ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৮ : এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
আগের পর্ব -ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৭ : বেচবো না কি বেচবো না
জেরি ইয়াং আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন- এটা অনেক বড়ো ব্যাপার আমাদের জন্য। আমরা ভাবলাম জেরি নিশ্চয়ই আমাদের বিজ্ঞাপন যোগাড়ে সাহায্য করবেন। ইয়াহু!র সঙ্গে কর্পোরেট বিজ্ঞাপনদাতাদের যোগাযোগ ভালো। অনেক আশা নিয়ে আমরা জেরির সঙ্গে আলাপ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম।
কিন্তু হা হতোম্ভি!
ছুটি শেষে ইয়াং আবার আসলেন। আমাদের পুরানো এপার্টমেন্ট আমি, আলি আর সঞ্জয় তার সঙ্গে কথা বলতে বসলাম। জেরি খুবই স্মার্ট লোক। কোন ধানাই পানাই-এর মধ্যে নাই। জেরি আমাদেরকে বললেন কতো টাকায় ইয়াহু আমাদের কিনতে চায়।
-কতো টাকা?
…
…
…
–বিশ (২০) মিলিয়ন ডলার!!!
পরের কয়েকদিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আমরা কোম্পানির সবাইকে ডেকে ইয়াহু!র প্রস্তাব জানালাম। তারপর জানালাম আমি, সঞ্জয় আর আলি মিলে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিবো। যদি আমরা ২০ মিলিয়ন ডলার নেই, তাহলে, আমার মনে হল, “আমি আর জীবনে কোনদিন কাজই করবো না। পায়ের ওপর পা তুলে কেবল খাবো আর ঘুরবো।”
এপার্টমেন্টে ফিরে আমি একটা কাজ করলাম। ঠিক করলাম টাকা পেলে আমি কী কী করবো তার একটা তালিকা বানাই।
যে ভাবা সে কাজ। নিচের তালিকাটা বানালাম-
- সানফ্রান্সিসকোতে একটা কনডো কিনবো। তাহলে আর আমাকে কোন ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে না। আমি ‘নিজের’ বাড়িতে থাকতে পারবো,
- একটা বড়-পর্দার টেলিভিশন কিনবো এবং একটা হোম থিয়েটার বানিয়ে নিবো,
- যখন খুশি তখন লম্বা ছুটি নিয়ে লাস ভেগাস, নিউ ইয়র্ক, মায়ামি কিংবা লস এঞ্জেলসে বেড়াতে যাবো,
- একটা নতুন কম্পিউটার কিনবো,
- একটা নতুন কোম্পানি বানানো শুরু করবো কারণ নতুন কিছু করতে আমি খুবই এনজয় করি।
তালিকা বানানোর পর আমি নিজেই খুব অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমার লিস্টটা খুবই ছোট। এবং আমি অনেক কস্ট করেও নতুন কিছু যোগ করতে পারলাম না। তারপর খেয়াল করলাম আরে এর মধ্যে টিভি আর কম্পিউটার কেনার টাকা তো আমার এখনই আছে। ওরাকলের চাকরি থেকেই তো আমি এনাফ সঞ্চয় করেছি। আমি ইচ্ছে করলে এখনও লম্বা ছুটিতে যেতে পারি। কিন্তু এগুলো কখনো করা হয়নি। কারণ মাথাতেই আসেনি।
আমি এখনই একটি কোম্পানিকে সাহায্য করছি যা কিনা আমি খুবই এনজয় করি। এই কাজটা আমি ভালও বাসি। তাহলে এটা একটা সিলি আইডিয়া না যে, এটা বেচে আমি আর একটা কোম্পানি নতুন করে বানাবো। দরকার কী? কাজ করার এক্সাইটেমন্টের জন্য এটা বিক্রি করবো কেন?
কন্ডো ছাড়া আর সবই আমি এখনই করতে পারছি!!! কী আশ্চর্য।
লেনির কথা মনে পড়লো। ‘লিঙ্ক এক্সচেঞ্জ এক জীবনের সম্ভাবনা’। কিন্তু ২৩ বছর বয়সে একটি বাড়ির মালিক হওয়া কী খুবই দরকার? এটা কি আমি পরে হতে পারবো না?
আমি আলি আর সঞ্জয়কে আমার চিন্তার কথা বললাম। দেখলাম ওরা দুজনও আমার মতো চিন্তা করছে। আমরা এখনও তরুণ। আমাদের এখনই রিস্ক নেওয়ার সময়। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
পুরো হল ঘরে পিন-পতন নিস্তব্দতা।
“আমরা ঠিক করেছি তাদের প্রস্তাব আমরা ফিরিয়ে দেব”।
আমি আমাদের সিদ্ধান্ত জানালাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম হলরুমে একটা স্বস্তির পরশ। সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
“আমরা একটি চমৎকার উত্তেজনাকর সময়ে এখন আছি। ইন্টারনেট শিল্প ক্রমাগত বিকশিত হচছে। নেটসক্যাপে, ইবে, অ্যামাজন কিংবা ইয়াহু! মানব ইতিহাসের পাতা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। ইতিহাসে আগে কখনো এতো কম সময়ে এতগুলো কোম্পানি সফল হতে পারেনি। আমরা আমাদের জীবদদশায় এরকম একটি কোম্পানি গঠন করতে পারবো” বললাম আমি।
আমি জানি না কেন আমি আবেগ তাড়িত হয়ে গেলাম। আমি যখন শেষে বলেছি – “দেয়ার উইল নেভার বি এনাদার ১৯৯৭” তখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আনন্দের।
পরের কয়েকমাস আমাদের দিনগুলো দ্রুতই কাটতে লাগলো। সিকোইয়া ক্যাপিটাল, যে ভেঞ্জার ইয়াহু!তে বিনিয়োগ করেছে তারা, আমাদের ২০% স্টেক কিনে নিল ৩ মিলিয়ন ডলারে (তার মানে হলো আমরা ইয়াহু!র দামের চেয়ে কম টাকায় আমাদের নিজেদের দাম ঠিক করেছি) । আমরা সিকইয়া ক্যাপিটালের মিচেল মরিটজকে আমাদের বোর্ডে নিলাম। আমরা বড়ো বড়ো কোম্পানিদের বিজ্ঞাপনও পেতে শুরু কললাম। অনেক নতুন লোক নিয়োগ করা শুরু হলো। এর মধ্যে আমােদর পরিচিত জনদের গন্ডি পার হয়ে গেছে। ফলে আমরা যে নতুনদের নিয়োগ দিচ্ছি তারা প্রথম ২৫জনের মতো আমাদের নিজেদের কাছের লোক নয়। আমাদের ছোট্ট অফিস ঘর বাড়াতে হলো। আমরা নতুন ফ্লোরও নিলাম। আমি যখন ফ্লোরে হাটতাম তখন দেখতাম ওদের অনেককেই আমি চিনি না।
যেভাবে হোক আনন্দ আর মজা আমাদের কর্পোরেট সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেল। প্রতিমাসে আমি সবাইকে একটা মেইল দিতাম যার সারমর্ম হচ্ছে অমুক তারিখে আমাদের একটা সভা হবে যেখানে সব বোর্ড মেম্বার উপস্থিত থাকবেন। সবাইকে ফরমাল পোষাকে সেদিন সভায় আসার জন্য বলে দিতাম।
আমার মনে হচ্ছিল “আই ওয়াজ লিভিং দ্যা ফেইরি টেল”।
পরের পর্ব – ১ নয়, ২০ নয় ২৬৫ মিলিয়ন ও বাজিতে বাজিমাত?
[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]
2 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৮ : এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”