ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ- পর্ব-১৫ : চাকরিটা আমি ছেড়ে দিচ্ছি, বেলা শুনছো?
পর্ব-১৪ : ইয়্যু উইন সাম, ইয়্যু লস সাম-২ – নিজের কোম্পানি
অফিসে এসে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলাম। আধা ঘণ্টা ধরে হাঁটাহাঁটি করলাম, চেষ্টা করলাম, নিজেকে তৈরি করলাম এবং তারপর শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে তার অফিসের দিকে রওনা দিলাম। বসের অফিসটা হলের একেবারে শেষ মাথায়। আর আমার কিউবিকল অন্য মাথায়। আমি তাকে কথাটা বলতে চাই।
হাটতে হাটতে তার অফিসের সামনে গেলাম। একটা জানালা মত আছে। জানালা দিয়ে সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে। মনে হল আমার দিকে তাকালো,আমাদের চোখাচোখি হল। আমি স্পষ্টতই টের পাচ্ছি যে আমার হার্টবিট ক্রমাগত বাড়ছে এবং সেটি দ্রুতলয়ে হয়ে যাচ্ছে। একটু পরই উনি অন্যদিকে তাকালেন। আমি সাহস করে আর একটু এগোলাম এবং দেখলাম উনি আসলে আরেকজন এর সঙ্গে সেখানে মিটিং করছেন। উনি একা নন। কাজেই এই মুহূর্তে তাকে বলাটা ঠিক হবে না।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কথাটা বলতে হবে না। হাঁটতে হাঁটতে তার অফিস ছাড়িয়ে গেলাম। ভাবটা এমন যে, আমি আসলে তাঁর অফিস ছাড়িয়ে যে টয়লেট সেখানে যাচ্ছি! টয়লেটে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। তারপর হাত ধুয়ে নিজের কিউবিকলে ফিরে আসলাম। টের পেলাম আমি প্রায় ঘেমে উঠেছি। কথাটা বলতে না হওয়ায় আমার হার্টবিট আবার স্বাভাবিক হল।
এবার নিজের কাজে লেগে গেলাম। পরবর্তী আধা ঘণ্টা ধরে বন্ধুদেরকে ই-মেইল করলাম। ৩০ মিনিটের বেশি হয়ে যাওয়ার পরে আমি উপলব্দি করলাম – না, আমাকে বলতেই হবে।
কাজটা আবার করা যেতে পারে। বসের মিটিং কি শেষ? আরও ১৫ মিনিট বসে থাকলাম এবং তারপর আবার বসের অফিসের দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
ঠিক তাই। ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম কেও নাই। যাক আবার আমি বেঁচে গেলাম।
যাক। পরে বলা যাবে। আগে লাঞ্চ। আমি লাঞ্চের পরে এসে রেজিগনেশন লেটার দিবো এবং তখন তৃতীয়বার চেষ্টা করবো। আমি দরজার সামনে থেকে আমার ডেস্কের দিকে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালাম। ঘুরে দাঁড়াতেই আবিস্কার করলাম আমার বস আমার পিছনে দাঁড়ানো!!!
-টনি, তুমি কি আমাকে খুঁজছ?
-আমি মোটেই এরকম কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, আমি চিন্তা করছিলাম লাঞ্চে গিয়ে কি খাব। তখন আমি খুবই হতাশ হলাম, সারপ্রাইজড হইলাম এবং তাড়াতাড়ি তাকে বললাম- না না, আপনাকে খুঁজছি না। দুঃখিত! এবং আমি তার সামনে থেকে যত দ্রুত সম্ভব চলে আসলাম। তারপর আমি লাঞ্চ করার জন্য চলে গেলাম পাশের দোকানে এবং সেখানে দুইটা ডাবলডেকার ভ্যালুমিলের অর্ডার দিলাম। অবাক। সব আমি খেয়ে ফেললাম!
উদরপূর্তির পর আমি বেশ শান্ত হলাম এবং বুঝলাম এইবার আমি বলতে পারবো। আমি অফিসে ফিরে আসলাম অপরাহ্ণে এবং তখন খুব মোটামুটি একটা ভালো অবস্থায় আছি যে আমি এখন রিজাইন করতে পারবো।
আমি আমার কিউবিকলের কাছে যে বাথরুম আছে সেখানে একবার গেলাম। আমার এলিবাইটা ঠিক রাখা দরকার। ঈশ্বর আমার পক্ষে। দেখলাম ক্লিন করার জন্য সেটি বন্ধ! 😛
এবার সরাসরি তার রুমে চলে গেলাম। এবার আমি শান্ত। উত্তেজনা নেই বললেই চলে। আমার কথা যেন কেও শুনতে না পায় সেজন্য দরজাটা ভিজিয়ে দিলাম। এবং বুঝলাম আমি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে এসেছি।
‘আমি পদত্যাগ করবো ঠিক করেছি’ আমি খুব নার্ভাসভাবে বললাম।
আমি মাত্র পাঁচমাস ধরে ওরাকলে চাকরি করি। আসলে আমি তেমন কিছু করি নাই এখানে এবং আমি ঠিক জানিও না আমার বস এটা কিভাবে নিবে। আমার মনে হল উনি খুব ক্ষেপে যেতে পারে, আপসেট হতে পারে। উনি ওরাকল এ অনেকদিন ধরে আছেন। আর আমি মাত্র কয়েকদিন এর মধ্যে ভাগছি!
৩ সেকেন্ডের মত ওনার লাগলো আমার দিকে উনি তাকিয়ে থাকলেন। এবং তারপরেই উনি বললেন- ‘ওয়াও! তুমি নিশ্চয়ই কোন স্টার্টআপ এ জয়েন করতে যাচ্ছ। What an exciting opportunity’
উনি খুব সোৎসাহে এবং আনন্দের সঙ্গে আমার পদত্যাগ গ্রহণ করলেন। (এমনটা জানলে সকালটা এত বাজে হতো না)। ওনার ধারণা হল আমি একটা নতুন কোম্পানিতে যাচ্ছি এবং কিছু দিনের মধ্যে মিলিয়ন ডলার কামিয়ে ফেলবো।
আমি ঠিক জানি না আমার হৃদয় আমাকে সেসময় কী বলছিল কিন্তু আমি এটা জানি যে আমি ওরাকল এ বোরড হয়ে গেছি এবং আমি আমার নিজের বিজনেস নিজে করতে চাই। এটা আসলে টাকার ব্যাপার না, এটা হল নিজে যাতে বোর না হই সেজন্য।
কাজেই আমি এবং সঞ্জয় আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলাম এবং আমরা নতুন এডভেঞ্চার এর জন্য রেডি হলাম।
পরের পর্ব – ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ- পর্ব-১৬ গেট সেট গো
[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]
2 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ- পর্ব-১৫ : চাকরিটা আমি ছেড়ে দিচ্ছি, বেলা শুনছো?”