ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-২: বেড়ে ওঠা
আগের পর্ব -কেঁচোর খামার
এশিয়ান বাবা-মার মতই আমার বাবা মা। বাবা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আর মা সমাজকর্মী। আমাদের তিনভাই-এর কাছে তাদের একাডেমিক প্রত্যাশা ছিল আকাশ চৃম্বী। আমার ছোটটা আমার থেকে দুই বছরের ছোট আর ক্যালিফোর্নিয়ায় আসার ৪ বছর পরে সবচেয়ে ছোটটার জন্ম।
মেরিন কাউন্টিতে বেশি এশিয়ান ছিল না। কিন্তু বাবা-মা কেমনে জানি ১০টার সবকটাকে যোগাড় করতে পেরেছে। ফলে, রেগুলার এই ১০ পরিবারের আড্ডা বেড়ানো হত। আড্ডার একটা বড় দিক ছিল সন্তানের সাফল্য নিয়ে বড়াই করা! এই সময় অবশ্য আমরা টিভি দেখতে পারতাম।
এশিয়ান বাবা-মা’র কাছে তিন ক্যাটাগরির সাফল্য ছিল প্রধান। প্রথমত ভাল গ্রেড, যে কোন ধরণের পুরস্কার কিংবা কাউন্টি ম্যাথ টিমে চান্স পাওয়া। তবে, সবচেয়ে বেশি ছিল বাচ্চারা কোন স্কুলে ভর্তি হচ্ছে সেটা। হার্বার্ড ছিল একেবারে ১ নম্বরে!
২ নং ক্যাটাগরি হচ্ছে ক্যারিয়ার। মেডিকেল ডাক্তার বা পিএইচডি হচ্ছে এই লাইনের সর্বোচ্চ। কারণ তাহলে “মি. সেই” এর জায়গায় আমি হয়ে যাব “ড. সেই”।
আর তিন নম্বর হল যন্ত্রসংগীত। সব এশিয়ান শিশুকে হয় পিয়ানো না হয় বেহালা কিংবা দুটোই শেখার জন্য বাধ্য করা হত। রাতের খাবারের শেষ শিশুদের তাদের পারফরম্যান্স করতে হত। যদিও এটি পিতামাতাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য, আসলে কিন্তু এর মাধ্যমে হত তুলনা!
আমার বাবা-মাও আমাদের বড় করা ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিলেন। আমি সপ্তাহে মাত্র এক ঘন্টা টিভি দেখার সুযোগ পেতাম। স্কুলের সব বিষয়ে এ গ্রেড ছিল প্রতইাশিত। আরি মিডল আর হাই স্কুলের পুরোটা জুড়ে ছিল এসএটির প্রস্তুতি।সাধারণ সবাই হাই স্কুলের শেষে স্যাটের প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু আমার বেলায় এটি ছিল গ্রেড সিক্স!
মিডল স্কুলে থাকতেই আমি চার চারটি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখি। পিয়ানো, বেহালা, ট্রাম্পপেট আর ফ্রেঞ্চ হর্ন। স্কুলের দিনগুলোতে প্রতিদিন প্রতি বাদ্য আধাঘন্টা করে বাজাতে হত, শনি-রবি এক ঘন্টা করে। সামার ভ্যাকেশনেও একঘন্টা প্রতিদিন প্রতি বাদ্যে! অথচ আমার ইচ্ছে ছিল সামার ভ্যাকেশনের ভ্যাকেশন পার্টটার খোঁজ নেওয়া!
কাজে আমার ভ্যাকেশনকে আনন্দময় করার একটা রাস্তা আমি নিজেই খুঁজে বের করলাম। প্রতিদিন ভোর ৬টার সময়, যখন আব্বা-আম্মা ঘুমায় থাকতো তখন আমি নিচতলায় গিয়ে পিয়ানো বাজাতাম। আসলে বাজানোর বদলে আমি চালিয়ে দিতাম টেপ রেকর্ডার যেখানে আমি আমার একটা এক ঘন্টার সেশন আগেই রেকর্ড করে রেখেছি। ৭ টার সময় রুমে ফিরে চালিয়ে দিতাম আমার বেহালার রেকর্ড, দরজা বন্ধ করে দিয়ে! টেপ চলার সময় আমি কোন বই বা বয়েজ লাইফ ম্যাগাজিন পড়তাম। পিয়ানো আর বেহালার শিক্ষকরা আমার অগ্রগতিতে খুবই অবাক হতেন। শেষে তারা ধরে নেন যে আমি একজন খুবই “স্লো লার্নার”।
(মা যখন এই লেখাটা পড়বেন তখন নিশ্চয়ই খুবই রেগে যাবেন। আমি বরং মাকে এই খাতে খরচ হওয়াটা টাকাটা সুদে আসলে ফেরৎ দিয়ে দেব)
আমার বাবা-মা, বিশেষ করে আমার মা’র উচ্চঅমঅ ছিল হয় আমি ডাক্তার অথবা ডক্টর হব! কিন্তু আমি দেখছিলাম ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত আমার বন্দী জীবন!
আমার কিন্তু বেশি ইচ্ছে ছিল টাকা কামানোর জন্য নিজের কোন ব্যবসা করা। এটা নিয়েই আমার সারাক্ষণের চিন্তা ভাবনা। অথচ বাবা মা কিন্তু আমাকে টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে না করে দিয়েছে। কারণ আমার পড়ালেখার টাকা তারা যোগাড় করেছে। এমডি বা পিএইচডি পর্যন্ত পুরো টাকাই ওনারা দেবেন বলে আমাকে আশ্বত্ব করেন। তারা আমাকে সুন্দর সুন্দর, আমার ইচ্ছে মত জামা কাপড় কিনে দিতেও রাজী ছিলেন। যদিও আমি মোটেই ফ্যাশন সচেতন ছিলাম না।
টাকা কামানোর চিন্তার পেছনে আমার দুইটি উদ্দেশ্য ছিল। একটা হল টাকা হলে আমি আমার ইচ্ছেমত খরচ করতে পারবো। তবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল এর জন্য আমাকে সৃজনশীল ও উদ্ভাবক হতে হবে যা কিনা আমাকে আমার বস হতে সাহায্য করবে।
আর্লি স্কুলে থাকতে আমি অনেক গ্যারাজ সেল করেছি। যখন আমাদের গ্যারাজের জিনিষ শেষ হয়ে যায তখন আমি আমার এক বন্ধুকে তাদের গ্যারাজের জিনিষ বেচতে রাজি করায়। আমার বন্ধুটিকে এমনভাবে কাপড় পড়ানো হয় তাতে তাকে ৫ বছরের ছোট দেখায়। সেলের সঙ্গে আমরা লেমোনেড বিক্রিরও একটা ব্যবস্থা রেখেছি। দিন শেষে দেখা গল আমাদের লেমোনেড বিক্রির টাকায় বেশি!
মিডল স্কুলে আমি পেপার বিক্রি শুরু করলাম। কিন্তু অঙ্ক করে দেখলাম এতে আমার ঘন্টার উপার্জন হয় মাত্র দুই ডলার। আমি ঠিক করলাম আমি পেপার বিক্রি করবো না, বরং নিজেই একটা নিউজ লেটার বের করব!
2 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-২: বেড়ে ওঠা”