ব্রাজিল আইওমওতে বাংলাদেশ দল
২০০৪ সালে এথেন্সে গিয়ে আইএমওর মেম্বারশীপ যোগাড় করে আনি। ২০০৫ থেকে শুরু হয় আমাদের যাত্রা। এর মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীরা সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এ পর্যন্ত ৪টি রৌপ্য পদক, ১৭টি ব্রোঞ্জ পদক ও ২৩টি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
২০০১ সালে প্রথম আলোর বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় শুরু হওয়া ‘নিউরনে অনুরণন’ এখন আমাদের সবার প্রাণের গণিত অলিম্পিয়াড। ২০০৪ সালে আমরা আইএমওর সদস্যপদ পেয়েছি আর ২০০৫ সাল থেকে অংশ নিচ্ছি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উত্সব আজ দেশের শিক্ষার্থীদের প্রাণের উত্সবে পরিণত হয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও প্রথম আলোর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।
এ বছরেরর অলিম্পিয়াড হবে ব্রাজিলে। শুরু হবে ১৭ জুলাই। আর তাতে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে যাচ্ছে –
আসিফ-ই-ইলাহী
আসিফ-ই-ইলাহী পড়ছে সিলেট এমসি কলেজে। বাবা আজিজুর রহমান জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত এবং মা হাসনে আরা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। আসিফ পঞ্চদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ ছাড়া একাধিকবার বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সাইকেল চালাতে পছন্দ এই খুদে গণিতবিদের। বড় হয়ে বিশুদ্ধ গণিত নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চায় আসিফ। আইএমওতে চতুর্থবারের মতো অংশ নিচ্ছে আসিফ। এরই মধ্যে একবার রৌপ্য পদক, একবার ব্রোঞ্জ পদক এবং একবার পেয়েছে সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
মো. সাব্বির রহমান
নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান। বাবা মো. সাইদুর রহমান একজন ব্যবসায়ী এবং মা সিদ্দিকা রহমান গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট সে। সাব্বির জাতীয় পর্যায়ে ২০১৩ সালে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে তৃতীয়, ২০১৫ সালে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস এবং চলতি বছর হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হয়েছে। বই পড়া, প্রোগ্রামিং করা ও অরিগামি বানাতে ভালো লাগে তার। বড় হয়ে গণিতের ওপর উচ্চশিক্ষা নিয়ে গণিতের শিক্ষক হতে চায় সাব্বির। আইএমওতে তৃতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছে এই প্রতিযোগী। এরই মধ্যে দুটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে সাব্বির।
আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। বাবা আহমাদ আবু জোনায়েদ চৌধুরী ইন্টারপোর্ট ম্যারিটাইম লিমিটেডের পরিচালক এবং মা সৈয়দা ফারজানা খানম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় সে। জাওয়াদ ২০১১ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস, ২০১৪ সালে জুনিয়র এবং ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় এবং চলতি বছর জাতীয় পর্যায়ে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছে। ভালো লাগে তার বই পড়তে। বড় হয়ে গণিতের ওপর উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায়। আইএমওতে গত বছর প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ পদক পায় জাওয়াদ। এ বছর তার দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ।
এস এম নাঈমুল ইসলাম
বরিশালের অমৃতলাল দে মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে এস এম নাঈমুল ইসলাম। বাবা মো. নজরুল ইসলাম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং মা সালমা শিকদার গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট সে। ২০১৩ সালে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস, ২০১৪ সালে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে এবং ২০১৫ সালে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৬ সালে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস এবং চলতি বছর সেকেন্ড রানারআপ হয়েছে। ক্রিকেট খেলা, প্রোগ্রামিং ও বই পড়তে ভালো লাগে। বড় হয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের ওপর উচ্চশিক্ষা নিতে চায় নাঈমুল। আইএমওতে তৃতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছে এই শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে একবার পেয়েছে সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
রাহুল সাহা
ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে রাহুল সাহা। বাবা বিপুল চন্দ্র সাহা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং মা মিত্রা রানী সাহা গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট সে। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে আঞ্চলিক ও জাতীয় অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন এবং পরপর দুবার ফাস্ট রানারআপ হয়েছে এই শিক্ষার্থী। চলতি বছর আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে। গণিত, ম্যাজিক ও লেখালেখি করতে ভালো লাগে। বড় হয়ে কম্পিউটার সায়েন্স, বিশুদ্ধ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের ওপর উচ্চশিক্ষা নিতে চায় রাহুল। আইএমওতে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে এই শিক্ষার্থী।
তামজীদ মোর্শেদ রুবাব
নটর ডেম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে তামজীদ মোর্শেদ রুবাব। বাবা এ এইচ মনজুর মোর্শেদ, উপপ্রধান (অর্থনীতি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মা খন্দকার শামিমা ইয়াছমিন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। বাবা–মায়ের একমাত্র সন্তান রুবাব। ২০১৫ সালে আঞ্চলিকে চ্যাম্পিয়ন ও জাতীয় অলিম্পিয়াডে ফার্স্ট রানারআপ এবং চলতি বছর আঞ্চলিকে চ্যাম্পিয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে ফার্স্ট রানারআপ হয়েছে এই শিক্ষার্থী। বই পড়া, গান শোনা ও অঙ্ক করতে ভালো লাগে তার। বড় হয়ে কম্পিউটার সায়েন্স, গণিতের ওপর উচ্চশিক্ষা নিতে চায় রুবাব। আইএমওতে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে এই শিক্ষার্থী।
১৪ জুলাই রাতে ব্রাজিলের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দল। এ জন্য ওরা আপনাদের সবার দোয়া কামনা করছে। গণিত অলিম্পিয়াডের খবর পাওয়া যাবে ফেসবুক পেজে facebook.com/BdMOC এবং ফেসবুকের গণিত অলিম্পিয়াড গ্রুপে facebook.com/groups/BdMOC।
ধন্যবাদ সবাইকে। আর সর্বশেষ খবর পাওয়া যাবে প্রথম আলোর মুদ্রিত ও অনলাইনে।