শ্রদ্ধাঞ্জলি : যে অঙ্কে ‘বেকুব’ আইনস্টাইন!
সেরকমই কোন একবার আমরা খেয়াল করি, আরে ১৪ মার্চ তো আমাদের আইনস্টাইনের জন্মদিন!!! সঙ্গে সঙ্গে আমরা আনন্দিত হয়ে উঠি। আইনস্টাইনকে নিয়ে আমাদের নানা আয়োজন, নানা ঘটনা থাকে।
তো, আজ সেই ১৪ মার্চ। মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের জন্মদিন, পাই দিবস এবং স্টিফেন উইলিয়াম হকিং-এর প্রয়ান দিবস। কাজে নানাভাবেই এই দিনটিকে স্মরণ করা যায়।
তো, আইনস্টাইনের কথা ভাবলেই আমাদের মনে যে ছবি ভেসে উঠে সেটি একটি দারুণ স্মার্ট লোকের। বিশেষ করে তাঁর গণিত প্রতিভা নিয়ে আমাদের মনে কোন সন্দেহই নাই। অথচ আজ তাঁর জন্মদিনে আমার মনে পড়ছে ১৯৯৪ সালে একটি সহজ সাধারণ প্রশ্নে আইনস্টাইনের বোকা বনে যাওয়ার ঘটনা। তা্ই ভাবলাম এই ছোট্ট সমস্যা দিয়ে আজ এই মহৎ দিনে আমার নতুন সিরিজের জন্ম হোক। ১৯৩৪ সালে আইনস্টাইনের মনোবিদ বন্ধু ম্যাক্স ওয়ের্থেইমার আইনস্টাইনকে একটা চিঠি লেখেন। সেখানে নিচের ধাঁধাটিও তিনি জুড়ে দেন।
একটি পাহাড়ে গাড়ি চালিয়ে ওঠা যায়। চট্টগ্রামের বাটালি হিলের মতো; আপনি গাড়ি চালিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উঠতে পারেন। তবে, এই পাহাড়টি বাটালি হিলের মতোন নয়। কারণ এটিতে সরাসরি উপরে উঠা যায়। মোট দূরত্ব হলো ১ মাইল। নামতেও এক মাইল। একটি পুরান দিনের গাড়ি নিয়ে এই পাহাড়ে চড়তে আর নামতে হবে। গাড়িটি পুরাতন কাজেই উপরে উঠার সময় সেটির সর্বোচ্চ গতিবেগ হয় ঘন্টায় ১৫ মাইল। কিন্তু নামার সময় এটি অনেক গতিতে নামতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, নামার সময় সেটির গতি কতো হলে, চড়াই-উৎরাই মিলে গাড়িটির গড় গতিবেগ হবে ঘন্টায় ৩০ মাইল। প্রশ্নটা সহজ, তাই না?
সালটা ১৯৩৪। তার মানে আইনস্টাইন তখন বিখ্যাত লোক। ই ইকোয়াল টু এমসি স্কোয়ার তখন সারা পৃথিবীর লোকের মুখে মুখে। আমি যখন ১৯৮৬ সালে বুয়েটে পড়তে আসি তখন বাঙলা একাডেমির পাশের একটি বিল্ডিং-এর দেওয়ালে এই সমীকরণটি লিখে রাখতে দেখেছি। পরে জেনেছি ঐটি পরমাণু শক্তি কেন্দ্র (গাধারা তথন এটিকে অফিসিয়ালি আনবিক শক্তি কেন্দ্র বলতো যদিও এটির ইংরেজি নাম এটমিক এনার্জি সেন্টারই ছিল)। কাজে এটি খুবই স্বাভাবিক যে, আইনস্টাইন এটি এক লহমায়করে ফেলবেন। কিন্তু দেখা গেল সেটি হলো না! কেন?
এই ধাঁধার উত্তর, প্রিয় পাঠক, আপনি বের করুন। আমি বরং আপনাকে আর একটা হিন্টস দেই। গণিত বিদ এরিক ভন নিউম্যানকে ঝামেলায় ফেলার জন্য একবার তাঁকে একটা জটিল অঙ্ক করতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের মোত একটি দেশে একবার একই ট্রেন লাইনে দুইটি ট্রেন মুখোমুখি ঘন্টায় ৫০ মাইল গতিতে পরস্পরের দিকে এগোতে শুরু করলো, ১০০ মাইল দূর থেকে। ওদের যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে একটি মৌমাছি প্রথম ট্রেন ছুঁয়ে দ্বিতীয় ট্রেনের দিকে উড়তে শুরু করলো ঘন্টায় ৪০০ মাইল গতিতে। এরপর এটি দ্বিতীয় ট্রেনকে ছুঁয়ে আবার প্রথম ট্রেনের দিকে উড়ে গেল। এভাবে একবার প্রথম ট্রেন আর একবার দ্বিতীয় ট্রেন- এভাবে অসংখ্যবার উড়াউড়ি করলো মৌমাছি। শেষ পর্যন্ত ট্রেন দুইটির যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো তখন তাদের চাপে পিষ্ট হয়ে মৌমাছিটির ভবলীলা সাঙ্গ হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, মরার আগে মৌমাছিটি মোট কতদূরত্ব অতিক্রম করেছে?
ভন নিউম্যানের মতো চিন্তা করতে পারলে আপনি আইনস্টাইনের বেকুবিতে নিজে পড়বেন না।
প্রিয় পাঠক, আপনার চেষ্টা চলতে থাকুক। যারা পারলেন তারা সমাধানটা মিলিয়ে নিতে পারেন।
2 Replies to “শ্রদ্ধাঞ্জলি : যে অঙ্কে ‘বেকুব’ আইনস্টাইন!”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
Very good initiative. Thank you.