খালিপায়ের বিলিওনিয়ার শিক্ষক!!!
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি গ্রাম। নিকটতম শহর থেকে ২০/৩০ কিমি দূরে। আপনি যখন সেখানে পৌছাবেন ততক্ষণে গ্রামের স্কুলের ক্লাস ছুটি হয়েছে। আপনার কাঙ্খিত ভদ্রলোককে আপনি হয়তো স্কুলের সামনে ক্ষেতের মধ্যে পাবেন। আপনার ডাক শুনে সাইকেলওয়ালা ভদ্রলোক দাড়াবেন। উনি গ্রামের স্কুলে গণিত আর বিজ্ঞান পড়ান। স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের এই নতুন শিক্ষককে পছন্দ করে কারণ তার পড়ানোর স্টাইলটা ভিন্ন। আপনি তাকে ধুতি আর শার্ট পড়া দেখে মনে মনে খুশি হবেন কারণ আপনি শুনে এসেছেন ওনার প্রিয় পোষাক হচ্ছে টি-শার্ট, জিনস ও স্যান্ডেল। তবে অনেক সময় থাকেন খালি পায়ে। ইনফ্যাক্ট তাকে জুতা পড়া কেউ দেখেছে কিনা সেটা বলা মুশ্কিল।
ভদ্রলোকের সোজা কথা –“I live fairly simply, I hate wearing shoes. If I can avoid it, I do,”
এই নাঙ্গাপায়ের ভদ্রলোক একটি নতুন মিশন নিয়ে নেমেছেন। আমার মনে হয় ভদ্রলোকের পরিচয় আমি দিয়ে দিতে পারি এ বেলায়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে ভদ্রলোকের সম্পদের পরিমান মাত্র ১৬০ কোটি ডলার। ভদ্রলোকের নাম শ্রীধর ভেম্বু। নাঙ্গাপায়ের বিলিওনিয়ার!!!
তামিলনাড়ু গ্রামের এক্সপেরিমেন্টের আগে বরং আমরা তাঁর সম্পর্কে খোঁজ খবর নেই। চেন্নাই হাইকোর্টের স্টেনোগ্রাফার বাবা ও গৃহবধু মা’র সন্তান শ্রীধর। জন্ম ১৯৬৭ সালে। সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেখা শুরু করে শ্রীধর শেষ পর্যন্ত পৌঁছান আইআইটি মাদ্রাজে। সেখান থেকে এমএস আর পিএইচডি করার জন্য আইনস্টাইনের ইউনিভার্সিটি প্রিন্সটনে। সেখান থেকে পিএইচডি করে বের হলেন ১৯৯৪ সালে। লেকচারারের অফার পেলেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ক্যানবেরায়। কিন্তু চাকরি নিলেন কোয়ালকমে। স্যান ডিয়াগোতে।
সেখানে তড়িৎকোশলী হিসেবে তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ওয়্যারলেস যোগাযোগ, সিডিএমএ ও পাওয়ার কন্ট্রোল। এই সময় অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও তাঁর আগ্রহ জন্মে। দুই বছর পরে, চেন্নাই-এর শহরতলীর একটি এপার্টমেন্টে টনি টমাসের সঙ্গে মিলে একটি ছোট্ট সফটওয়্যার কোম্পানি চালু করেন। নাম দিলেন ভেম্বু সফটওয়্যার। টনির নেটওয়ার্কিং এ কিছু কাজ ছিল আর ছিল ব্যবস্থাপনায় কিছু অভিজ্ঞতা। এডভেন্ট নেট নামেই ভেম্বু সফটওয়্যার কোম্পানি ২০০৩ সাল পর্যন্ত চালু থাকে।
৫৩ বছর বয়স্ক শ্রীধর এখন পর্যন্ত কোন ফান্ডিং নেননি কিংবা কোম্পানির কোন অংশ বিক্রিও করেননি। আমার ধারণা এই কারণে তাঁর সম্পর্কে আমরা খুব একটা বেশি জানি না। “লাভের টাকা আমরা বিনিয়োগ করি, আবার বিনিয়োগ করি”। শ্রীধর বলছিলেন একজন অস্ট্রেলিয় সাংবাদিককে।
“শুরু থেকে আমরা ব্যাংকে কতো টাকা থাকলো সেটা নিয়ে ভাবি নাই। বরং চেষ্টা করেছি এমন কিছু করতে যা করে আমরা আনন্দ পাই। যদিও একটা ধারণা হলো স্টার্টআপ করা হয় এক্সিটের জন্য। কিন্তু আমি যদি আমার কাজটা আনন্দের সঙ্গে, ভালবাসার সঙ্গেই করি, তাহলে কেন এক্সিট করবো” শ্রীধরের সরল জিজ্ঞাষা। এই চিন্তাটা কিন্তু মারাত্মক। কারণ আইটি ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে আপনি দেখবেন ভেঞ্চারের পেছনে দৌড়ানো এবং প্রাথমিক গণ প্রস্তাবে (IPO)গিয়ে নিজেদের ইউনিকর্ন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। শ্রীধর কিন্তু এ রাস্তাতে হাটলেন না।
কয়েকবছর আগে জোহো তার কর্মীদের ওপর একটি সার্ভে করে। দেখা গেল ৪০% বা ৩৫০০ জন কর্মী বলেছে “তারা বাড়ির কাছে থাকতে পারলে খুশি হতো”। এবারের অতিমারি শ্রীধরকে এই চিন্তাটাই বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিয়েছে। তামিলনাড়ুর ২০টি গ্রামে এখন ২০০ প্রকৌশলী তাদের বাড়ির কাছে কাজ করছে। শ্রীধর ভাবছেন এটিকেই তিনি মডেল করবেন। কারণ তিনি মনে করেন – গ্রামের লোকেরাও শহরের লোকদের মতো সমান দক্ষ এবং ভাল কাজ করতে পারে।
জোহো স্যুটে এখন ৪০টির মতো এপ আছে যা ছোট ব্যবসা থেকে বড় ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগে। জোহোর এখন প্রায় ৫ কোটি ব্যবহারকারী আছে। শ্রীধরের ইচ্ছে ‘ব্যবসা পরিচালনার সকল সফটওয়্যার জোহোর থাকবে এাং কর্মী প্রতি মাত্র ১ ডলারে সেটা উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতে পারবে।”
One Reply to “খালিপায়ের বিলিওনিয়ার শিক্ষক!!!”