ব্রডব্যান্ডের জন্য সবকিছু ঠেকে যাচ্ছে
সকালের খবর: তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ কোন দিকে হাটছে।
সকালের খবর: আপনি বলছেন সবকিছুর অগ্রতির মূলে ব্যান্ডউইথ। তাহলে এটি সম্প্রসারিত না হওয়ার পেছনে কারণটা কি?
মুনির হাসান: প্রথম দায় সরকারের। সরকার ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়েছে। কিন্তু সম্প্রসারনের জন্য কাজ করছেনা। আমরা বলছি, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৬শ পয়েন্টে উচ্চ গতির ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হোক। এটা দুই বছরের জন্য করা গেলে ওই এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি হবে। সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার থাকলেও তা বাড়ি বাড়ি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না দুটো কারণে। এক. সেখানে চাহিদা তৈরি হয়নি। দুই. এই চাহিদা তৈরির জন্য সরকারের যে কাজ করা দরকার তা করছে না।
সকালের খবর: তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব বাজারে আমাদের অবস্থান কোথায়।
মুনির হাসান: ২০১১ সালে বিশ্বে আইটি আউটসোর্সিংয়ের বাজার ছিল ৪শ বিলিয়ন ডলার। তারমধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলার কেউ এড্রেস করে না। এটা একদম ফাঁকা। সারা পৃথিবীতে এ কাজের লোক নেই। ৯০ থেকে ১শ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায় ভারত। আমরা নিচ্ছি মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলারের মত। কয়েক বছরে এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন যদি তা ৫শ বিলিয়ন ডলার হয়। তাহলে তার ১ শতাংশ মানে ৫ বিলিয়ন ডলার। তার ১ শতাংশ হলে দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তাও তো ৫শ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু আমরা এখনো আছি মাত্র ১শ মিলিয়নে। তার মানে আমাদের সুযোগ আছে। কিন্তু কাজের লোক নেই। আবার কাজের লোক তৈরির সুযোগও খুবই কম। কারণ ঢাকায় এসে নিজেকে তৈরি করা অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল। তার মানে আমরা একটা জায়গায় আটকে আছি। আমাদের শিক্ষা, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি এসব কিছুই ঠেকছে ওই এক ব্রডব্যান্ডে।
সকালের খবর: সরকার তো বলছে তারা তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে।
মুনির হাসান: ছোট্ট একটা উদাহরন দেই। আমাদের একটা হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তাদের কাজ হলো বিভিন্ন এলাকায় হাইটেক পার্ক নির্মান ও সেখানে বিদেশী কোম্পানী নিয়ে আসা। এসব না করে তারা মেয়েদের আউটসোর্সিং শেখাচ্ছে। এটা ওর আসল কাজ না। ও তো ফালতু কাজ করছে। এভাবে কোন সংস্থাই ঠিকমত কাজ করছে না। দেশে একটা হাইটেক পার্ক নেই। গাজীপুরে একটা হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো চালু হয়নি। এখন আবার সরকার বলছে জেলায় জেলায় হাইটেক পার্ক হবে। তুমি বাবা একটা করো। সেটাই যেন ভাল হয়। হাইটেক পার্ক তো জায়গা ঘেরাও দেওয়ার ব্যাপার না। সেখানে বিদেশীদের বিনিয়োগ না থাকলে তো হলো না। এখানে মাইক্রোসফটের অফিস থাকতে হবে। গবেষনা ও উন্নয়ন (আরএনডি) কেন্দ্র থাকতে হবে, স্যামসাং, সনির আরএনডি থাকতে হবে, ইনটেল এর অফিস থাকতে হবে। এমন আরো অনেক কিছু থাকতে হবে। যখন কোন বিদেশী কোম্পানী এখানে আসবে তখন সে প্রথমেই জানতে চাইবে তোমার ইন্টারনেটের কি অবস্থা? আমরা যখন বলব ঢাকার বাইরেই ইন্টারনেট দিতে পারিনি। তাহলে তারা তো এখানে বিনিয়োগ করবেনা।
সকালের খবর: এ জন্য কি সরকারের আন্তরিকতার অভাব। নাকি দক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার অভাব?
মুনির হাসান: এখানে সমন্বয়হীনতা ও উদ্যোগের অভাব। যেমন টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিটিআরসি’র সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে ৬শ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। এখান থেকে মাত্র ৬০ কোটি টাকা দিয়ে এ কাজটা করা সম্ভব। কিন্তু হচ্ছে না শুধু উদ্যোগের অভাবে। ঢাকার বাইরে উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য বিটিসিএলের পর্যাপ্ত অবকাঠামো রয়েছে। কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি কাজে লাগানো হচ্ছেনা। এগুলো সব পলিসির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না। আমাদের ব্রডব্যান্ড পলিসি লিখেছিলাম ২০০৬ সালে। ২০০৯ সালে তা অনুমোদন হয়েছে। ২০১৪ সালেও তা পরিবর্তন হয়নি। এটা তো পরিবর্তনশীল। আমাদের টেলিকম পলিসি ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। তা দিয়েই এখনো চলছে। এখন নতুন টেলিকম পলিসি দরকার। কিন্তু হচ্ছে না। যখন কোন বিদেশী এখানে আসবে তখন সে প্রথমেই দেখতে চাইবে- ‘এ জাতি কোথায় যেতে চাই। আমি বিলিয়নস অব ডলার এখানে বিনিয়োগ করবো। ও আসলে এটা বোঝে কি না বা এটা কার্যকর করতে পারবে কি না।’ আমরা বুঝি কি বুঝিনা তার প্রমান হলো আমাদের পলিসি। ২০০৯ সালে এ পলিসি আধুনিক ছিল। কিন্তু এটা তো এখন আধুনিক না।
সকালের খবর: আমাদের লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরন হলো?
মুনির হাসান: আগেই বলেছি সব কিছুর মূলে ব্রডব্যান্ড। পলিসিতে বলা আছে ২০১৫ সালের মধ্যে সারাদেশের ৩০ শতাংশ মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড পৌছে দেওয়া হবে। সেটা অসম্ভব। আমরা এখনো ২ শতাংশ মানুষের কাছেও ব্রডব্যান্ড পৌছাতে পারিনি। অথচ এটা ২০০৯ সালের পরিকল্পনা। গত কয়েক বছরে এটা নিয়ে কাজ করা হলে টার্গেট অর্জন হতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো তথ্য প্রযুক্তিতে আমরা এমন কিছু করতে যাচ্ছি না যা পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা যা করতে চাই তা কোন না কোন দেশে আছে। এটা কোন আবিস্কার না। সুতরাং এখানে সমস্যা থাকার কথা নয়।
সকালের খবর: তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে আপনার পরামর্শ।
মুনির হাসান: আমাদের অনেক লোক আছে। তাদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে। দেশের সব প্রান্তে সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদেরকে উচ্চ গতির ইন্টারনেট দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট দেওয়া গেলে প্রায় অর্ধেক অগ্রগতি হয়ে যাবে। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জিবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগ দিতে সরকারের অসুবিধা কোথায়? এর জন্য তো বিশ্বব্যাংকের টাকার দরকার নেই।
সকালের খবর: এভাবে চললে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কি পূরন হবে?
মুনির হাসান: সম্ভব না। ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আমরা খুব দ্রুত এগিয়েছি। তারপর থেকেই একপ্রকার বসে আছি। ওই সময়ে ব্রডব্যান্ডের জন্য যা করার তা আমরা করেছি। কিন্তু এখন যে পরের ধাপে যেতে হবে তা আর হচ্ছেনা। গত কয়েক বছরে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই। সবকিছু আটকে গেছে ব্রডব্যান্ডে গিয়ে। এটার উত্তোরন হলে আমরা আবার সামনের দিকে ছুটতে থাকব।
3 Replies to “ব্রডব্যান্ডের জন্য সবকিছু ঠেকে যাচ্ছে”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
সঠিক কথা বলেছেন, কিন্তু সরকারি মহলকে সচল করা যায় কিভাবে?
আগেও অনেকেই বলে গেছে, আজকে এই আপনিও বললেন!! এতো বলার পরেও কি উনাদের চোখে এইসব পড়ে না? আমার ত মনেহয় উনারা ঠিকই দেখতে পায়!
দেখতে পাওয়ার পরেও যদি কিছু না করা হয় তবে আর কবে করা হবে! 🙁
Khub valo laglo lekha ta pore munir vi….amra ashi apnar sathe….