বইমেলার বই-১২:সাত-পাঁচ চৌদ্দ

Spread the love

গণিত, বিজ্ঞানের পর গেল কয়েক বছর ধরে আমি প্রোগ্রামিং প্রোগ্রামিং করি। করি এ জন্য যে, প্রোগ্রামিং ছাড়া আগামী দিনগুলো একেবারেই অচল। এমনকি মাটি কাটতেও প্রোগ্রামিং লাগবে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করেছি আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রোগ্রামিং –এ ব্যাপক আগ্রহ। কিন্তু সুযোগ কম। বেশ কয়েকবছর আগে থেকে সুবিন, শান্তসহ অনেকেই আমাকে বার বার বলত আমি যেন ওদেরকে হেল্প করি প্রোগ্রামিং-এর ব্যাপারটা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে। আমি প্রথমে রাজী হইনি। কারণ এমনিতেই আমার অনেক দোকান। তার উপর প্রোগ্রামিং-এর একচ্ছত্র একটা ব্যাপার আছে কারও কারও। কিন্তু পরে, দেখলাম যেভাবে আগানো হচ্ছে তাতে ১০০ বছর লেগে যাবে কক্সবাজার পৌছাতে। কাজে বছর তিনেক আগে আমরা শুরু করে দেই জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট। ফলাফল তো আমরা জানি। গণিত অলিম্পিয়াডের মতো আমাদের খুদে প্রোগ্রামারও আসতে শুরু করছে নানান জায়গা থেকে, শুধু ঢাকা থেকে নয়।

এরই মধ্যে সুবিনের নেতৃত্বে লেখা শুরু হলো প্রোগ্রামিং নিয়ে। আমাদের প্রথম আইওমও দলের সদস্য তাহমিদ রাফি আর সুবিন মিলে একটি বাইনারি পাবলিকেশনও শুরু করে দিয়েছে। কাজে অনেকেই লিখতে শুরু করেছেন। আমি জানি, কোন একটি আন্দোলন করতে হলে যে কয়টি উপাদান লাগে তার গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো বই, মাতৃভাষাতে বই। বাংলায় ব্যাপক লেখালেখির ফলে প্রোগ্রামিং এখন আর এলিটদের হাতে নেই। আমি খুশী।

প্রোগ্রামিং নিয়ে লেখালেখিতে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়েছে। এর মধ্যে আমি বিশেষভাবে ঝংকার মাহবুবের কথা বলি। ঝংকারের প্রথম বই হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং-এর পাণ্ডুলিপি পড়ার মাধ্যমে ওর সঙ্গে আমার সখ্যতার শুরু। তারপর হাবলুদের জন্য লেখাটা কোন ফ্লুক না। ও এরকম স্টাইলে লিখছে কঠিন সব বিষয়।

শুরু থেকে, প্রোগ্রামিংয়ের প্রাথমিক ধারণাগুলো পাওয়ার পরে কিভাবে প্রোগ্রামিংয়ের সেকেন্ড লেভেলে যাবে সেটা নিয়ে অনেককেই বেগ পেতে হয়। কারণ শুরু করার জন্য অনেক টিউটোরিয়াল আর বই পাওয়া যায়।  কিন্তু প্রোগ্রামিং শিখার জার্নি শেষ করার জন্য কিভাবে কি করতে হবে সেই বিষয়ের নির্দেশনার ভাল রকমের অভাব আছে।  যার কারণে অনেকেই খুব আগ্রহ সহকারে প্রোগ্রামিং শুরু করার কিছু দিন পরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।  আর বসরা কিন্তু ঝাড়ি দিয়ে বলে – বাকিটা নিজে নিজে শিখে ফেল!

সে জায়গা থেকে ঝংকার নিজেকে বের করেছে তার গতবছরের বই-এ। একটু মাঝারি লেভেলের জন্য লিখেছিল ‘প্রোগ্রামিংয়ের বলদ টু বস‘।

আর এবারের বইমেলায় বের করেছে ‘প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী’ বইটি। এই প্রথম তার কোন বই ছাপা হওয়ার আগে আমি পড়তে পারলাম না। সে জন্য রিভিউ লিখতে সময় লাগলো। ভালবাসা দিবসে প্রকাশের কয়েকদিন পর আমি বইটা পেয়েছি হাতে।
ঝংকার এমনিতেই ভিন্নধর্মী আর মজার বই লিখে।  এইবার বইয়ের নাম ‘প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী’ কেন দিয়েছো এটার উত্তর দিয়েছে –

“হুজুগে, বাপের হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুর্যোগে, কিংবা গুগল, মাইক্রোসফট, ফেইসবুকের মতো বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার সুযোগে; যে যেকারনেই প্রোগ্রামিং শিখতে আগ্রহী হোক না কেনো তাকে প্রোগ্রামার হিসেবে একটু লেভেলে উঠতে হবে। এই লেভেলটা প্রোগ্রামিংয়ের কয়েকটা বেসিক জিনিসে কিক মেরে, দু-চারবার কোডের রান বাটনে ক্লিক করে, বাকি সময় মার্বেল খেলে, কদবেল গিলে পাওয়া যায় না। বরং একটা প্রফেশনাল সফটওয়্যার বানানোর সব এরিয়া সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। প্রবলেম সলভিং, অ্যালগরিদম, টাইম কমপ্লেক্সিটি, রিকারসন, ডাটাবেজ, আর্কিটেকচার, হাবিজাবি বুঝতে হবে, ইন্টারভিউ পার হওয়ার স্পেশাল প্রিপারেশন নিতে হবে। প্রোগ্রামিংয়ের ইন্টারভিউতে যত এঙ্গেলে প্রশ্ন করতে পারে, তত এঙ্গেলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। অর্থাৎ প্রোগ্রামিংয়ের বাপ-মা, মামা-খালু, ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোনসহ প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। এই চৌদ্দগোষ্ঠীর কথা শুনলেই যাদের গলা শুকিয়ে যায়, মাথায় ঝিম ধরে তাদের জন্যই চায়ের দোকানের গল্প, আড্ডা আর মাস্তির মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠীকে উপস্থাপন করা হয়েছে”।

তার কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি আসলে প্রায়োগিক প্রোগ্রামিং-এর বই। যারা সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসাবে নিজেকে গড়তে চায় তাদের জন্য আসলে এই বই। তবে, যারা কেবল বই পড়েই সফটওয়্যার প্রকৌশলী হতে চায় তাদের কপালে দু:খ আছে। এই বইটা টানা পড়ে ফেলাটা হবে দারুন বোকামী। এর প্রতিটি ধাপের অনুশীলনী, করে দেএয়া কোডিং নিজে করে-টের দেখতে হবে। তারপর নিজেই একটা সমস্যা ভেবে তার সমাধানের জন্য কোড করতে হবে। এই কাজটা যদি প্যারালালি করা না যায় তাহলে চৌদ্দগোষ্ঠীকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

এই বই-এর একটা ভূমিকা লিখে দিয়েছে শিক্ষক ডট কমের রাগিব হাসান। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে  এই বইটার প্রকাশক আর আমার তিন বই-এর প্রকাশণা সংস্থা হলো আদর্শ। মেলাতে ওদের স্টল নম্বর হলো ৩২৬-৩২৮। ওদের স্টলের ওপরে একটা বেলুন আছে। সেটা দেখে স্টলটা চেনা সহজ। ওখানেই হাবুরেদর জন্য প্রোগ্রামিং আর বলদ টু বসও পাওয়া যায়। আমার তিনটাতো আছেই!

 

প্রোগ্রামিং-এর চৌদ্দগুষ্ঠী
ঝংকার মাহবুব
আদর্শ
গায়ের দাম ২৮০ টাকা

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version