দুর্গা ধ্রুবকের জাদু
আমরা ২৫১ দিয়ে শুরু করতে পারি। ২, ৫ ও ১ দিয়ে বৃহত্তম সংখ্যা ৫২১ আর ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ১২৫। বিয়োগ করে আমরা পাবো ৩৯৬। পরের বারে পাবো (৯৬৩-৩৬৯) ৫৯৪। আর তারপর ৯৫৪-৪৫৯) ৪৯৫। যে কোনো সংখ্যা দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন, কিন্তু শেষ পর্যন্তএসে ঠেকতে হবে ৪৯৫তে। বেশির মধ্যে আপনাকে এই বিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে সাতবার পর্যন্ত।
১৮৮১ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখে ৪৯৫-এর এই গুণ জানা যায়। ভারতের নয়াদিল্লির দেশবন্ধু কলেজের গণিতবিদ পি কে মুখোপাধ্যায় প্রথম এই সত্যের মুখোমুখি হোন। সেদিন ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমি। দেবীর সম্মানে গণিতবিদ ৪৯৫-এর নাম দেন দুর্গা ধ্র“বক।
থলিতে আরো বিড়াল!
দুর্গা ধ্রুবক আসলেই এক ব্যতিক্রমী সংখ্যা। এর অনেকগুলো একমেবাদ্বিতীয়ম বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
৪৯৫-এর প্রথম ও দ্বিতীয় অংকের বর্গমূলের যোগফল এর তৃতীয় অংকের সমান। প্রথম ও শেষ অংকের যোগফল মাঝের অংকের সমান (৪+৫=৯)। এই ধরনের সংখ্যাকে বলা হয় ডেমলো সংখ্যা। মজার বিষয় হলো ৪৯৫ হলো তিন অংকের একমাত্র ডেমলো সংখ্যা যেটিকে তিনটি পর পর বেজোড় (এবং মৌলিক) সংখ্যার ঘনের যোগফল হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
৪৯৫=৩^৩+৫^৩+৭^৩
৪৯৫ কে ৯৯, ৯৮৯৯, ৯৮৯৮৯৯ ইত্যাদি সংখ্যা দিয়ে গুন করলে গুনফলে এক মজার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
৪৯৫ × ৯৯=৪৯০০৫
৪৯৫ × ৮৯৯=৪৯০০০০৫
৪৯৫ × ৯৮৯৮৯৯=৪৯০০০০০৫
আর যদি গুণ করা হয় ৮১, ৮০৮১, ৮০৮০৮১ ইত্যাদি দিয়ে তাহলে গুনফলের শূন্যগুলো স্থান পরিবর্তন করে এক ঘর সামনে চলে আসে।
৪৯৫×৮১=৪০০৯৫
৪৯৫×৮০৮১=৪০০০৯৫
৪৯৫×৮০৮০৮১=৪০০০০০০৯৫
৪৯৫ থেকে এর অংকগুলোর বর্গের যোগফলকে বাদ দিলে পাওয়া যায় ৩৭৩ [৪৯৫-(৪^২+৯^২+৫^২)], যা কিনা একটি মৌলিক এবং পেনিড্রেমিক সংখ্যা।
৪৯৫-এর সঙ্গে ২-এর সম্পর্কটি দেখুন :
(৪৯৫+২)+২=৪৯৯
(৪৯৫+২)×২=৯৯৪
দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রথম সংখ্যার একেবারে দ্বিগুণ!
৪৯৫ কে ১১, ১১১ ইত্যাদি দিয়ে গুন করলে কী হবে? দেখা যাক-
৪৯৫×১১=৫৪৪৫
৪৯৫×১১১=৫৪৯৪৫
৪৯৫×১১১১=৫৪৯৯৪৫
৪৯৫×১১১১১=৫৪৯৯৯৪৫
একটু চেষ্টা করলে ৪৯৫ কে একটি সিরিজের যোগফল হিসেবে প্রকাশ করা যায়-
৪৯৫=১+৪+১০+২০+৩৫+৫৬+৮৪+১২০+১৬৫
এই সিরিজটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের। এই সিরিজটি হলো তৃতীয় পর্যায়ের পিরামিড ত্রিভুজ সংখ্যা। অর্থাৎ, এগুলো হলো জ্যামিতিক রাশিমালার একটি সিরিজ।
জ্যামিতিক রাশিমালার সিরিজ আসলে প্রকাশ করে কোনো না কোনো জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য। স্বাভাবিক সংখ্যার ধারা ১, ২, ৩, ৪… হলো প্রথম পর্যায়ের জ্যামিতিক ধারা। এই ধারা থেকে সহজে বের করা যায় ত্রিভুজ সংখ্যার ধারা যা কিনা ১, ৩, ৬, ১০, ১৫…। এই ধারার প্রথম সংখ্যাটি স্বাভাবিক সংখ্যা ধারার প্রথম পদ। কিন্তু দ্বিতীয় পদটি হলো স্বাভাবিক ধারার প্রথম দুই পদের যোগফল। তৃতীয়টি হলো প্রথম তিনটির যোগফল। এভাবে এই ধারায় যে কোনো পদ হলো স্বাভাবিক সংখ্যা ধারার প্রথম তত সংখ্যক পদের যোগফল।
স্বাভাবিক সংখ্যার ধারা থেকে পেন্টাগোনাল সংখ্যা বা বর্গ সংখ্যার ধারাও বের করা যায়।
এই ত্রিভুজ সংখ্যার ধারা থেকে একই নিয়মে বের করা যায় পিরামিড ত্রিভুজ সংখ্যা (১, ৪,, ১০, ২০, ৩৫…)
৪৯৫ নিজে এরকম একটি জ্যামিতিক ধারার সদস্য। এটি চতুর্থ পর্যায়ের জ্যামিতিক ধারা, যা কিনা আগের নিয়মে পিরামিড ত্রিভুজ সংখ্যা ধারা থেকে পাওয়া যায় (১, ৫, ১৫, ৩৫, ৭০…)।
বিজ্ঞানী প্যাসকেল যে ত্রিভুজের হিসাব দিয়েছিলেন তার দুজায়গায় ৪৯৫কে খুঁজে পাওয়া যায়।