আমার বইমেলা ২০২০ -১: বঙ্গোপসাগরের দ্বীপেই যতো কারবার এবার

Spread the love

জাফর ইকবকল স্যারের প্রথম বই আমি পড়েছি কপোট্রনিক সুখ দু:খ। সেটা পড়ার পর থেকে রোবটদের বোকা বানানোর জন্য ‘আমি মিথ্যা বলছি’ ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকে গেছে। পরে সত্যি-মিথ্যার অনেক জটিল ধাঁধাও আমি পড়েছি, নিজে বানিয়েছিও কয়েকটা।
তবে, কপোট্রনিক সুখ দু:খের চেয়েও বেশি ভাল লেগেছে হাত কাটা রবিন ও দীপু নাম্বার টু। দীপু নাম্বার টু বই-ও পড়েছি। এসব যখন আমি পড়ি তখন আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমি একদিন জাফর স্যারকে সামনা সামনি দেখতে পারবো, তার বাসায় যেতে পারবো এবং তিনি হয়ে উঠবেন আমার অন্যতম অভিভাবক। যতো প্যাচাল আমার মাথায় আসবে সেটি তিনি শুনবেন। এবং আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করবো। এমনকী তিনি আমাকে বই-ও উৎসর্গ করবেন!এ সবই হয়েছে কারণ কায়কোবাদ স্যার একদিন আমাকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। এর পরের গল্প সবাই জানে।
এখন এসব কথা লেখার একটাই কারণ – প্রজেক্ট আকাশলীন। জাফর স্যারের নতুন বেস্ট সেলার সায়েন্স ফিকশন। সোজা সাপ্টা গল্প। বাংলাদেশের একজন শিক্ষক (কোন বিষয়ের???) ড. ইমতিয়াজ তার পড়ুয়াদের নিয়ে একটা রকেট বানাবে যা কিনা মহাকাশে যাবে। ড. ইমতিয়াজ জেট প্রপালশন ল্যাবের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দেশে এসেছেন, দেশেই কাজ করবেন বলে।

পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে ড. ইমতিয়াজ আসলে স্যার নিজে। স্যার যেভাবে তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন, কাজ করেন। ড. ইমতিয়াজও তাই।
তবে, এই গল্পের সায়েন্সের চেয়ে বেশি নাটকীয় হলো মিম নামের একটি মেয়ের উপখ্যান। বাইপোলার মেয়েটি ব্যাগের মধ্যে রামদা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ডাকাতদের রক্তাক্ত করতে পারে। কিন্তু সেই মেয়েটিকে দেখা যায় কঠিন তপস্যা করে নিজেতে তৈরি করতে, মহাকাশচারী হিসাবে। কিন্তু এক সময় জানা যায়, যে প্রতিযোগিতার জন্য আকাশলীন-১ তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে কোন মানুষকে মহাকাশযানে পাঠানোর দরকার হবে না। ফলে মিমের স্বপ্ন ভন্ডুল হয়ে যায়।

কিন্তু মিম হাল ছাড়ার পাত্রী নয়।সে বুদ্ধি করে কেমন করে সে বিশ্বর প্রথম টিনএজড নভোচারী হবে!

অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ বা চ্যাঙ্গার চরেই তৈরি হয় প্রজেক্ট আকাশলীনের সবকিছু। কিন্তু একদিন ঘুর্ণিঘড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়। পড়তে পড়তে আমি প্রায়শ সেখানেই চলে যাচ্ছিলাম। এটি আমার জন্য সহজ। কারণ বঙ্গোপসাগরে এরকম আর একটা দ্বীপে আমাকে যেতে হয়েছে যেটির নাম ময়াল দ্বীপ বা নয়া দ্বীপ। প্রজেক্টলীনের ল্যাবরেটরিটা মাটির ওপরে কিন্তু ময়ালের ল্যাবটা পানির নিচে।

ড. ইমতিয়াজের বিশ্ববিদ্যালয়টা মনে হয় চেনা। ভিসি তো আমাদের চেনাই!!! সায়েন্স ফিকশন হলেও আপনার কিন্তু একবারই মনে হবে না এটি ফিকশন। মনে হবে এটা খুবই সম্ভব।

তো ঘুর্ণিঝড়ের ধকল সামলে আবার কী আকাশলীন উঠে দাঁড়িয়েছে? বাংলাদেশের একদল তরুণের বানানো নভোখেয়া কী ঠিকঠাকমতো কক্ষপথে পৌছঁতে পেরেছে? ফেরার পথে সেটি কী বায়ুমন্ডলের ধ্বংস হয়ে যাবে?
অথবা বাইপোলার মিম কি শেষ পর্যন্ত মহাকাশে যেতে পড়েছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রজেক্ট আকাশলীন পড়তেই হবে।
এক নিশ্বাসে পড়ার মত নয়। কিন্তু রাত ১০টায় শুরু করে ঘন্টাখানেক পড়ে, সকালে বিদুষীকে স্কুলে পাঠিয়ে লাগাতার পড়ে শেষ করেই তবে আমি কিন্তু অফিসে গিয়েছি আজ।

আপনার বেলায় কী হবে সেটা কে জানে?

প্রজেক্ট আকাশলীন
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
তাম্রলিপি
মূল্য ৩৮০ টাকা

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version