কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (বই) দিবস!!!

Spread the love

২০০৪ সালের কথা। আমরা মাত্র গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করেছি। ৬টি বিভাগীয় শহরে আমরা যাবো। প্রত্যেক জায়গায় আমরা একটা সেশন রেখেছি গণিত শিক্ষকদের সঙ্গে মত-বিনিময়। তো, সবখানে কথা একটা। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গণিতের ওপর কোন বই নাই!!!

নাই, নাই, নাই!

২০০৫ সালেও একই কথা শুনলাম। কাজে এর পর থেকে আমরা প্রায় ৮ বছর আর ঐ মতবিনিময় আমরা করি নাই। কারণ সে সময়টা আমাদের কেটেছে দুইটা কাজে। একটা হলো গণিত নিয়ে বাংলা বই লেখা। আর একটা হলো প্রথম আলো’তে “গণিত ইশকুল” নামে একটি নিয়মিত সাপ্লিমেন্ট প্রকাশ করা। গণিত ইশকুলের দাবীটা পূরণ করার ক্ষেত্রে আমাদের (প্রয়াত) খোদাদাদ খান স্যারের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি কোন এক উৎসবে মতি ভাইকে (মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো) সরাসরি বললেন এটি প্রকাশ করার জন্য। মতি ভাইর আমার উপর আস্থা কম। তাই স্যারকে বললেন, “আপনি দেখে দেবেন তো?” তো, সেই থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত গণিত ইশকুল প্রকাশিত হয়েছে। (এখন এটি প্রকাশিত হচ্ছে না। আগামী মাস থেকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে প্রতিমাসে আবার বের হবে)।

তো, গণিত ইশকুলের অবদান কী অথবা আরও যদি জেনারালাইজ করে বলি তার মূল পাতা বিজ্ঞান প্রজন্মের অন্যতম অবদান কী?
– একগাঁদা বিজ্ঞান ও গণিতের লেখক তৈরি করা।

ততোদিনে সোহাগ, সুবিন, সুব্রত, অভীক এরকম ম্যালা লোক গণিত-বাসের কান্ডারী, হেল্পার ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। তো, এই গণিত ইশকুলেই আমাদের তামিম শাহরিয়ার সুবিনের লেখার হাতটা খোলতাই হতে শুরু করলো।

 

এবং আমরা তখনই বুঝতে পারি সুবিনের লেখার হাত অসাধারণ।

জুনিয়রের সঙ্গে আমাদের সুবিন দ্যা গ্রেট!!!

তারপর একটু ফার্স্ট ফরোয়ার্ড দিয়ে কয়েকবছর আগের কথায় আসি। গণিত অলিম্পিয়াডের ট্রেনটা চালু হয়েছে। কাজে সুবিন, শান্ত, মাহমুদ এরা প্রোগ্রামিং নিয়ে আমার সঙ্গে আলাপ করে। একটা এজেন্ডা হলো আইওআই কেন বড় করা যাচ্ছে না। আর একটা হলো প্রোগ্রামিং-কে কীভাবে গণিত অলিম্পিয়াডের মতো করা যায়। তো, প্রোগ্রামিং কনটেস্টে আমার তো করার কিছু নাই কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিতে কুলালো যে, বই দরকার বাংলায়।

সে সময় সুবিন একদিন জানালো সে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নামে একটা বই লেখা শুরু করেছে। সম্ভবত সে তখন প্লে-টে এরকম নামে একটা কোম্পানিতে কাজ করে। আমি বললাম এটা একটু ডিফারেন্টলি লেখা যায কী না।

তো সেটাই হলো। প্রতি পর্ব লেখা হয়, সেটা ১০ জন পড়ে, সাজেশন দেয়। প্রথম সংস্করণ দেওয়া হলো রূবাই আর একজনকে (রুবাই তখন সিক্সে)। তারা পড়ে পড়ে বলছে কোথায় খটকা লাগছে। রুবাই যেমন জানালো বই পড়ে কোডব্লক ঠিকমতো চারু করা যাচ্ছে না। ঐ জায়গাটা ঠিক করতে হবে (এরকম কিছু একটা আমরা ঠিক মনে নাই)। অন্যদেরও নানান সাজেশন।
তারপর পুরো বইটা আমি একবার পড়লাম। তারপর এটা গেল জাফর স্যারের কাছে। স্যার অনেক জায়গা ঠিক করলেন, সাজেশন দিলেন। তারপর সুবিনের হাত হয়ে সেটা আবার আমার কাছে আসলো স্টাইল দেখার জন্য।

তারপর এই বই ছাপা হবে। সেটাও এক ইতিহাস। ছাপবে তাম্রলিপি প্রকাশনীর রনি। তো, সুবিনের কম্পোজ করা ফাইল নিয়ে নীলক্ষেত থেকে সেটার ট্রেসিং বের করা এবং সবশেষে বই বের করা। (আমি আমার স্মৃতি থেকে লিখলাম, কিছু একটা এদিক ওদিক হলে আশাকরি সুবিন ঠিক করে দিতে পারবে।)

এবং প্রথম বছরে এই বই খুব একটা বিক্র যে হলো তা না। প্রচার প্রচারণায় প্রচুর সময় গেল। কিন্তু আস্তে আস্তে বইটার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো দেশ জুড়ে। হু হু করে বিক্রিও বাড়লো। (সুবিন বলতে পারবে মোট কতো কপি বিক্রি হয়েছে এ  ক’বছরে)। আমার ধারণা এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিক্রিত কোন “পড়ালেখার বই” যা খালি পড়া যায় না, করতে হয়।

এই বহুল বিক্রিত বইটি কিন্তু ইন্টারনেটে বিনামূল্যেও পাওয়া যায়।

এর ইম্প্যাক্টটা আমরা দেখলাম যখন ২০১৫ সালে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা শুরু করি। যেখানে যাই সেখানেই আমরা জানতে চাইতাম কেমন করে শিখছো?

  • সুবিন স্যারের বই (সুবিন ততোদিনে সুবিন স্যার হয়ে উঠেছে)।

 

আমার গল্প শেষ। একসময় ডিজিটাল বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হবে। তখন কেউ হয়তো সুবিনের এই বই-এর কথা লিখবে না। কিন্তু আমরাতো জানবো, একটা প্রোগ্রামিং প্রজন্মের সূচনা করতে তার বই তো ভূমিকা রেখেছে!

আজ কেন এই গল্প?
হুম। আজ সুবিনের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বই-এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। এই একটু আগে। তার এই বই-এর মোড়ক উন্মোচন করবে বই-এর পাঠকেরা। যে কেউ নিউমার্কেটে হক লাইব্রেরি থেকে বইটা কিনে, মোড়ক পুড়ে তারপর লেখকের সঙ্গে পোজ দিয়ে সেলফি তুলতে পারবে। বিস্তারিত এখানে। ঈদের পরে রকমারী থেকে কিনতে পাওয়া যাবে।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (দ্বিতীয় খন্ড) বহুল ভাবে পঠিত ও “করিতো” হোক। এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে এই বই ছড়িয়ে পড়ু্ক।

 

 

 

আর আজকের দিনটা আমরা করি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (বই) দিবস হিসাবে।

কীভাবে পালন করবেন
০ নিজের জন্য এই বই (প্রথম বা দ্বিতীয় খন্ড) কিনতে পারেন,

০ নিজের ছেলে-মেয়ে বা খুদে আত্মীয় স্বজনকে এই বই উপহার দিতে পারেন,

০ নিজের এলাকায় একটা প্রোগ্রামিং ক্লাবগঠনের ব্যাপারে সংকল্প করতে পারেন (বাকীটা আমরা হেল্প করবো),

০ সুবিনের সঙ্গে একটা সেলফি তুলতে পারেন।

শুভ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (বই) দিবস।

হ্যাপি কোডিং।
জয় বাংলা

 

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version