বইমেলার বই-১৩: “বিক্রয় হবেঃ বাচ্চার জুতো, কখনো পড়েনি
“For sale: Baby shoes, never worn” (বিক্রয় হবে-বাচ্চার জুতো, কখনো পড়েনি)- আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখা এই গল্পটি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গল্প। (এ গল্পটি আদৌ তিনি লিখেছেন কিনা এ নিয়ে অনেকে সন্দিহানও বটে)। আমি অবশ্য “সম্ভবত” শব্দটি যোগ করেছি, কারণ আমার ধারণা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গল্পটি আমি লিখেছি। এটি মাত্র এক শব্দে-
“হুদাই।”
তো এই গল্পটি আমি লিখেছি একটি কারণে। আমার আশে পাশে অনেক পাগল আছে। এর মধ্যে একজন হলো আবু সাঈদ। সাঈদ যথেষ্ট পাগল। সে একদিন আমাকে বললো – বাংলা ভাষায় ১০০ শব্দের গল্পের তেমন চল নেই। সে একটা বই প্রকাশ করবে যেখানে ১০০ জনের লেখা ১০০টি ছোটগল্প থাকবে। সবকটি গল্পের সর্বোচ্চ দৈর্ড হবে ১০০ শব্দ!
অনেকেই বলেছে ১০০ শব্দে কেমন করে গল্প লেখা যায়। এক শব্দেও যে গল্প লেখা যায় সেটা প্রমাণ করার জন্য আমি উপরের গল্পটি লিখেছি।
কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ! কেউবা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকানিতে লাগাবে।চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ। কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে।এমনি কাঁচাই …
কিম্বা ভেঙে বেগুন-সহযোগে।যকৃতের পক্ষে ভারি উপকার।কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক … দাঁত ভালো থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন।বলে- ‘নিমের হাওয়া ভালো, থাক্, কেটো না।’কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না।আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।শান দিয়ে বাঁধিয়েও দেয় কেউ- সে আর-এক আবর্জনা।হঠাৎ একদিন একটা নতুন ধরনের লোক এলো।মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিমগাছের দিকে।ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙলে না, মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।
বলে উঠল,-‘বাহ্, কী সুন্দর পাতাগুলি … কী রূপ! থোকা-থোকা ফুলেরই বা কী বাহার… একঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাহ্-
খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।
কবিরাজ নয়, কবি।
নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না। মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।
ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটার ঠিক এক দশা।
তো ১০০ জনের গল্প নিয়ে এ্বই সাজানো হয়েছে। আমার অনেক পরিচিত জনের গল্প আছে। ওপার বাংলারও ১৭ জনের নাকি আছে। কয়েকটা পড়লাম। এক অদ্ভুত অনুভূতি। ১০০ শব্দে গল্প হয় না এটা কেউ বলতে পারবে না। সবগুলোই গল্প হয়েছে।
কোনটি ছোট গল্প। যেন “শেষ হয়েও হলো না শেষ”। আলমগীর ভাই-এর গল্পটা সেরকম। শরিফুল ইসলাম ভূইয়ার বাসররাতের গল্পটিও মজার। মনে হয় শুরু। কপালে না জানি আরও কী আছে। তবে, হারান জৌতিষীর গল্পটা পড়ে অনেক পুরানো একটা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল।
১০০ গল্প, ১০০ রকম অনুভূতি।
জয় বাংলা।