চট জলদি খাওয়া ও বেড়ানোর কক্সবাজার

Spread the love

রাজনৈতিক সহিংসতায় এবারের বেড়ানোর মৌসুমে অনেকেরই বেড়ানো হয়নি। অথচ স্কুল-কলেজ ঠিকই খুলে গেছে, এমনকি কোথাও কোথাও শুক্র/শনিবার অতিরিক্ত ক্লাশও হচ্ছে। ফলে লম্বা সময়ের জন্য সপরিবারে বেড়াতে যাওয়াটা কঠিন। আর এর প্রকাশ দেখা যাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে। যে সময়ে পর্যটকের ভিড়ে শহরের চিড়ে চ্যাপ্টা হওয়ার কথা সেই সময়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ানোর একটা মওকা আপনি এবার পেয়ে যাবেন।

কর্মময় আর স্কুলময় জীবন থেকে যদি দুইদিন সময় বের করতে পারেন তাহলে বেড়িয়ে আসতে পারেন কক্সবাজার থেকে। বেড়ানো ছাড়াও এখন কক্সবাজার আনন্দময় ভোজনেরও এক উত্তম জায়গা। ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়ে কিংবা বাসে সরাসরি যে কোন ভাবে কক্সবাজার পৌছে যান বরাদ্দের প্রথম দিন সকাল ১০টার মধ্যে। বিমানে গেলে আপনি পৌছাবেন ১২টা নাগাদ। আগে থেকে ফোনে বুকিং দেওয়া হোটেল বা রেস্টহাউসে যেতে পারেন। না হলে সামনে যেটা পাবেন, খোঁজ নিয়ে সেটাতে উঠে পড়েন। এককাপ গরম চা খেয়ে সমুদ্রের খোঁজে বের হয়ে যান। শুধু পানিতে নামার আগে দেখে নেবেন লাইফগার্ডরা কোন রঙ্গের পতাকা উড়িয়েছে। লাল পতাকা হলে পানি থেকে দূরে থাকুন।

সমুদ্র সৈকতে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে যাবে। যাঁরা ইউরোপের বাল্টিক, ব্ল্যাক, কাস্পিয়ান কিংবা ভূমধ্যসাগরকে সমুদ্র ভাবতেন, তাদের জানা হয়ে যাবে আসলেই সমুদ্র কী! লাফালাফি ঝাপাঝাপি করার এক ফাঁকে সী-বাইকে চড়ে চক্কর লাগাতে পারেন। লাইফ জ্যাকেটটা পড়ে নিয়েন। দেখবেন ওখানে স্পিডবোটও আছে। তবে, সেটির অভিজ্ঞতা এক্ষুনি নেওয়ার দরকার নেই। ওটি পরেরদিনের জন্য থাকুক। ঘন্টা কয়েক সমুদ্রে কাটিয়ে হোটেলে ফিরে আসুন। শরীর থেকে বালি আর লবন দূর করে দলবেঁধে খেতে বের হোন। কক্সবাজার শহরে এখন নানান রকম খাওয়ার বন্দোবস্ত, দেশী-বিদেশী প্রায় সব রকমের। দুপুরে খাওয়ার জন্য চলে যেতে পারেন পউশীতে। একটু সময় নিয়েই যাবেন। কারণ সেখানে কখনো টেবিল ফাঁকা পাওয়া যায় না। খাবার মেনুতে রাখতে পারেন লইট্যা আর রূপচান্দা ভাজি, ১০-১২ রকমের ভর্তার প্যাকেজ, কোরাল মাছের দোঁপেয়াজা আর সবশেষে ফিরনি। যাদের মাংস ছাড়া হয়ই না, তারা পউশীর গরুর মাংসের ভুনাটা খেতে পারেন। খাওয়া শেষে ইচ্ছে করলে হোটেলে ফিরে একটু গড়িয়ে নিতে পারেন। আর সেটি দরকার না হলে কলাতলীতে চলে যান। সেখান থেকে চান্দের গাড়ি (হুডখোলা জিপ) কিংবা হিউম্যান হলারে উঠে বসুন। দলেবলে ভারি হলে নিজেরাই একটা গাড়ি রিজার্ভ করতে পারেন। প্রথম গন্তব্য হিমছড়ির পাহাড়। সমুদ্র আর পাহাড় একত্রিত হলে কেমন লাগে সেটি হিমছড়িতে গেলে দেখতে পাবেন। ইচ্ছে হলে পাহাড়ে উঠতে পারেন ঝর্ণা দেখার জন্য। তবে, সময় খেয়াল রাখবেন কারণ আপনার পরবর্তী গন্তব্য ইনানী বিচ। সেখানে দেখবেন চমৎকার সব পাথর। ছবি তুলেন। পা ভেজান। পাথরে বসে সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে কিছুটা সময় একাকী কাটান। সূর্যের ডুবে যাওয়াটা উপভোগ করুন। সন্ধ্যা নেমে আসলে ফিরতি পথে চলুন। পথে নেমে পড়ুন মারমেইড ইকো রিসোর্টে। সেখানে কিছুটা সময় কাটান রেস্তোরায়, হালকা কিছু খেতে পারেন। তবে অর্ডার দেওয়ার আগে দাম-টাম দেখে নিয়েন! তারপর আবার ফিরে যান হোটেলে। যাবার পথে উপভোগ করুন পাহাড় আর সমুদ্রের রাতের দৃশ্য।

রাতের খাবারের জন্য বেছে নিন এমন রেস্তোরা সেখানে মাছের বার-বি-কিউ থাকে। যেতে পারেন সুইমিং পুলের পেছনের ইএফসি রেস্তোরায়। সেখানে কৃত্রিম জলাধারে জ্যান্তমাছ! নিজেই ধরে রান্না করতে পাঠিয়ে দিন। চমৎকার ভোজন শেষে হাটতে হাটতে চলে যান লাবনী পয়েন্টে সমুদ্রের পাড়ে। গভীর রাতের সমুদ্র দেখে ফিরে যান নিজের ডেরায়।

পরদিন সকাল সকাল সুমদ্রের দিকে রওনা দিন। স্পিডবোট ভাড়া করে চলে যান সোনাদিয়া আর মহেষখালিতে। সেখানে সমুদ্রতট থেকে ইচ্ছেমত কুড়িয়ে নিন ঝিনুক। ঘন্টা খানেক থেকে ফেরৎ নেমে পড়ুন সমুদ্রে, ঝাপাঝাপি। একটু বেলা করেই থাকুন। আজ দুপুরে অন্য কোন রেস্তোরায় খেতে পারেন। হতে পারে সেটি নিরিবিলি বা হাড়ি (কক্সবাজারে অবশ্য এটিকে বাংলা নামে ডাকে না, এর হিন্দি উচ্চারণটাই চালু, হান্ডি!) রেস্তোরা। সামুদ্রিক মাছের আধিক্য যেন থাকে মেনুতে। খাওয়া শেষে চলে যেতে পারেন কেএফসিতে। পুদিনা পাতা দিয়ে বানানো চমৎকার একটা ড্রিংকস আপনার আনন্দকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। ওখান থেক যান সমুদ্র পাড়ের ঝিনুক মার্কেটে। টুক-টাক স্মৃতি সঙ্গে থাকুক। সন্ধ্যায় কয়লাতে এক কাপ কফি খান বাঁশ বাগানে!

হোটেলে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠে পড়ুন রাত আটটার গাড়িতে!

সকালে আবার চিরচেনা শহরে।

আপনার ভ্রমণ আনন্দময় হোক।

9 Replies to “চট জলদি খাওয়া ও বেড়ানোর কক্সবাজার”

  1. Hello,
    it is great writing to promote the tourist spot, which can be a excellent economical foundation for Bangladesh. I hope that you will write more about different tourist spot with your personal experience. it will help to go up this sector in the local and foreign visitors.

    Thanks
    AR

  2. ওয়াটার বাইকের ভাড়া কেমন স্যার ? কতক্ষণ কতদুর পর্যন্ত চড়া যায় ? পেছনে কি গাইড অবশ্যই নিতে হবে ?

    1. আমাদের কাছ থেকে এক রাউন্ড ২০০ টাকা করে নিছে। বিদুষী হাফ রাউন্ড, ১০০ টাকা।

  3. এক নিঃস্বাসে পড়ে ফেললাম। মনে হলো সব চোখের সামনে ভেসে উঠছে ছবি মত। ধন্যবাদ স্যার আপনার সুন্দর লেখার জন্য। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সব সময় এবং বগুড়ার দই এর আমন্ত্রণ থাকলো।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version