গণিত যাত্রীর ডায়েরী ২০১৫-১ : কয়েদীদের বাঁচাবে কে?

Spread the love

কায়কোবাদ স্যারের সঙ্গে যে কোন জার্নির মজায় আলাদা। এবারেরটাও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

স্পীডবোটে আমরা সাতজন

৮ জানুয়ারি স্যারকে বাসা থেকে তুলে আমরা যখন মাওয়া ঘাটের দিকে রওনা হয়েছি ততক্ষণে ৩টার বেশি বেজে গেছে। নিশ্চিতভাবে সন্ধ্যার আগে ঘাটে পৌছানোর সম্ভাবনা কম। তারপর আবার শিমুলিয়া ঘাটের নতুন রাস্তায় আমরা জ্যামে পড়ে গেলাম। শেষে সাদ্দাম নেমে মিলিটারিকে কী জানি বলে আসাতে আমাদের সুযোগ হল এগিয়ে যাওয়ার। ঘাটে পৌছেছি ৫.১৫ মিনিটে। সাদ্দামের হিসাবে স্পীডবোটে ১২ মিনিট লাগে মাঝিকান্দি যেতে।
আমরা প্ল্যান করে গিয়েছিলাম লঞ্চে পারাপারের। কিন্তু, এতওগুলা নদীর পাড়ের মানুষের কাছে আমার পানি-ভয়ের কথা আর বললাম না। কাজে একটা স্পীডবোট ভাড়া করে আমরা উঠে পড়লাম, আমরা সাত জন।
পদ্মা এখন মোটেই প্রমত্তা নয়। তার ওপর নদী শাসনের নানান যোগাড় যন্ত্র শুরু হয়েছে। তারপরও একটা দুইটা ঝাকি খেয়ে সাদ্দামের সময় থেকে ঠিক ৫মিনিট বেশি সময় নিয়ে আমরা ঐপারে পৌছে গেলাম।
মাছিকান্দিতে আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল হিমেল, মোস্তাফিজ, মিন্টু। আর আমাদের এবারের পাইলট নবী। হিমেলরা নবীকে নিয়ে সকালেই নদী পাড়ি দিয়েছে।
মাঝিকান্দি থেকে শরিয়তপুর বেশি দূর নয় কিন্তু রাস্তা একেবারেই আঁকাবাঁকা। কাজে আমাদের ঘন্টার জার্নি।
পদ্মা পাড়ির চিন্তায় মাওয়া পর্যন্ত জার্নিতে তেমন একটা আড্ডা হয়নি। কাজে এপারে এসেই শুরু হল।
প্রথমে খঁজ নেওয়া হল শরিয়তপুরের কাবার দাবারের। ডাক্তর সোমাকে লাগানো হল পাত্তা নেওয়ার কখন নড়িয়ার রসুন উঠবে, কালিজিরারই বা খবর কী।
অন্যদিকে শরিয়তপুর থেকে জানতে চাওয়া হল রাতের মেনু কী হবে?
হিমেল জানালো – স্যার, আমরা সর্ষে ইলিমের কথা বলে এসেছি।
শুধু সর্ষে লিশ। এইডা কিছু হইল!!
কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি থেকেই খোঁজ পাওয়া গেল বড় চিংড়ির।ব্যাস। মালাইকারি, বেগুণ ভাজি, সালাদ। হিমেল অবশ্য মুরগির রোস্টটাও দিতে বললো মনে হল।
তো, যাত্রা পথে আমাদের জাজিরা পাড় হতে হবে। আর আমাদের সঙ্গে জাজিরা গোপালচন্দ্র বিজ্ঞান ক্লাব ক্লাবের কয়েকজন ভলান্টিয়ার। (কখনও আমি জানতামনা ওরা আমাদের কত্ত বড় ফাঁকি দিয়েছে। জেনেছি পরেরদিন সকালে, যখন ডাক্তারের মার সঙ্গে দেখা হয়েছে)।

আমরা কায়কোবাদ স্যারের রাশিয়ার শিক্ষা জীবনের নানান গল্প শুনছি। এক ফাঁকে স্যারের মনে হল আমাদের ভলান্টিয়ারদের একটা ছোট কিন্তু সহজ সমস্যা দেওয়া যাক। যদিও স্যারের স্থির বিশ্বাস “তোমরা এটা পারবে না”।
তো স্যারের সমস্যাটা এমন।
১০ জন কয়েদি।সবাইকে মৃত্যুদন্ড দে্য়া হয়েছে। আগামীকাল সেটা কার্যকর হবে। তো, রাতের বেলায় জেলার সবাইকে ডেকে বললে- তোমাদের তো মৃত্যু অনিবার্য। তবে, রানি মা তোমাদের একটা সুযোগ দিতে চান। কাল তোমাদেরকে আমরা এক লাইনে, একজনের পেছনে একজন এভাবে দাড় করাবো, আমাদের খুশী মত। তারপর সবাইকে চোখ বেধে শাদা বা কাল টুপি পড়িয়ে দেব।
চোখ খুলে দেবার পর তোমাদের প্রত্যেকের কাছে জানতে চাওয়া হবে “টুপির রং কি”। যে সটিক বলতে পারবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে, কেও কাউকে কোন সিগন্যাল দিতে পারবে না। জিজ্ঞাষা করলে কেবল শাদা বা কাল বলতে হবে।

“আচ্ছা। আমাদেরকে কী একজের সামনে একজন এভাবে দাড় করাবেন।“
– হ্যা।
“তাহলে, আমাদের যে সবার পেছনে থাকবে তাকে দিয়ে শুরু করবেন।

আচ্চা।

কয়েদিরা সবাই রাতে একজোট হয়ে পরিকল্পনা করতে বসলো। তারপর তারা একটা বুদ্ধি করলো এবং তাতে তাড়া নিশ্চিত হল যে এভাবে কমপক্ষে ৯ জন নিশ্চিতভাবেই বেঁচে যাবে। বাকীজন আল্লাহ ভরসা।

বলতে হবে তাদের বুদ্ধিটা কী ছিল?

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version