন আবেগের কারবারি অনেক আছে যাদের মধ্যে হলমার্ক অন্যতম। হলমার্ক প্রায় ১০০ বছর ধরে তাদের কার্ড, গ্রিডিংস কার্ড তৈরি করছে। পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন গ্রিডিংস কার্ড কোম্পানি এবং তারা তাদের উপরে কিন্তু এখনো অনেক মানুষ আস্থা রেখে যাচ্ছে। তো এই যে আবেগ, আবেগকে ব্যবহার করা- একটা হচ্ছে আবেগকে ব্যাবহার করে আবেগের পুঁজি দিয়েই ব্যবসা করা, আরেকটা হচ্ছে যেকোন প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে সে আবেগটাকে ব্যবহার করে একটা বিপণনের ব্যবস্থা করা। ইমোশনাল মার্কেটিং-এর মোদ্দাকথা আমার মতে এটাই।
ইমোশন মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আরো কি কি বিষয় দেখা যায়, কি কি বিষয় করা উচিৎ এসব নিয়ে হয়তো অনেক কাজ করার সুযোগ আছে।
পরের পর্ব – ইমোশনাল মার্কেটিং কী ও কেন?
5 Replies to “ইমোশনাল মার্কেটিং-১: হালাল সাবানের মাজেজা”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
Good
আমার ধারণা আগামী ৩বছরের মধ্যেই স্টোরিটেলিং হবে সবচাইতে শক্তিশালী মার্কেটিং টুল। স্টোরিটেলার কী-ওয়ার্ডটা ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়ে গেছে। এবং আরোপিত ফরমাল প্রফেশনাল বিহেভিয়ার কনসেপ্টেও পরিবর্তন আসবে, কারণ এটার ইফেক্টিভিটি কমে যাচ্ছে ক্রমশ। ইনফরমাল এপ্রোচ দিয়েই মানুষকে কানেক্ট করা এবং তাকে প্রোডাক্টিভ করা সহজ হয় যেহেতু, এটাই একসময় প্রফেশনালিজমের জায়গা নিয়ে নিবে।
বাংলাদেশের কান্ট্রি কালচারে মার্কেটিং একটি নেগেটিভ কী-ওয়ার্ড। ফলে আমি সাধারণত ‘ইমোশনাল ইনকর্পোরেশন’ শব্দটা ব্যবহার করি, কিংবা ‘ইমোশনাল এনরিচমেন্ট’ কী ওয়ার্ড ব্যবহার করি। তবে মূল বিষয় বোধহয় এটাই যে, মানুষকে মেন্টালি এটাচড করতে হবে।
আমাদের দেশে বাণিজ্য শব্দটাই খারাপ!!! কাজে এর সঙ্গে যুক্ত সব কথাই নেগেটিভ হিসেবে ধরা হয়। এ কালচার বদলাইতে যে কতোদিন লাগবে কে জানে