ডিজিটাল রূপান্তর – লাইনে আছেন তো?
ভবিষ্যতে ঐতিহাসিকরা যখন বিশ্বের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করবেন তখন সময়কে ভাগ করবেন – কোভিডের আগে ও পরে- এই শিরোনামে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব এতো সুদূর প্রসারী হবে গত বছরের জুন-জুলাই মাসেওবা কে ভেবেছে। এর মধ্যে ব্যক্তি ও প্রতিস্ঠানের যে পরিবর্তনটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার সেটি হলো ডিজিটাল রূপান্তর। কোভিড কালে এই পরিবর্তনটি এতোই মূখ্য হয়ে উঠেছে যে, কিছুদিন পরে কোভিড ট্রান্সফর্মেশন ও ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন সিনোনিম হয়ে যেতে পারে।
নিজের কথা দিয়ে শুরু করি। আমাকে কাজ করতে হয় ডিজিটাল দুনিয়ায়। তারপরও গতবছরের রোজার আগ পর্যন্ত আমার মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট ছিল কেবল রকেট। এটা করেছিলাম নিজের বিভিন্ন ডোমেইন ফী আর ব্রডব্যান্ডের বিল পরিশোধের জন্য। আমি বেতনের টাকা এক চেকে তুলে হোম মিনিস্টারকে দিয়ে দেই। এপার্টমেন্টে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা থাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ বা অন্যান্য বিলের কোন সমস্যা হতো না। পত্রিকার হকার মাস শেষে এসে বিল নিয়ে যায়, ক্যাশে। বাসা কিংবা অফিসের ডেস্কটপ থেকেই আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলাফেরা। এই মুহুর্তে আমার ফেসবুক প্রোফাইলটি ডি-একটিভেট করা। কিন্তু যখন ছিল তখনও আমার ফোনে ফেসবুক বা মেসেঞ্জার এপ ছিল না। এই দুটোই কেবল বিদেশ যাওয়ার সময় ঢাকা এঢারপোর্টে ইনস্টল-আনইনস্টল করতাম। এমনকী আমার মোবাইলেও আমি সার্বক্ষণিক ডেটা রাখতাম না। উদ্দেশ্য মহৎ – ডিজিটাল উৎপাত থেকে বাঁচা।
মোবাইলে ডেটাও এখন সঙ্গী কারণ অফিসও এখন ডিজিটাল! বিকাশ, ফুডপান্ডা থেকে শুরু করে প্রিয় শপ, প্রিমিয়াম ফুডস, উত্তরা চাল ঘরের থেকে কেনাকাটা সবই ডিজিটালি করতে হচ্ছে। শুধু গম কিনে ভাঙ্গানোর কাজটা করা যাচ্ছে না।
অনলাইনে ক্লাসের জন্য বিদুষী এখনই ল্যাপটপ পেয়ে গেছে। তার ভাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ক্লাশ এইট পর্যন্ত, নিজের আলাদা ডিভাইসের জন্য!
তো, আমার মতো বুড়াকে যদি টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় তাহলে বোঝা যাচ্ছে জেন-জি আর মিলেনিয়ালের কী অবস্থা। তারা তো আগে থেকে ডিজিটাখ খায়, ডিজিটাল পরে আর ডিজিটালেই ঘুমায়।
তার মানে এখন আপনি যাই করেন না কেন, সেই চাকরি হোক, পড়ালেখা হোক কিংবা আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হোন – ডিজিটাল আপনাকে হতেই হবে।
মুশ্কিল হচ্ছে, এই ট্রান্সফরমেশন একটা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। কারণ এই জগতে একটা কথাই ধ্রুব – পরিবর্তন (There is only one constant – change)। ব্যক্তি জীবনে দেখেন আপনার বিভিন্ন একাউন্টের পাসওয়ার্ড আপনাকে নিয়মিত বদলাতে হচ্ছে, নিরাপদ থাকার জন্য।
হ্যা, মানুষ যতো বেশি ডিজিটাল হবে তার ডিজিটাল নিরাপত্তার ব্যাপারটাও সামনে চলে আসবে। আমাদের দেশে ডেটা প্রাইভেসির কোন বালাই নেই। কাল রাতে শুনলাম আমাদের ফোন নম্বর, ঠিকানা নাকি একটু চেষ্টা করলে সামান্য টেকাটুকা দিয়ে বা না দিয়েও যোগাড় করা যায়! কী যন্ত্রণা।
কাজে নিজেকে পরিবর্তন করেই শুধু হচ্ছে না থাকতে হচ্ছে সতর্কও।
বুড়া বয়সে কতো দূর পারবো জানি না।
কিন্তু আপনি এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন তো?
2 Replies to “ডিজিটাল রূপান্তর – লাইনে আছেন তো?”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
দারুন লেখা। আসলে ডিজিটাল জগতটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। চালডাল থেকেই বাজার করি, অগ্রিম বিকাশ পেমেন্ট করে। রিক্সাভাড়া দিয়ে বাজার থেকে জিনিস আনতে হয়না। অনলাইলেই কোর্স করি, বিজনেসেও পুরাপুরি অনলাইনে। তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে কিছুদিন ডিভাইস ছাড়া কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে একসপ্তাহ কাটিয়ে আসি। কিন্তু সেই গ্রাম আর নাই।
গ্রাম যে নাই সেটা ঠিক না। গ্রাম তো আসলে মনে। আমি তো রাত ১০টার পর মোবাইল ফোন ধরি না।