রোড এহেড ও বিল গেটসের ভবিষ্যদ্বানী
ব্যবসা বা ব্যবসা সংক্রান্ত বই আমি পড়বো বা এরকম কিছু বইও ফাঁকতালে লিখে ফেলবো সেটা কি আমি ভেবেছি ছোটবেলায়? এমনকী বুয়েট লাইফেও আমার পড়ার জগতের বড় অংশ জুড়েই ফিকশন আর ক্লাসিকস। পাস করে বুয়েটের তৎকালিন কম্পিউটার সেন্টারে যোগ দিয়েও সেটার খুব একটা ব্যতিক্রম হয়নি। তখন ইন্টারনেটে এসে পড়লেও তা খুব একটা সুলভ ছিল না। বুয়েটে তখন একটা ডায়ালআপ কবনেকশন, ৬৪ কেবিপিএসের!
আর তখন সদ্য পাস করেছি। কাজে নানা রকম প্রজেক্ট নিয়ে চিন্তা ভাবনা ও কাজ করতে সময় চলে যায়। কলাবাগানে একটি সাততলা বাড়ির চিলেকোঠায় আমার আবাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিস করে বাসায় ফেরার সময় পালকি ভিডিও থেকে একটা ভিডিও ক্যাসেট নিয়ে ফেরা। আর মোড়ের আজাদ হোটেলে রাতের খাওয়া। এই ছিল রুটিন। পড়ার মধ্যে তখনও ফিকশন আর শোনার মধ্যে সুমন চট্টপাধ্যবয়ের আমাদের জন্য।
তারপরও বিলের টানে পড়তে শুরু করলাম। বই জায়গা করে নিল আমার ডেস্কে। অফিসে একটু আধটু করে পড়ি। আর এভাবে এক আশ্চর্য জগৎ আবিস্কার করে ফেললাম। এর আগে নন-ফিকশন বই, আত্মজীবনী নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল কম। সেবা প্রকাশনীর কারণে বই বলতে থ্রিলার, ওয়েস্টার্ন, মাসুদ রানা, কুয়াশা আর বিশ্বসাহিত্যের গল্প আর উপন্যাস। বলতে গেলে প্রথম চোখ ফুটল আমার নন-ফিকশনের প্রতি এই বই-এর মাধ্যমে।
সেই বইতে বিল গেটস টেকনোলজি নিয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বানী করেন। এর বেশিরভাগই আমি বুঝি নাই। তবে একটা জিনিষ বুঝতে পারলাম সেটা হলো বিজনেসও হয়তো লাপ্লাসের সেই দানব তারার মতো ভবিষ্যতের ঘটনাও আঁচ করতে পারে। নিউটনের জানানো দুনিয়ার কার্যকারণের বেড়া ডিঙ্গিয়ে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনিশ্চয়তার ব্যাপারগুলো আমি তখন কিছু কিছু বুঝতাম। আমার ধারণা ছিল ব্যবসা যেহেতু সমীকরণ সহজে মানে না তাই সেখানে তেমন আনন্দ নাই (কতো ভুল জানতাম!!!)। এর পরে প্রায় দীর্ঘ সময় বিলের এই বই আমি সময় পেলেই উল্টেপাল্টে দেখতাম। ২০১৮ সালে বাসা বদলানোর সময় প্রায় ৪০০+ বই বিভিন্ন পাঠাগারে দিয়ে দেওয়ার সময় এই বইটাও দিয়ে দিছি।
যাহোক, ধান ভাঙ্গতে শিবের গীত লম্বা হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিল-মেলিন্ডার ২৭ বছরের সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার পর নানা কিছু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে দেখলাম বিল গেটস তার ব্লগে এই বই নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেটি পড়তে গিয়ে এতো সব কথা মনে পড়লো।
এই বক্তৃতা ছিল তার বই-এর প্রথম চিন্তা
রোড এহেড বইতে বি গেটসের করা প্রযুক্তি বিশ্ব নিয়ে একাধিক ভবিষ্যদ্বানী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে! সেখান থেকে কয়েকটা আমার পাঠকদের জন্য।
১. বিলের ওয়ালেট পিসি এখনকার স্মার্টফোন – পকেটে রাখা যাবে এমন একটা পিসির কথা বিল বলেন যা দিয়ে এখনকার স্মার্টফোনে যা যা করব যবয় তার সবই করা যাবে। বিলের ভাষ্য – It will be about the same size as a wallet, which means you’ll be able to carry it in your pocket or purse. It will display messages and schedules and let you read or send electronic mail and faxes, monitor weather and stock reports, and play both simple and sophisticated games. At a meeting, you might take notes, check your appointments, browse information if you’re bored, or choose from among thousands of easy-to-call-up photos of your kids.
স্মার্টফোনের সঙ্গে এর কী কী মিল সেটি কী আর ব্যাখ্যা করার দরকার আছে?
২. নেটফ্লিক্স ও ভিডিও স্ট্রিমিং – বিলের একটা এনালিসিস ছিল টেলিভিশন নিয়ে, দু:খও। দুটো কারণ – একটা হলো আপনাকে কোন অনুস্ঠান দেখতে হলে টিভির সময়ের সঙ্গে নিজেকে এডজাস্ট করতে হবে। অথবা টিভির সঙ্গে ভিসিআর কানেক্ট করে সেটা রেকর্ড করে রাখতে হবে যদি নিজের সময়ে দেখতে চান। আর আপনার সময়মতো টিভি আপনার অনুস্ঠান দেখাবে এটার তো প্রশ্ন আসে না। তিনি লিখেছেন, “Television has been around for fewer than 60 years, but in that time it has become a major influence in the life of almost everyone in the developed nations. No broadcast medium we have right now is comparable to the communications media we’ll have once the internet evolves to the point at which it has the broadband capacity necessary to carry high-quality video. Video-on-demand is an obvious development. There won’t be any intermediary VCR. You’ll simply select what you want from countless available programs.”
নেটফ্লিক্স, হইচই, চড়কির কথা তিনি ভেবেছেন আজ থেকে সিকি শতাব্দী আগে। আমার খালি মনে হয়েছে উনি এর ব্যবসার ব্যাপারটা সেভাবে বলেননি। ভিসিআরের কথাটাও ভাবেন। নেটফ্লিক্সের উত্থান হয়েছে ভিসিআরের ক্যাসেট ভাড়া থেকে। (নেটফ্লিক্সের বিস্তারিত গল্প লিখেছি আমার বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ বইতে)।
৩. ফেসবুক, মাইস্পেস তথা স্যোসাল মিডিয়া নিজের ব্লগে তিনি উল্লেক করেছেন – Another idea that’s central to The Road Ahead—that technology would allow unprecedented social networking—has pretty much come to pass. I am surprised, though, by the way social networks are both bringing us together and contributing to a more polarized atmosphere. I didn’t anticipate how much people would choose to filter out different perspectives and harden their own views. স্যোসাল সাইটের কথা ঘুরে ফিরে বার বার এসেছে বইতে। মনে রাখতে হবে যে সময়ে বিল সামাজিক যোগাযোগের কথা বলেছেন তার আট বছর পরে ফ্রেন্ডফাইন্ডার ও মাইস্পেস লঞ্চ হয়েছে আর জাকারবার্গের বয়স ছিল মাত্র ১১!
বিল গেটস তার নোটসে যেগুলো এখনও হয়নি সেগুলোর কথাও বলেছেন। পাঠকরা সেখান থেকে পড়ে নিতে পারবেন।