বিশ্বাস নাই আজব চীজে, সবই বানাই নিজে নিজে
কেন জানি ছোটবেলায় আমি সর্বকর্মার প্রেমে পড়েছিলাম। সেই প্রেম আমার এখনো ছুটে নাই। আমি তাই খুঁজে বেড়াই কারা ভাল কিছু তৈরি করে। সোলার মডেল নয়, সত্যিকারের কিছু। সে ধারণা থেকে আমাদের বিজ্ঞান কংগ্রেসে আমরা কোন সোলার প্রজেক্টকে এন্ট্রি দেই না।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে আর সব জায়গাতেই কেন জানি সোলার মডেল আর বাজারের ড্রোনের প্রতি সবার আগ্রহ। অথছ কে না জানে মাপামাপিতেই বিজ্ঞান।
কয়েক বছর আগে নটরডেম কলেজে জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় একটি গ্রামীণ ফ্রিজ দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। জানতে চাইলাম – এটা কেমন ঠান্ডা করে।
“অনেক স্যার”।
-অনেক মানে কতো? জানে চাইলাম।
“হাত দিয়ে দেখেন, স্যার?”
আমি হাত দিয়ে দেখিনি। আমি ওর থার্মোমিটারের খোঁজ করলাম। নাই। থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপতে হয় এটাই আমার ঐ বিজ্ঞানীর মাথাতেই নেই!
এমনটি হওয়ার কারণ কি? আমরা সবাই কেন আন্দাজ নির্ভর হয়ে যাচ্ছি?
বিজ্ঞানের বেলায় এটির কারণ হলো স্কুলে বিজ্ঞানের ক্লাসগুলো আনন্দময় না হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের মাপামাপিতে উৎসাহ না দেওয়া ।এখনতো আবার নতুন উৎপাত হয়েছে ইউটিউব। দেখলেই নাকি হয়, করা লাগে না। যখন ইউটিউবের যুগ শুরু হয় নাই, তখন ছিল ভিসিআরের যুগ। সে সময় অভিনেত্রী জেন ফন্ডার একটি এরোবিক্সের ক্যাসেট বের হয়। এতে তিনি কীভাবে এরোবিক্স মানে এক প্রকারের বিশেষ ব্যায়াম করতে হয় তার ডেমো দিয়েছিলেন। আমি আমার এক বোনের জন্য এরকম একটা ক্যাসেট যোগাড় করে দিলাম।
তো, কয়েকদিন পরে দুলাভাইকে ফোন করে জানতে চাইলাম আপার কেমন ব্যায়াম চলছে।
দুলাভাই জানালেন – তোমার আপা ভিসিআরে ঐ ক্যাসেট ছেড়ে শুয়ে শুয়ে সেটি দেখে!
তো, ২০১৫ সালে প্রথম আমরা টিম পাঠাই আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে। দেখাগেল আমাদের শিক্ষার্থীরা থিউরিতে ভাল করলেও ব্যবহারিকে ডাব্বা মেরে এসেছে। তো, আমরা ভাবলাম আমাদের নিজেদের একটা ল্যাবরেটরির দরকার। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে আমরা ফারসীমের বাসায় প্রতিষ্ঠা করি মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার সংক্ষেমে ম্যাসল্যাব। ম্যাসল্যাবেই আমরা পরের বছরের আইজেএসও দলকে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দিলাম। ফলাফল – আমাদের ৩ জনের রৌপ্য আর ৩ জনের ব্রোঞ্জ পদক! ২০১৭তে পেলাম একটা রুফা আর তিনটে ব্রোঞ্জ।
আমাদের ভলান্টিয়াররা বেশিরভাগই বুয়েট-ঢাবি কিংবা প্রাইভেটের। ওদের জন্য মিরপুর আসা যাওয়াটা কঠিন। তাই আমরা গত বছর ম্যাসল্যাবকে এলিফেন্ট রোডে নিয়ে এসেছি। একটা খারাপ দিক হলো আগে আমাদের ঘরভাড়া ছিল না। এখন মাসে মাসে ম্যালাটাকা গুনতে হয় ভাড়া বাবদ। তবুও আমরা ল্যাবটাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
এর মধ্যে আমাদের ল্যাবের ভলান্টিয়াররা পাবনার ভাঙ্গুরাতে একটি স্কুলে কয়েকদিন কাটিয়ে আসলো। আমরা দেখলাম, আমাদের ল্যাবে যা যা আছে সেগুলোর সংখ্যা যদি বাড়ানো যায় আর যদি ভলান্টিয়ারদের যাতায়াতের খরচটা যোগাড় করা যায তাহলে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেণ করে গ্রামের দিকে বিজ্ঞানশিক্ষাকে আনন্দময় করার কাজে এটাকে কারও ভালভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।
আপাতত আমরা কয়েকটা কাজ শুরু করেছি। তারমধ্যে একটা হলো তৃতীয় শ্রেণী থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে হাতে কলমে বিজ্ঞানের মজা পায় তার একটা মডিউল বানানো। এটির কয়েকটা ধাপ রাখার ইচ্ছে। প্রঅথমিক, জুনিয়র, সেকেন্ডারি এভাবে।
এর মধ্যে জুনিয়রদের জন্য একটা মডিউল ডিজাইন করা হয়েছে। সেটার প্রথম ট্রায়ালটা দুদিন পর থেকে শুরু হবে।
তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণীর জন্য একটি মডিউল ডিজাইন করা হচ্ছে। সেটির ট্রায়াল শুরু হবে ২৫ মে। সেই ট্রায়াল কোর্সে এখনও কিছু আসন খালি আছে।
এই কোর্সগুলোর উদ্দেশ্য হল – মডিউল আর শিখন পদ্ধতি বের করা। তারপর আমরা এগুলো ‘আমাদের ইশকুল’ কার্যক্রমের স্কুলগুলোতে রেপ্লিকেট করে দেবো। আমাদের ইশকুলে এখন মাত্র একটি আনঅফিসিয়াল স্কুল আছে।
আমাদের ইশকুল কার্যক্রম হলো একটি গ্রামীণ স্কুলের সঙ্গে আমাদের সাংবাৎসরিক কার্যক্রম। এটির মাধ্যমে আমরা তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কাজের বিনিময় করবো, স্কুলে একটা ল্যাব বানাতে উৎসাহ দেবো, বিজ্ঞান ক্লাব, প্রোগ্রামিং ক্লাব এসব বানানোর ব্যাপারে সহায়তা করবো। বছরে তিন-চারবার আমাদের ভলান্টিয়াররা সেখানে গিয়ে স্যারদের সঙ্গে আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করবে। সেখানকার ল্যাবগুলোর জন্য আমাদের এই মডিউলগুরো আমরা চূড়ান্ত করছি এখন।
আমি ঠিক জানি না, এগুলোর কোন বই কাজে আসবে কিনা। লাগলে আমরা তার জন্য বই লিখাও শুরু করে দিব, ইনশা আল্লাহ।
আপাতত আমাদের ট্রায়ালগুলো চলুক। কোন অভিভাবক চাইলে তাঁর সন্তানকে এই ক্লাসে পাঠাতে পারেন।