আমাদের ওষুধ শিল্প

Spread the love

স্বাধীনতার পর কোন কোন খাতে আমরা অভাবনীয় উন্নতি করেছি কিন্তু সেরকম আলাপ করিনা?

একটি নি:সন্দেহে আমার খাদ্য উৎপাদন। মানুষ বেড়েছে, আবাদযোগ্য জমিতে ঘর বাড়ি তৈরি হয়েছে এবং ফসল উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিনগুন। ১৯৭৪ সালে আমেরিকা যতো সহজে আমাদের দেশে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে পেরেছ, এখন সেটা পারবে না। যদিও এখন কোন বছর খাদ্যশস্য আমদানী করতে হয়, তারপরও আবহাওয়ার ঠিকঠাক থাকলে আমাদের কৃষকরা ঠিকই বাম্পার ফলন ফলিয়ে ন্যায্যমূল্য পাননা! কুষি ও কুষকের কথা খুব বেশি মিডিয়াতে আসে না। আমাদের নতুন গণমাধ্যম ফেসবুকও তাতে খুব একটা শরিক হয় না। এবারের বাজেট বিশ্লেষনগুলোতেও সেরকম খুব একটা হাওকাও আিম দেখি নাই।

আর একটা সম্ভবত ওষুধ শিল্প। ১৯৭২ সালে, স্বাধীনতার পর আমাদের ৭০% ওষুধই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হতো। আমার মনে আছে ছোটবেলায় দাদী এবং নানীর একটি ওষুধ আনানোর জন্য আমরা সব সময় খোঁজ রাখতাম কেউ ব্যাংকক যাচ্ছে কী না?

সেই পরিস্থিতির কতোটা উন্নতি হয়েছে তার একটা সারাংশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়। বলেছেন – দেশীয় চাহিদার ৯৮%-ই এখন দেশে তৈরি হচ্ছে!!!

আমাদের ঔষধশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমার আমার অভিনন্দন।
ঘটনা এখানে শেষ নয়, অর্থমন্ত্রী বলছেন -২০১৭ সালে ১৪৫টি দেশে ৩ হাজার ১৯৬ কোটি  টাকার ঔষধ রপ্তানি করা হয়েছে। অনেকের কাছে সংখ্যাগুলো তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নাও হতে পারে। সেজন্য কিছু বাড়তি তথ্য দেই-

২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮৩২ কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল রফতানি করেছে। ২০১৬তে সেটি ৩০০% বেড়ে হয় ২ হাজার ২শ’৪৭ কোটি টাকা। আর ২০১৭-রটা তো আগে বলেছি। সরকারি আশাবাদ হচ্ছে ২০২১ সালে এ খাতে রপ্তানি আয় ৬ বিলিয়ন ডলার হবে।
রপ্তানিতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মা লিমিটেড, নোভারটিস (বিডি) লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এ্যারিষ্টো ফার্মা লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মা বাংলাদেশ লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, পপুলার ফার্মা, পপুলার ইনফিউসন, বায়ো ফার্মা, অপসোনিন, গেøাব ফার্মা, বীকন ফার্মা, ড্রাগস ইন্টারন্যাশনাল, হেলথকেয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, জেসন, নাভানা, জেনারেল, ডেলটা,   ইবনেসিনা, রেডিয়ান্ট, নভো হেলথকেয়ার ফার্মাসহ আরও কয়েকটি কোম্পানী। সরকার জাতীয় ওষধনীতিকে হালনাগাদও করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, মিডিয়াতে হাওকাও না করে, হেন-করেঙ্গা তেন করেঙ্গা এসব না বলেও একটি সেক্টর নীরবে নিভৃতে এই কাজটি কেমন করে করছে? এক বছরে কীভাবে রপ্তানি আয় তিনগুণ বাড়ে? বাজারের দেশের সংখ্যাও বাড়ে কেমনে? ওদের ম্যাজিক কী?
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে।
এই যে এই সেক্টরটা বড় হচ্ছে কই সেখানে তো বিদেশী কনসালটেন্ট আর বিদেশী কর্মীদের হরিলুট নাই? ঝামেলাটা কোথায়?
এবছর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৪ মে তারিখে। যারা ওষুধের এপিআই বানাবে তাদের জন্য কর্পোরেট আয়কর অব্যাহতি দিয়ে দিয়েছে। কাজটা নিশ্চয়ই খুব সহজ হয়নি। একদল লোক নিশ্চিয় আমাদের সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, কাঁচামাল খাতে এই আয়কর ছাড় সাময়িকভাবে কিছুটা করহ্রাসের কারণ হলেও এর ফলে দেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশ হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং আখেরে দেশেরই লাভ। তারা সেটি বোঝাতে পেরেছেন।

অনেক সময় আমরা আমাদের অর্থনীতির সবল দিকগুলো নিজেরা বুঝতে পারি না। কিন্তু বিদেশীরা ঠিকঠাক বুঝে ফেলে। বাংলাদেশের ২৪ মে-র ঘোষণার ফলে ভারতীয় ওষুদ রপ্তানী ব্যহত হতে পারে বলে মনে করেছে সেখানকার লোকেরা। এ নিয়ে তারা হাওকাও করছে যা ঐ নিউজে দেখা যাবে।


ভারতীয়রা অবশ্য অনেক স্মার্ট। ওরা বাংলাদেশেই এখন এই সুবিধার জন্য এখানেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। দিন দুই আগে ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেল ২৪ মে’র ঘোষিত সুবিধা গ্রহণে এর মধ্যেই একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা নানান লোকের সঙ্গে কথা বলছে। সরকারও ভাবছে মিরস্বরাই ইপিজেডে তাদের জায়গা দেওয়ার কথা।

ওষুধ শিল্পের এই বিকাশ নিয়ে আমাদের ফার্মেসী পড়ুয়া ও বিশেষজ্ঞরা কেন অনেক বেশি লেখালেখি করেন না?
আগামী ১০ বছরে যে সব খাতে বেশি বেশি নজর দেওয়া দরকার ফার্মেসী মনে হয় তার একটা।

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version