ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-৪: শুরুর শুরু!
আগের পর্ব : ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-৩: ব্যবসার শুরু!
কোন একবার তার বাড়িতে গেছি। গুস্তাভ আমাকে একটা বই দেখাল-ফ্রি স্টাফ ফর কিডস। এই বইতে অসংখ্য অফার আছে যেগুলো বিনামূল্যের অথবা সর্বোচ্চ এক ডলারখরচ করলে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ছিল ম্যাপ, ৫০-সেন্টের কলম, ফ্রি বাম্পার স্টিকার, অন্যান্য। সেগুলো পাওয়ার উপায়ও সোজা। নিজের নাম ঠিকানা লেখা একঠা কামে টিকেট লাগাতে হবে। আর ওদের ঠিকানায় একটা চিঠি লিখতে হবে ঐ পন্যটি পাঠানোর জন্য। ফ্রি হলে ওতেই সই। আর টাকা লাগলে খামে দিয়ে দেওয়া। আমি আর গুস্তাভ মিলে যতগুলো জিনিষ পছন্দ হয়েছে তার সবই পাওয়ার জন্য চিঠি লিখে ফেললাম।
গ্রিটিংস কার্ডে ধরা খাওয়ার পর আমি আবার বয়ে’জ লাইফ নিয়ে বসলাম। ওখানে ৫০ ডলারে একটি ব্যাজ (একটু বড় কোট-পিন) বানানোর কিটের কথা আছে। ঐ কিট দিয়ে যেকোন ছবিকে ব্যাজের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যায়। একটা ব্যাজ বানাতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ২৫ সেন্ট।
আমি আমার রুমে খুঁজে বের কললাম গুস্তাভের বাসা থেকে নিয়ে আসা বই। ভালমত ঘেটেঘুটে দেখলাম কেও ছবিওয়ালা ব্যাজ বানানোর কনো বিজ্ঞাপন দিছে কী না। পেলাম না।
কাজে আমি গুস্তাভের বই-এর প্রকাশককে একটা চিঠি লিখলাম। জানালাম আমি দীর্ধদিন ধরে ব্যাজের ব্যবসা করি। এটা বোঝানোর জন্য আমি আমার ছিটিল নিচে “Dept. FSFK” লিখে দিলাম। ভাবটা আমার কোম্পানির কয়েকটা ডিপার্টমেন্ট আছে! (আসলে FSFK মানে হল ফ্রি স্টাফ ফর কিডস)। আমার অফারটা সহজ। বাচ্চারা নিজেদের ঠিকানালিখে যথাযথ টিকেট লাগিয়ে একটা খাম, একটা ছবি আর এ ডলার পাঠাবে। আমি ছবিটা কোট-পিনে লাগিয়ে দিয়ে ঐ খামে ভরে পাঠিয়ে দেব। প্রতি বোতামে আমার লাভ মাত্র ৭৫ সেন্ট!
কয়েকমাস পরে আমি ঐ চিঠির জবাব পেলাম। প্রকাশক লিখেছে পরের সংখ্যায় আমার বিজ্ঞাপনটি ছাপা হবে।
ব্যাস আমি বাবা-মার কাছে গিয়ে ১০০ ডলার চাইলাম। বললাম ৫০ ডলারে ঐ কিটটা আর ৫০ ডলারের মালমাত্তা কিনবো। তবে, এটা লোন। আমি ১০০টা অর্ডারের টাকা পেলে ঐ টাকা শোধ করে দিব।
বাবা-মা কিন্তু আমার নিউজ লেটার আর গ্রিটিংসকার্ডের গল্প জানে। ঐ খাতে আমার লাভের অংকও জানে। তারপরও তারা টাকাটা আমাকে দিয়েছেন কারণ এতকিছুর পরও স্কুলে আমার গ্রেড খুবই ভাল!
কয়েক মাস পরে আমার বাড়ির ঠিকানা ছাপা হওয়া ফ্রি স্টাফ ফর কিডস এসে হাজির আমার বাসায়। নিজের বাসার ঠিকানা একটা সত্যিকারের বই-এ ছাপা হয়েছে। আমি বইটা নিয়ে বাবা-মাকে দেখালাম। তারপর অপেক্ষা করতে থাকলাম প্রথম অর্ডারের জন্য।
পরেরদিন আমি দুই দুইটি অর্ডার পেলাম। আমার ব্যবসা রাতারাতি দ্বিগুন হয়ে গেল। এবং এক মাসের মধ্যে আমি ২০০ এর বেশি অর্ডার পেয়ে গেলাম। আমি আমার সব ঋণ শোধ করে ফেললাম এবং মিডল স্কুলের একজন ছাত্র হিসাবে যথেষ্ট টাকা পয়সা কামাতে শুরু করলাম।
কিন্তু একটা ঝামেলা শুরু হল। অর্ডার যত বেশি আসতে লাগল আমার সময় তত বেশি লাগছে। প্রতিদিন প্রায় ঘন্টাখানেক সময় দিতে হচ্ছে। যেদিন হোমওয়ার্ক আর পড়া বেশি সেদিন আর কাজ করা হতো না। আমি সেগুলো জমিয়ে রাখতাম সম্পাহান্তের জন্য। শনি-রবিবার আমার প্রায় ৪-৫ঘন্টা কোট-পিন বানানোতে চলে যেত। টাকাটা খুবই লোভনীয় কিন্ত শনি-রবিবার পুরো সময় বাসায় থাকাটা মোটেই সুখকর কিছু নয়। আমি তাই ৩০০ ডলার দিয়ে একটা সেমি-অটোমেটিক ব্যাজ বানানোর যন্ত্র কিনে নিয়ে আসলাম।
আমার মিডল স্কুলের পুর সময়টাতে এই ব্যবসায় আমার প্রতিমাসে ২০০ ডলার আয় হত। সবচেয়ে বড় কথা আমার স্থির বিশ্বাস হল মেইল-অর্ডারে, মানে দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াই ব্যবসা করা যায়!
মাঝে মধ্যে আমার পিন বানাতে ভাল না লাগলে আমি কাজটা আমার ছোটভাইদের দিয়ে দিতাম। ওরা মনের আনন্দে কাজটা করতো। শেষে আমি যেদিন মিডল স্কুল শেষ করলাম সেদিন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আমার ব্যবসা এন্ডিকে দিয়ে দিলাম। ভাবলাম আমি নতুন একটা ব্যবসা শুরু করব।
আমি তখনো জানতাম না এই ব্যবসাটা আমাদের একটা পারিবারিক ব্যবসা হবে। কয়েক বছর পরে এন্ডি ব্যবসাটা ডেভিডের হাতে দিয়ে দেয়। কিন্তু এর কিছুদিন পর বাবা একটা প্রমোশন পেয়ে হংকং-এ চলে যান। যাবার সময় বাবা-মা ডেভিডকেও সঙ্গে নিয়ে যায়। ফলে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা চালানোর আরে কও রইল না।
আমাদের আসলে সাকসেশন প্ল্যানটা আরো প্রপার করার দরকার ছিল।
2 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-৪: শুরুর শুরু!”