বুকুন তুমি অঙ্কে তেরো!!!
সে সময় আমাদের দেশ থেকে বের হতো কিশোর বাংলা। সেটিও পাক্ষিক এবং ট্যাবলয়েড সাইজে। সেটার ঈদ সংখ্যাতে একবার ছাপা হল ইমদাদুল হক মিলনের ‘চিতা রহস্য’ আর আলী ইমামের ‘অপারেশন কাকনপুর’। সে সময় আমাদের পাড়াতে, মানে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার রাজাপুকুর লেনে, আমাদের উঠতি বয়সের পোলাপান সবার হাতেই কোন না কোন বই থাকতো। বই নিয়ে আমরা ব্যপক আলাপ আলোচনা করতাম। এমিলের গোয়েন্দাকাহিনীর একটা বাংলা রূপান্তর করেছিলেন কে জানি। সেটা টিংকুর কান্ড নামে। পরে অবশ্য এমিলের গোয়েন্দাবাহিনী নামে মূল বইটার অনুবাদ বের হয়।
তো বলছিলাম আনন্দমেলার কথা। আনন্দমেলায় গল্প উপন্যাস ছাড়াও থাকতো দুই পাতা জুড়ে কিছু মজার বিষয় – ধাঁধা, শব্দজট, ভাষার খেলা ইত্যাদি। আমি প্রথমেই এই পাতাতেই ঝাপিযে পড়তাম। উদ্দেশ্য থাকতো শব্দজটটা মেলানো আর ধাঁধার উত্তরটা বের করা কারণ ১৫ দিন অপেক্ষার তর আমার সইতো না। এই পাতাতেই শব্দ নিয়ে অংশটা নিয়ে লিখতেন একজন, যার নাম ছাপা হতো ‘কুন্তক’। দুইদিন আগে জেনেছি কুন্তকের আসল নাম শঙ্ক ঘোষ, কবি শঙ্ক ঘোষ। তিনি কেমন মানুষ ছিলেন সেটিও জেনে গেছি আনন্দবাজারের প্রকাশক বাদল বসুর ‘পিওন থেকে প্রকাশক’ বই-এর কল্যানে। কয়েক সপ্তাহ আগে মতি ভাই-এর বাসা থেকে সেটা এনেছিলাম। ৬০০ পৃষ্ঠার ঢাউস একটা বই। ৪০০ পৃষ্ঠার মতো পড়ে ফেলেছি। এ সপ্তাহে শেষ করে ফেলতে পারবো আশা করি।
বাদল বাবুর বইটা প্রোগ্রাসে বড়ার একটাই কারণ সেটি হলো ছোটবেলার নায়কদের সম্পর্কে জানা। সত্যজিৎ, দুই সমরেশ, তারাপদ, মতি নন্দী, শীর্ষেন্দু সম্পর্কে এমনভাবে লিখেছেন পড়তে পড়তে আমি কোলকাতা শহরে চলে যাচ্ছি। কখনো ট্রামে কখনো বুধসণ্ধ্যার আড্ডায় হাজির হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে আরে উনিই তো শিবরাম চক্রবর্তী। কই ‘চক্কোর্তীরা কঞ্জুষ’ হলেও ওনাকে তো কঞ্জুষিপনা করতে দেখছি না?
গত সপ্তাহে একদিন চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। বাতিঘর থেকে “কারাগারের রোজনামচা’ আর ‘করে দেখ” কিনে এনেছি। এই দুইটাও আমার পড়ার লিস্টে আছে। এখন পর্যন্ত একসঙ্গে একাধিক বই পড়ার অভ্যাস থাকলেও পিওন থেকে প্রকাশকের সমান্তরালে অন্য কিছু পড়ছি না। কারণ বারবার ফিরে যাচ্ছি আমাদের আন্দরকিল্লার ছোট্ট বাড়িটিতে। যেখানে রাত না হওয়ার আগে কোনদিনই জানতাম না আজ রাতে কোন রুমে থাকতে হবে। বেশিরভাগ দিনে একটা পাটি আর একটা বালিশ নিয়ে চলে যেতে হতো ড্রয়িংরুমে। সেখানে সবাই টেলিভিশন দেখতেন। ফলে সেটি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আনন্দমেলাই ছিল ভরসা।
সেসব দিনগুলোত ফেরৎ নিয়ে যাওয়ার জন্য বাদলবাবুকে ধন্যবাদ।