সব মানুষের স্বপ্ন তোমার চোখের তারায় সত্যি হোক
রাজিব, নুর আর সাইফুরের একটা কঠিন উদ্যোগ আছে। ওরা প্রতিবছর কিছু অদম্য মেধাবীদের দায়িত্ব নেয়। নাম দিয়েছে সবার জন্য শিক্ষা (education for all) । কাজটা কঠিন। ২ বছর এইচএসসি পর্যায়ে পড়ালেখা করতে সাহায্য করা। এটি কেবল টাকা দেওয়া কর্মসূচি নয়। প্রত্যেক বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে একদিন ফোন করে তার পড়ালেখার অগ্রগতি জানাতে হয়, চিঠি লিখতে হয়। সবার জন্য শিক্ষা নামের এই উদ্যোগটির কয়েকটি ব্যাচ আছে।
অন্য যেকোন বৃত্তি কার্যক্রমের সঙ্গে এই কার্যক্রমের ব্যপক পার্থক্য। কেবল এইচএসসি পর্যায়ে ২ বছরের দায়িত্ব নিয়েই এবং মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে এই কাজটা শেষ হয় না। এইচএসসি পরীক্ষার পর তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে এসে একটা বাড়িতে রেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। ফলাফল হয় অভাবনীয়। প্রথম ব্যাচের ৯ জনের মধ্যে ১ জন বুয়েটসহ ৬ জনই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, দ্বিতীয় ব্যাচের ২৩ জনের মধ্যে ২০ জনকে ঢাকায় আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে ১৫জনই গন্তব্য খুঁজে নিতে পেরেছে। আর গেল বছর ৩৯ জনকেই মেডিকেল/পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো সম্ভব হয়েছে।
চতুর্থ ব্যাচের সঙ্গে এবার আরও কয়েকজনকে যোগ করে মোট ৫০ জনকে এবার ঢাকায় আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জনই মেয়ে। এর ৩৫ জনের সকল দায়িত্ব এডুকেশন ফর অলের। বাকী ১৫ জনকে শুধু কোচিং সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ওরা থাকছে নিজেদের মতো করে। সেটিও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। ওরা সবাই আছে মোহাম্মদপুরে।
প্রতিবছর আমার ইচ্ছে হয় ওদের কয়েকটা ক্লাস নিতে। কিন্তু ইন্টারের পড়ালেখা আমি বলতে গেলে ভুলেই গেছি। কাজে নিবো নিবো করে নেওয়া হয় না। প্রতিবছর ওরা যখন ঢাকায় আসে,প্রথম দিন আমার সঙ্গে দেখা হয়। এবার সেটা হয়নি কাণ রমজান শুরু হয়ে গিয়েছিল। মনে রাখা দরকার ওদেরকে শুধু পড়িয়ে দিলেই হয় না। কারণ ওদের আর্থ সামাজিক অবস্থা। ওদের দিতে হয় প্রচুর সাহস। রাজীব আর সাইফুর সেই কাজটা করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই করতে থাকে। তারপরও ওদের চেষ্টাতো সীমিত।
এখন তো আবার পরের ব্যাচের দরখাস্ত আসা শুরু হয়েছে। ঈদের পরই তাদের যাচাই বাছাই শুরু হবে।
আমার নেটওয়ার্কের কেও যদি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চান তাহলে সরাসরি রাজীব-নুর-সাইফুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
ওদের নিয়ে প্রথম আলোতে একটা লেখাও ছাপা হয়েছে।
আমার যখন খুব মন খারাপ হয়, বাঁচতে ইচ্ছে করে না তখন আমি এই উদ্যোগের কথা মনে করি। নতুন করে উপলব্দি করি নিজের ক্ষুদ্রতাকে। তখন আবার বাঁচার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই।
মানুষ যে মানুষের জন্য এত ত্যাগ আর ভালবাসা নিয়েকাজ করতে পারে তা এই তরুনের কাজ দেখলেই বোঝা যায়। আমি খুব ভালভাবে উপলব্দি করতে পারি-
…
“এ মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক এই দাবানল পোড়াক চোখ
আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক
…
দেশ মানে কেউ ভোরের স্লেটে লিখছে প্রথম নিজের নাম
হাওয়ার বুকে দুলছে ফসল একটু বেঁচে থাকার দাম
….
সব মানুষের স্বপ্ন তোমার চোখের তারায় সত্যি হোক
আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক।”
….
….
আল্লাহ ওদের সবার মঙ্গল করুন।
সবার জন্য শিক্ষার চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সফল হোক।