উদ্যোক্তাগিরির ব্যাচেলর ডিগ্রী

Spread the love

আমাদের দেশে অনেকের ধারণা উদ্যোক্তা তৈরি করা যায় না, এ নিয়ে পড়ালেখারও কোন কারণ নেই। এই বিশ্বাসের ভিত্তি হরো আমাদের উদ্যোগের ইতিহাস। দেখা গেছে নতুন উদ্যোক্তাদের একটা অংশ আসে পারিবারিক আবহ থেকে। কিন্তু এটাই সম্পূর্ণ চিত্র নয়। ২০১১ সালে “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ শুরু করার পেছনে আমাদের ভিন্ন বিশ্বাসটি সামনে ছিল। এখন তো আমি দেখি প্রচুর উদ্যোক্তা নিজেদের উন্নয়নের জন্য কোল পড়ালেখাই করছেন না, বরং এ নিয়ে নানা উদ্যোগও সম্প্রসারিত হয়েছে। আমি অবাক হয়ে জেনেছি আমার শরবতে বাজিমাত বই পড়ে বেশ কয়েকজন শরবত নিযেই ব্যবসা শুরু করেছে!

তবে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোগ সংক্রান্ত সেন্টারের মতো কিছু আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন নিয়ে দেশে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রদানকারী ডিপার্টমেন্ট হলো ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ।  এটি চালু হয় ২০১৫ সালে।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের মহামারি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি সেখানে সংযুক্ত ফ্যাকাল্টি হিসেবে যুক্ত ছিলাম। প্রতি সেমিস্টারে একটা সাবজেক্ট পড়াতাম। নানান বিষয় পড়িয়েছি। আনন্দ পেয়েছি। ওখানে যারা পড়ে তাদের সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি “ছোট্ট” পার্থক্য চোখে পড়ে। সেটি হলো এখানকার শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য চিন্তা করে। সবাই যে সফল হয় তা না। কেউ কেউ হয়।

এই বিভাগে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসা নিয়ে কাজ করে। এই বিভাগের প্রতি ছাত্রছাত্রী ক্লাসরুমের পড়া মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্দ করে রাখে না, যাই শেখ সেটা তাদের ব্যবসায়ে ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করে। তাতে আমার মনে হয় এক সময় এই বিভাগের মাধ্যমে দেশে অনেক অনেক উদ্যোক্তা ও বিজনেস লিডার বের হয়ে আসবে যারা অন্যদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ ক্ষেত্রে বিভাগটি এন্ট্রেপ্রেনিউরিয়াল ইকো-সিস্টেমের মাধ্যমে এই নবীন উদ্যোক্তাদের ব্যাবসায়িক ধারণা উদ্ভাবন, ফান্ডিং এবং বাণিজ্যিকীকরণ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে সর্বাত্বকভাবে পাশে থাকছে।

এখানে পড়ানোর সময় আমি মোটামুটি আমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে পড়াতাম। যেমন প্রায় প্রত্যেক বিষয় যা আমি পড়াই সেখানে সফল উদ্যোক্তাদের হাজির করতাম। তারা যে শুধু নিজেদের গল্প করতেন তা না, তারা সিলেবাসের একটা অংশ নিয়েও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন।

আমার কোর্স ম্যাটেরিয়ালে থাকতো কেস স্টাডি (মেইনলি), TED বক্তৃতা, বই পড়া ইত্যাদি। এগুলো যে শুধু আমি করতাম তা না। এটাই এই ডিপার্টমেন্টের সাধারণ রেওয়াজ। আমার স্টুডেন্টদের যেতে হতো কোন না কোন প্রতিস্ঠানে নিজেদের কেস স্টাডি করার জন্য। শুধু প্রতিষ্ঠানে যাওয়া নয, বরং এসএমই মেলা বা উদ্যোক্তা হাট নিয়েও তাদের এসাইনমেন্ট থাকে।

আমি দেখেছি এই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা করছে দারুন সব বিসনেস যেমন মাসুদ কাজ করছে ডেইরি ফার্ম (Kaptaan Dairy), প্লাবন করছে হোম সিকিউরিটি নিয়ে (Rokkhi),সঞ্জয় করছে আগ্রো ফার্মিং, রচনা করছে জামদানি নিয়ে, স্মরণ করছে গৃহকর্মী (Hellotask) নিয়ে, রাসেল ও তৃষা করছে টেলারিং (Tylo) নিয়ে, হিমেল ও জেরিন করছে ফুড নিয়ে (Twisted Cafe), বাঁধন ও সাদ করছে ডিজিটাল মাকের্টিং (Dramx) নিয়ে, জুনায়েদ করছে হোস্টিং এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে (Limda Host  & Publicia Digital), পিয়াল করছে প্রসিদ্ধ পণ্য নিয়ে (Icche), শাহরিয়ার করছে অডিও বুক নিয়ে (Shunboi), সাকিব করছে ফুড ও হোম রেন্ট ও শিফটিং নিয়ে, জোহাদুর করছে ট্রেডিং ইত্যাদি। মজার বিষয় হলো এই বিভাগের ৮০% শিক্ষার্থীই পড়াশুনার সঙ্গেই এসব করে যাচ্ছে।

নতুন যারা এবার ভর্তির চিন্তা করছো তারা এই বিভাগের কথা ভাবতে পারো। এখানে কিছু বাড়তি সুবিধাও তুমি পেতে পারো।

স্কলারশিপঃ তুমি যদি একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়িক নেতা হতে চাও এবং যদি তোমার থাকে ব্যবসা বা ব্যবসায়িক আইডিয়া তাহলে এই বিভাগের “Are You The Next Startup” স্কলারশিপে আবেদন করে পেতে পারো ১০০% পর্যন্ত স্কলারশিপ ।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সব স্কলারশিপ তো থাকছেই।

ইনোভেশন ল্যাব: এই বিভাগের রয়েছে একটি ‘ইনোভেশন ল্যাব’। সম্ভবত দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম।এই ইনোভেশন ল্যাবে মার্কেট স্পেস, রোবটিক জোন, থ্রি-ডি প্রিন্টার, আইওটি নির্ভর বৈদ্যুতিক বাল্ব, ফ্যান, শীতাতপযন্ত্র, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন জোন, বুক রিডিং জোন, বিজনেস ইনকিউবেটর, মিটিং রুম, অ্যানড্রয়েড ও উইনডোজ সুবিধা সম্বলিত অল ইন ওয়ান টিভি ইত্যাদি রয়েছে। এসব সুবিধা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়াকে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারে।

ফান্ডিং সুবিধা: ইনোভেশন ও এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীদের ব্যবসা শুরু করা জন্য এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) দিচ্ছে । ডিপার্টমেন্ট ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) সরবরাহ করে আসছে। এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষ টাকা এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবসা শুরু ও ত্বরান্বিত করার জন্য দেওয়া হয়েছে l

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিং: বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড যেখান থেকেই এই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা পেতে পারে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ফান্ডিং সুবিধা lএছাড়া অন্যান্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ফান্ডিং পাওয়ার বিশেষ সুযোগ l

কো-ওয়ার্কিং স্পেস: ড্যাফোডিল বিসনেস ইনকিউবেটরএ থাকছে কো-ওয়ার্কিং স্পেস এর সুবিধা l

এছাড়া দেশ সেরা বিজনেস লিডারদের কাছ থেকে সরাসরি ওয়ান টু ওয়ান মেন্টরশিপ, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজনেস কম্পিটিশন এর সুবর্ণ সুযোগ, ইনোভেশন ল্যাবে কাজ করে স্টার্টআপ ফিল্ডে নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রোভাইড করার সুবিশাল সুযোগ, প্রতি সেমিস্টারে এক থেকে একাধিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিল্ড ভিজিট।

এইতো গেলো ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা। এর বাইরে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সকল সুবিধা গুলোও পেয়ে থাকে।

এ বিভাগের ওপেনডে’র আয়োজনে, ২০ মে ২০২১, উপস্থিত ছিলাম। সে আলোচনাটি দেখা যাবে এখানে।

 

 

আর করোনাকাল শেষ হলে হয়তো কোন ক্লাসে তোমার সঙ্গে আমার দেখাও হতে পারে।

শুভ উদ্যোক্তাগিরি!!!

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version