নতুন বোতলে পুরাতন…

Spread the love

আমি যখন ছোট ছিলাম সেই সত্তর আর আশির দশকে চট্টগ্রামের জহুর হকার মার্কেটের পরিচিতি ছিল নিক্সন মার্কেট হিসেবে। আর সেখানে পাওয়া যেতো পুরানো জামা কাপড় যা বিদেশ থেকে আসতো। সেখান থেকে প্যান্ট কিনে তারপর সেটা অল্টার করা হতো মোমিন রোডের “ফাকিট” নামের একটা টেইলারিং শপ থেকে। বছরে একবার দুটো এরকম প্যান্ট আমাদের কপালে জুটতো। ১৯৮৬ সালে যখন ঢাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসি তখন জানতে পারি গুলিস্তানের বঙ্গবাজার হলো চট্টগ্রামের জহুর হকার মার্কেটের অনুরূপ!
এসব কথা মনে পড়ছে সার্কুলার ইকোনমি এবং ‘রি-সাইকেল – রি-ইউজ’ ইকোনমির কথা শুনে। এই অর্থনীতির মূল কথা হলো যতো পারো ফের ব্যবহার করো। যেমন আমাদের দাদী-নানীরা করতেন। তাদের শাড়ি পুরানো হলে সেটা দিয়ে বানাতেন নাতি নাতনিদের জন্য কাঁথা! মা-খালারা পুরানো জামা কাপড় দিয়ে নিতেন হাড়ি-পাতিল। মহল্লায় মহল্লায় হেটে হেটে ফেরিওয়ালারা বিকি-কিনির কাজটা করতেন।

এখন দেখলাম রিসাইকেল বিন ইত্যাদি নামে ফেসবুকে একাধিক গ্রুপ আছে যেখানে ব্যবহৃত কামা কাপড়সহ নানা রকম জিনিষপত্র বিক্রি হয়। বিক্রয় ডট কমের শুরুতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখতাম। এখনও নিশ্চয়ই আছে। দ্বিতীয়বার বাসা বদলানোর সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পুরাতন খাট,   ফ্রিজ, ডাইনিং টেবিল বিক্রি করেছি বলে মনে আছে।

তবে, সবচেয়ে অবাক হয়েছি ২০১৮ সালে রোমানিয়ার ক্লুজ নাপাকো শহরে গিয়ে। একটি পাহাড়ের ওপরে গণিত দল নিয়ে আমি থাকি। ফাঁকা সময়ে শহরে ঘুরে বেড়াই। তখন দেখলাম একটা চেইন স্টোর। জামা কাপড় বিক্রি করে। বাহির থেকে প্রাইজ ট্যাগ দেখে বুঝলাম দাম বেশ কম। ঢুকলাম একদিন এবং তারপরই জানতে পারলাম এটি ব্যবহৃত জামা-কাপড়ের দোকান। নাগরিকরা তাদের ব্যবহার করা জামা কাপড়, যা আরও কিছুটা সময় ব্যবহার করার মতো,  এখানে দিযে যায়। দোকান কর্তৃপক্ষ কোন কোন আইটেম টাকা দিয়ে রাখে। আর কিছু থাকে “বিক্রি হলে টাকা পাবেন” স্টাইলে। রোমানিয়ার লোকেরা আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বড় লোক হওয়া স্বত্ত্বেও কেন এই কাজ করে? একটা জিনস প্যান্ট বানাতে কতটুকু পানি লাগে সেটা প্রথম জানলাম। তখনই বুঝতে পারলাম কেন আমাদের দাদী-নানীদের কাঁথা ইকোনমি আসলে গ্রীন ইকোনমি ছিল।

নতুন উদ্যোগ?

ই-বে’র মতো সাইট বা রিসাইকেল বিনের মতো গ্রুপ ছাড়াও এই সার্কুলার ইকোনমি মাথায় রেখে নতুন শপ চালুর কথা ভাবতে পারেন। গত বছর দেখলাম আমেরিকার কয়েকজন টিন এজ মেয়ে একটি ওয়েবসাইট খুলে প্রথমে নিজেদের পুরানো কাপড় এবং পরে পরিচিতদের ফেলে দেওয়া জামা কাপড় বিক্রি করতে শুরু করেছে। এখন অনেকেই সেটা করছে।
আমাদের দেশেও নিশ্চয়ই এটা হচ্ছে (আমার ঠিক জানা নেই)।
যারা নতুন কিছু করার কথা ভাবছেন তারা এই উদ্যোগটি নিতে পারেন। শুরু হতে পারে একটি ফেসবুক পেজ খুলে। নিজের অব্যবহৃত জামা কাপড় লন্ড্রি করে সুন্দর প্যাকেট করে বিক্রি করা যাবে। প্রতিটি আইটেমের সঙ্গে এটির ক্রয়ের মোটামুটি সময়টা জানাতে হবে। ইচ্ছে করলে একটু মডেলিং করেও সেটি তুলে ধরা যাবে।

তারপর কিছু গ্রোথ হ্যাকিং টেকনিক ব্যবহার করতে হবে  ইলি ডিওপের মতো।  ১২০০ ডলারের প্রনোদণার প্যাকেজ থেকে ১৩ লক্ষ ডলারের কোচিং ব্যবসা দাড় করিয়ে ফেলেছেন তিনি গ্রোথ হ্যাকিং-এর কিছু সহজ টেকনিক ব্যবহার করে। আপনিও সেরকম কিছু করতে পারেন।

করোনা দেশের বড় একটা জনগোষ্টীর পারচেজিং পাওয়ার অনেক কমিয়ে দিয়েছে। তাদের কথা ভেবে আপনি এই উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে, এটি কেবল দামের জন্য পপুলার হবে এমনটা আমি ভাবি না। আমার ধারণা অনেকেই ব্র্যান্ডেড জিনিষপত্র কিনতে আগ্রহী হবে কম দামে। আর অনেকেই নিজের কাবার্ড খালি করতে পারবে।

এই নিয়ে আমি নিজে কোন সিস্টেমেটিক মার্কেট স্টাডি করি নাই। কিন্তু যেটুকু খোঁজ নিয়েছি তাতে মনে হচ্ছে এমন একটা উদ্যোগের পেছনে সময় দিলে সেটি দাঁড়িয়ে যেতে পারে।  পুরানো মালামাল বিক্রির জন্য এমনকী কেউ কেউ এখনই ই-বে’র মতো প্লাটফর্মও তৈরি করতে পারেন।

এক সময় সার্কুলার অর্থনীতির ব্যাপারটা আরও বেগবান হবে এবং লোকে যে কোন জিনিষ পুন:পুন ব্যবহারে আগ্রহী হবে।

গড়ে উঠবে নতুন বঙ্গবাজার, নতুন জহুর হকার মার্কেট। হয়তোবা অনলাইনেই থাকবে একটি বড় বাজার!

 

Leave a Reply Cancel reply