এসএসসি পরীক্ষার পর কী করবে?
তাহলে নিজের শহর দেখতে বের হও। পড়াশোনা, কোচিং আর হাউস টিউটরের প্রকোপে ঢাকার অনেকেই এখনো লালবাগের কেল্লা দেখেনি, আহসান মঞ্জিলে যায়নি। সন্ধ্যাবেলায় সূর্য ডোবার সময় শহীদ মিনারে থাকার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছো। এখন এগুলো করে ফেল। এমনকী প্রচন্ড গরমের দিনে রমনা লেকের পাড়ে কাঠের বেঞ্চিতে ঘন্টা দুয়েক বসে থাকারও অনাবিল আনন্দ রয়েছে। কয়েক বন্ধু মিলে চলে যাও জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
এসবে যখন একটু হয়রান হয়ে যাবে তখন কয়েকদিনের জন্য নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে যাও। সেখানে সময় কাটাও। মোবাইল, ইন্টারনেট আর টেলিভিশনের বাইরেও একটা জগৎ আছে সেটার খোঁজ নাও। সেখানকার ছেলেমেয়েদর সঙ্গে বন্ধৃত্ব কর। সকল আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করো। বড়দের জন্য শ্রদ্ধা আর ছোটদের জন্য আদর নিয়ে যাও। এলাকার লোকেদের সঙ্গে দেখা করো। কয়েকদিনের মধ্যে আমের সময় এসে পড়বে। কোন গাছের আম বেশি মিষ্টি সেটা জানার চেষ্টা কর। চিৎ সাতার না ডুব সাঁতার কোনটি বেশি আনন্দময় সেটি খুঁজে বের কর।
ইচ্ছে ছিল ছবি আঁকা শিখবে, কিন্ত সময় পাওনি। তাহলে এবার দুইমাসের জন্য একটা ছবি আঁকার ক্লাসে ভর্তি হতে পারো। যারা প্রোগ্রামিং শেখার কথা ভেবেছিলে তার তামিম শারিয়ারের “কম্পিউটার প্রোগ্রামিং” বইটা সংগ্রহ করতে পারো (এটি ইন্টারনেটে বিনামূল্যেও পাওয়া যায়)। আর গুগলে সার্চ করে দেখো প্রোগ্রামিং শেখার কত উপাদান আছে। মোদ্দা কথা পড়ার চাপে যা যা করতে পারোনি তার একটা বেছে নাও। তবে কোনটাকেই বেশি সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই।
যেহেতু অখন্ড অবসর কাজে বই পড়া, সিনেমা দেখা আর বেড়ানোতেই বেশি সময় দেওয়া যাবে। বেড়ানোর সময়ও হাতের কাছে কিছু বই রাখতে পারো। বন্ধুদের বাসা থেকেও বই সংগ্রহ করতে পারো। শহরের পাবলিক লাইব্রেরিতে তোমার জন্য অনেক অনকে বই আছে। এই সময়ে লাইব্রেরিতে পড়ার অভ্যাসটাও করে নিতে পারো। যখন উচ্চতর পড়াশোনা করবে তখন তোমাকে প্রচুর সময় লাইব্রেরিতে দিতে হবে। এখনকার অভ্যাস তখন অনেক কাজে দেবে।
পরীক্ষার কারণে যে বইগুলো পড়তে পারো নাই, যে সিনেমাগুলো দেখতে পারো নাই সেগুলোর পেছনে সময় দাও। এর মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনেক নতুন বই বের হয়েছে সেগুলো পড়ে ফেলতে পারো। পাশাপাশি আমি কতকগুলো বই-এর তালিকা দিলাম এখানে সেগুলোও পড়তে পারো।
যা পড়তে পারো
তবে পড়ার সময় মনে কোন খেদ রেখো না। এখন তোমার পড়ার সময়। যা পাবে সব পড়বে। প্রতিদিন অন্তত একটি দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোল। প্রথম আলোতে শব্দজট এবং সুডোকু মেলানোর খেলা থাকে, সেগুলোতেও অভ্যস্থ হতে পারো। শব্দজট আর সুডোকু তোমাকে ঠান্ডা মাথায় সমস্যা সমাধানে অভ্যস্থ করে তুলবে। ইংরেজি অনেক দৈনিকে প্রতিদিন শব্দজট থাকে।
যে সব সিনেমা দেখতে পারো
ব্যাটলশিপ পটেমকিন, ক্রেইসন আর ফ্লাইং, এডমিরাল ইয়ামামাটো, ব্যাটল অব বালজ, সাউন্ড অব মিউজিক, চার্লি চ্যাপলিনের সব, ইটি-দি এক্সটআ টেরিস্টিয়াল, হোয়্যার ঈগল ডেয়ারস, গানস অব নাভারন, ওমর মুখতার, এটেনবরোর গান্ধি, টার্মিনেটর-১,২,৩, লাইফ অব পাই, ফরেস্ট গাম্প, ম্যাট্রিক্স, থ্রি ইডিয়ট। সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজি, জয় বাবা ফেলুনাথ; সুবর্নরেখা, পদ্মা নদীর মাঝি, উত্তম –সুচিত্রার কয়েকটি, থ্রি ইডিয়ট, দামু, তারে জামিন পার, স্বদেশ, নায়ক, কোই মিল গ্যায়া । বাংলাদেশের মধ্যে জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া, হুমায়ুন আহমেদের আগুনের পরশমনি,। এছাড়া সুপ্রভাত, মুক্তির গান, রানওয়ে, ওরা এগারোজন, বেদের মেয়ে জোৎস্না, আম্মাজান, রূপবাণ, মালকা বানু । ইরানের চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদির চিল্ড্রেন অব হেভেন, কালার অব প্যারাডাইস, সং অব স্প্যারো। এখন যে সিরিজগুলো চলছে তার মধ্যে শার্লককে রাখতে পারো এই তালিকায়। ডেভিড এ্যাটেনবোরো অনেকগুলো ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন, কার্ল সাগানের আছে ব্লু প্ল্যানেট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিয়ে নির্মিত আরো কিছু ছবি রাখতে পারো তোমার তালিকায়।
যা যা শুনতে পারো
রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অতুল প্রসাদ আর ডিএল রায়ের যতো গান শুনতে পারো। শুনতে থাকো এরিক ক্ল্যাপটন, বব মার্লি, বব ডিলানের যতো গান পাও, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের যতো গান খুজে পাও, সোলসের প্রথম দিকের এলবামগুলো, রেনেসা আর আজম খানের গান। শুনতো পারো ফেরদৌস ওয়াহিদ আর হাবীবের গান। কবীর সুমন আর নচিকেতার গানও শুনতে পারো। বিশেষ ভাবে শুনো কবীর সুমনের তিনি বৃদ্ধ হলেন আর তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা (এটি শহীদ কাদরির কবিতা নিয়ে গান)। দরজা খুলে কারো দেখা পাও কী না সে চেষ্টাতেও দোষ নেই যেমন নেই তুমি যেমন আছো তেমন যদি থাকতে চাও। শুনতে পারে বেটোফেনের সিম্ফনি, রবি শংকর আর বিসমিল্লাহ খানের সেতার, ওস্তাদ জাকির হোসেনের তবলা আর চৌরাশিয়ার বাশি। রবার্ট ক্লেডারম্যনের পিয়োনোতে বাখ আর মোৎজার্টের কিছু সুরের একটা ক্যাসেট পাওয়া যেত আমাদের সময়ে, এখনো পাও কী না খোজ নিতে পারো।
যে সব বক্তৃতা পড়তে/শুনতে পারো
হযরত মুহম্মদ (সা:)-এর বিদায় হজ্জ্বের শেষ ভাষন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষন,মার্টিন লুথার কিং-এর আই হ্যাভ এ ড্রিম,জন এফ কেনেডির ভেবো না দেশ তোমাকে কী দিয়েছে ভাবো তুমি দেশকে কী দিতে পারো, দ্যা গলের ফ্রান্স হ্যাজ লস্ট এ ব্যাটল বাট হ্যাজ নট লস্ট দ্যা ওয়ার, স্টিভ জবসের স্টে হাংরি স্টে ফুলিশ,আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের বক্তৃতা, হাউজ অব কমন্সে চার্চিলের আই হ্যাভ নাথিং টু ওফার বাট ব্লাড, টয়েল, টিয়ার্স এন্ড সোয়েট, ১৯৬৪ সালে কোর্টে নেলসন মান্দেলার আমি শাদাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে, আমি কালোদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে।
মনে রেখ, এই তালিকাটি কোন বিশেষ তালিকা নয়। এটি আমার ব্যক্তিগত পছন্দের পড়া, শোনা, দেখা আর বেড়ানোর তালিকা। তুমি তোমার মত করে তালিকাটিকে সাজিয়ে নিও।
তোমাদের অফুরন্ত অবসর আনন্দে কাটুক, নির্ভাবনায় কাটুক।
তোমার জীবনের সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক। পাই-এর মত সুন্দর হোক তোমার জীবন।
One Reply to “এসএসসি পরীক্ষার পর কী করবে?”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
Whoa, things just got a whole lot earise.