একবার না পারিলে দেখো ৫২ বার
২০১০ সালে আমার একটা ট্যাব হলো। সেখানেই আমার প্রথম দেখা ‘টকিং টম’-এর সঙ্গে। যা বলি সেটাই ব্যাটা রিপিট করে। মজার। আমি আর আমার ছেলে দুজনই ব্যাপক আনন্দ নিয়ে সেটা খেলি। তারপরই দেখা হলো আর একটা খেলার সঙ্গে। এতো নেশার যে, মাঝে মধ্যে কখন ম্যালা সময় কেটে যেতো সেটা টেরও পেতাম না। খেলাটার নাম বললেই সবাই চিনে ফেলবেন তাই এক্ষুনি নামটা বলছি না।
তার আগে বলে নেই কম্পিউটার গেমের বিশ্ববাজার কিন্তু নেহায়েৎ ছোট নয়। ভিডিও ও মোবাইল গেমের মোট বাজার ২০২০ সালে মাত্র ১১০ বিলিয়র ডলার!!!
তো, এই অঙ্গনে তিন ফিনিশ যুবকের পবরফরম্যান্স হলো
৫১ চেষ্টা
৫১ ব্যর্থতা
এতোদূর পর্যন্ত ব্যর্থতাকে টেনে নেওয়া কঠিন কিন্তু তারপরও তিন যুবক টিকে আছে। রোভিও এন্টারটেইন নামে এই ছোট্ট স্টার্টআপটির জন্ম ২০০৩ সালে। অন্যান্য স্টার্টআপের সঙ্গে তাদের পার্থক্য হলো ওরা একের পর এক গেম রিলিজ করেই যাচছে কিন্তু কোনোটাই ক্লিক করছে না। চলার জন্য তারা অবশ্য অন্যদের গেমও বানায় দেয়।
ছয় বছরে ৫১টা রিলিজ থেকে আয় রোজগার বলতে কিছু নাই। পূজিপাট্টা সব প্রায় শেষ। মোটামুটি দেওলিয়া হওয়ার পথে। এরই মধ্যে ডিসেম্বর ২০০৯ সালে তাদের ৫২তম গেম রিলিজ হলো। সেটা এতোই সফল যে ঢাকা শহরে আমার মতো নবিস গেমারও সেটার প্রেমে পড়ে গেল।
কারণ গেমটির নাম হলো “এংরি বার্ড“। একটি রাগী পাখির কান্ড। আর তিন তরুণের নাম হলো মিখায়েল হেড, জার্নো ভাকেভাইনিন ও কিম ডিকার্ট। ২০০৯ সালে ওরা তাদের কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া শুরু করে কারণ টেকার অভাব।
কিন্তু যেহেতু এই প্রজেক্টটি সম্পর্কে কারোরই কোন ধারণা নেই, তাই এর ওপর ঝাপিয়ে পড়াটা হলো না। তারা তাদের নিয়মিত কাজ, ক্লায়েন্টের জন্য গেম বানানো, সেটা অব্যাহত রাখলো। শুধু সময় পাওয়া গেলে এটা নিয়ে চিন্তা এবং একটু একটু করে আগানো। যখনই একদল লোক হাতে কিছু সময় পেতো এই রাগী পাখির পিছনে সময় দিতো। এই সময় তারা ক্লায়েন্টের জন্য চারটি গেম তৈরি করে ফেলে। তবে, তারা সবাই উত্তেজিত ছিল কারণ সবাই ভেবেছে স্টিভ জবস যে নতুন যুগের সূচনা করেছেন তার জন্য এটা একটা কিছু করতে পারে। মনে রাখতে হবে, ২০০৭ সালে বাজারে এসেছে আইফোন। আর সঙ্গে এসেছে অযুত-নিযুত সম্ভাবনা। রোভিও টিমও এই সম্ভাবনা ধরবে ঠিক করেছে। “একটা মাত্র কন্ট্যাক্ট থেকে বিশ্বজুড়ে বিতরণ”। কাজে তারা এপল এপ স্টোরকে টার্গেট করে। উদ্দেশ্য আগে এটা জয় করা তারপর অন্য জায়গা দেখা যাবে। তাদের ভাবনায় আইডিয়ার কোন খামতি ছিল না (৫১টা রিলিজ করেছে!)। কিন্তু রাগী পাখির ছবি তাদের সব চিন্তাকে এলোমেলো করে দেয়। সবাই মিলে, ঐ পাখিকে ঘিরে গল্প বানাতে শুরু করে। গল্প বানাতে গিয়ে একদিন একজন আবিস্কার করে ভাল গল্পের জন্য পাখির একটা শত্রু দরকার। ঠিক এই সময় ইউরোপে সোয়াইন ফ্লু –এর খবর থাকতো পত্রিকা জুড়ে। কাজে পিগ বা শুয়োর হয়ে গেল কাঙ্খিত শত্রু। শুয়োর পাখির ডিম চুরি করেছে কাজে পাখি রেগে গেছে। মানুষ যেহেতু গল্পের পরিণতি দেখতে চায় সেজন্য পুরো টিম নেমে পড়লো একটা সুন্দর গল্প বানাতে।
তারপরের গল্প কুইক। দেখা গেল যে সুযোগ পাচ্ছে এই গেম খেলার সেই বুঁদ হয়ে যাচ্ছে নেশার মধ্যে। সব বয়সের লোকেরা এপস্টোর থেকে কিনতে শুরু করলো গেম – এংরি বার্ড। গেমের জন্য তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এই গেম পূরণ করেছে –
- কেমন করে খেলতে হবে সেটা এতো সহজ যে কাউকে কোন টিউটোরিয়াল দেখতে হবে না। স্রেফ ডাউনলোড করে খেলা শুরু করে দেওয়া যাবে
- গেম সঙ্গে সঙ্গে লোড হবে, কোন ধানাই পানাই হবে না
- কেউ ইচ্ছে করলে কম সময়ের জন্য খেলতে পারবে
আর এংরি বার্ডের বৈশিষ্ট্য হলো আপনি খেলতে শুরু করলে একের পর এক ধাপ অতিক্রমের চেষ্টা করতে থাকবেন।
২০১৬ সালে এংরি বার্ড নিয়ে সিনেমা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত সব প্ল্যাটফর্ম মিলে এই গেমের ডাউনলোড ৪০০ কোটি বার! আর সেই থেকে এংরিবার্ড প্রচুর টাকা আয় করেই চলেছে। এই ২০২০ সালেও।