বিজ্ঞানী যখন বিপ্লবী ও উদ্যোক্তা
রাঢ়ুলীর জমিদার বাড়ির দোতলায় ঘুম ভাঙ্গার পর ফুলু এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার অপেক্ষার অবসান হয়। শুনতে পায় একদল ছেলে-মেয়ের কলকাকলি। বিছানা ত্যাগ করে ফুলু নেমে আসে নিচে। সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তাদের বাড়ির সামনের পথ দিয়ে একদল ছেলে-মেয়ে হৈ হৈ করতে স্কুলের পথে হেটে চলেছে। কোলকাতা যাওয়ার আগে এদের সঙ্গেই স্কুলে যেতো ফুলু। মাঠে খেলতো কিংবা সুযোগ পেলে একটু দূরের কপোতাক্ষ নদে চলে যেতো। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আমাশয়ে আক্রান্ত দুর্বল ফুলুর পক্ষে পড়াশোনার চাপ নেওয়া সম্ভবা নয়। স্বাস্থ্য পুনুরুদ্ধারের জন্য যশোরের (এখন খুলনা) পাইকগাছা থানার রাঢ়ুলী গ্রামের বাড়িতে এখন থাকে সে। বাবা-মা বা ভাই-বোনেরা সবাই কোলকাতায় থাকে। ছেলে-মেয়েরা দৃৃষ্টির আড়াল হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে তারপর ভিতর বাড়িতে ঢুকে। এখন তার কাজ হলো দোতলায় কোনার রুমে পিতার লাইব্রেরিতে চলে যাওয়া। এবার বাড়িতে এসে এই লাইব্রেরি হয়ে উঠেছে তার সময় কাটানোর আশ্রয়।
ক’দিন আগে সেখানে স্যার উইলিয়াম স্মিথের “Principia Latina” -র খোঁজ পেয়েছে। কয়েকপাতা পড়েই ফুলু এর অনেকখানি ‘বুঝিতে পারিয়াছে” বলে মনে হয়েছে।
শেক্সপিয়ার, এমার্সন, কার্লাইল, ডিকেন্সের রচনা, নিউটন, গ্যালিলিও, ফ্রাঙ্কলিনের জীবনী, বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি ইচ্ছেখুশি বই পড়ার আনন্দ তার একাকীর জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। স্যর উইলিয়াম জোন্সের প্রশ্নের উত্তরে জোন্সের মায়ের উক্তি ‘পড়িলেই সব জানিতে পারিবে’ কথাটি কিশোর ফুলুর মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে।
আর এভাবে কিশোর ফুলুর মনোজগৎ আগামী দিনের একজন বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা ও দেশহিতৈশী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় হিসেবে তৈরি হওয়ার পথ নির্দেশ করে।বলা যায় বাংলার বিজ্ঞান জগতের রেনেসাঁর সূচনা সৃষ্টিকারী এ বিজ্ঞানীর নিজেকে গড়ে তোলার মূল মন্ত্র হয়ে যায়, “পড়ো পড়ো পড়ো”।
জুন্ম ও বাল্যকাল
১৮৬১ সাল বাঙ্গালির জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বছর। সেই বছরে ৭ মে (২৫ বৈশাখ) কোলকাতার জোড়াসাঁকো পরিবারে যে শিশুটির জন্ম হয়, কালক্রমে সে হয়ে উঠে বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর এর মাত্র তিনমাসের মধ্যে কোলকাতা থেকে বেশ খানিকটা দূরে যশোরের পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদীর পারে প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্ম, আগস্টের ২ তারিখে। রবীন্দ্রনাথের হাতে যেমনটি বাংলার সাহিত্য অঙ্গনের নবযুগের সূচনা তেমনি প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ও হয়ে উঠেছেন বাংলার বিজ্ঞান ও শিল্প উদ্যোগের পথিকৃৎ প্রধান পুরুষ। বলা যায় তাঁদের দুজনের হাতেই বাংলার রেনেসাঁর সূচনা।
রাঢুলির যে জমিদার বাড়িতে প্রফুল্ল চন্দ্রের জন্ম সেটির পত্তণ করেছিলেন তার প্রপিতামহ মানিকলাল রায়। তিনি ছিলেন প্রথমে কৃষ্ণনগর ও পরে যশোরের কালেক্টরের দেওয়ান। দেওয়ান শব্দটি নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন নিমক চৌকীর দেওয়ান। আর মানিকলাল রায়ের ক্ষেত্রে এটি ছিল ইংরেজদের রাজস্ব আদায়ের যে দপ্তর সেখানকার দেশীয় সর্বোচ্চ পদ। মানিকলার রায় যে প্রভূত ধনসম্পত্তি অর্জন করেন তদীয় পুত্র যশোরের সেরেস্তাদার আনন্দলাল রায় সেটিকে আরও বৃদ্ধি করেন। আনন্দলাল তার পুত্র হরিশচন্দ্র রায়কে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় প্রেরণ করেন। তাহার সঙ্গী হোন রাঢুলী গ্রামের উত্তের কপোতাক্ষ নদীর পাড়ের সাগরদাঁড়ি গ্রামের দেওয়ান রাজনারায়ণ দত্ত ও তার প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান মধসুদন দত্ত। ১৮৪৩ সালে মধুসুদন দত্ত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে ‘মাইকেল মধুসুদন দত্ত’ নাম গ্রহণ করেন। এই ঘটনা তার সতীর্থদের পরিবারগুলোতে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আনন্দলাল রায় দ্রুত তার পুত্রকে রাঢুলিতে ফের) নিয়ে আসেন এবং ভূবন মোহিনী দেবীর সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে হরিশচন্দ্রকে সম্পত্তি দেখাশোনার ভার দেন। হরিশচন্দ্র মেধাবী এবং পার্সি, সংস্কৃত ও আরবি ভাষা জানিতেন। তিনি দ্রুত নিজ বাড়িতে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। বালক প্রফুল্ল তার কাছেই প্রথম ইয়াং এর “Night Thoughts”, ফ্রান্সিস বেকনের “Novum Organum” ইত্যাদি বই-এর নাম শুনেন। তত্ত্ববোধিনী,সমাচার দর্পন, হিন্দু পত্রিকা, অমৃতবাজার পত্রিকা, সমাচার দর্পনের গ্রাহক ইত্যাদির গ্রাহক ছিলেন। ডাকযোগে এগুলো কলকাতা থেকে রাঢুলিতে পৌছাতো। বিবাহের পর যখনই হরিমচন্দ্র কলকাতা যেতেন তখনই তিনি তার স্ত্রী ভূবন মোহিনী দেবির জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা করতেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্বয়ং ভূবনমোহিনী দেবীকে বাংলা পাঠ শিক্ষা করতে সহায়তা করতেন। মায়ের হাতেই প্রফুল্ল চন্দ্রের শিক্ষায় হাতে খড়ি হয়। তারপর তিনি তার পিতা প্রতিষ্ঠিত গ্রামের স্কুলে তার অন্য ভাইদের সঙ্গে ভর্তি হোন। বাড়িতে যেহুত পড়াশোনার এবং বি-পত্রিকার বিশাল সম্ভার ছিল তাই শুরু থেকে প্রফুল্ল চন্দ্রদের পড়াশোনায় অনুরাগ গড়ে ওঠে। ১৮৭০ সালে হরিশচন্দ্র সন্তানদের পড়ালেখার ভাল বন্দোবস্ত করার জন্য কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বছরে তিনি স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে কলকাতার ১৩২নং আর্মহার্স্ট স্ট্রীটে ভাড়া বাড়িতে চলে আসেন। প্রফুল্ল চন্দ্র ভর্তি হোন কলকাতার হেয়ার স্কুলে। সেখানে কৃতধন্য শিক্ষকদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু ১৮৭৪ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র যখন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন তার গুরুতর রক্ত আমাশয় হয়। ফলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় ইচ্ছেমতো পড়ার সুযোগ পান। তারপর স্থাস্থ্য উদ্ধারের আশায় প্রফুল্ল চন্দ্রকে রাঢুলী গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যার কথা আমরা শুরুতে জেনেছি। পরবর্তী সময়ে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় মনে করতেন এই অসুস্থা তার জন্য আশির্বাদ স্বরূপ ছিল।
কোলকাতায় শিক্ষাজীবন
১৮৭৬ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কোলকাতা ফিরে অ্যালবার্ট স্কুলে আবারও পড়াশোনা শুরু করেন। সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করে ভর্তি হোন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটান কলেজে। ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি সমান আগ্রহ লাভ করেন। এই সময় তিনি পার্শ্ববর্তী প্রেসিডেন্সী কলেজেও ‘বাইরের ছাত্র’ হিসেবে অধ্যাপকদের বক্তৃতা শুৃনতে যেতেন। সেখানেই তিনি প্রথম রসায়নে নিজের আগ্রহ টের পান। প্রেসিডেন্সি কলেজে সেখানকার রসায়নের অধ্যাপক (পরে স্যার) আলেকজান্ডার পেডলার ল্যাবরেটরি ছাড়াও শ্রেণিকক্ষেও বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাতেন। কিন্তু এতে প্রফুল্ল চন্দ্রের মনের আশা পূরণ হতো না। কাজে একজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তার বাড়িতে একটি ‘ল্যাবরেটিরী’ স্থাপন করে সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা করতেন। একদিন অক্সি-হাইড্রোজেন-ব্লো-পাইপ নিয়ে কাজ করার সময় দুর্ঘটনা হলেও তারা কেউ সেই দুর্ঘটনায় পড়েননি। এভাবে রসায়নের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তেই থাকে। কাজে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রেসিডেন্সী কলেজে বিএসসি ক্লাশে ভর্তি হোন। রাঢুলীতে থাকার সময় ল্যাটিন ও ফরাসী ভাষা তার আয়ত্ব হয়। কলেজ পাঠ্য হিসেবে সংস্কৃতভাষাও তিনি শিখে ফেলেন। এর মধ্যে তিনি জানতে পারেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বিলাতে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এই বৃত্তি পেতে হলে ল্যাটিন, গ্রীক অথবা সংস্কৃত, ফরাসী অথবা জার্মান ভাষা জানা আবশ্যক ছিল। যেহেতু এই কয়টি ভাষা তিনি জানেন তাই তিনি এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলে মনস্থির করেন এবং গোপনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কারণ তিনি জানতেন সফল না হলে “সহপাঠীরা তাকে এই জন্য উপহাস করিবে’। কিন্তু সেই বছর বোম্বাই নগরীর জনৈক পার্শী ও প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিলাতে শিক্ষা লাভের সুযোগ পেলেন। পিতা ও মাতার সম্মতি প্রফুল্ল চন্দ্র পি কে রায়ের কনিষ্ঠ সহোদর দ্বারকানাথ রায়ের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া নামের জাহাজে করে ৩৩ দিন পর ১৮৮২ সালের জানুয়ারি মাসে বিলাতে হাজির হলেন। জাহাজঘাট থেকে লন্ডনে পৌছালে সেখানে অবস্থানরত জগদীশ চন্দ্র বসু (পরে আচার্য ও স্যার) ও সত্যরঞ্জন দাশ তাদের অভ্যর্থনা জানান ও থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে প্রফুল্ল চন্দ্র তার জন্য নির্ধারিত এডিনবার্গ কলেজে চলে গেলেন।
বিলাতের শিক্ষাজীবন
বিলাতে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং প্রাণিবিদ্যা নিয়ে শীতকালীন সেশনে ক্লাশ শুরু করেন এাং অচিরেই বুঝতে পারেন রসায়নেই তার স্বাচ্ছন্দ এবং সেটাতেই তার আগ্রহ। তত্ত্বীয় ক্লাশ ও ব্যবহারিক ক্লাশে তিনি যখন খুবই মনোযোগ দিয়ে ব্রতী ছিলেন তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা তিনি শুনতে পান। ১৮৮৫ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোসণব করে “সিপাহী বিদ্রোহের ফূর্বে ও পরে ভারতের অবস্থা” শীর্ষক সর্বোৎকৃষ্ট রচনার জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। বিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি স্বত্ত্বেও প্রফুল্ল চন্দ্র এই কাজে মনোনিবেশ করিলেন। এই রচনা লেখার জন্য বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে মোটা মোটা ইতিহাসের বই সংগ্রহ করেন। এই সময় ইতিহাসের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষন তৈরি হয়। কিন্তু তিনি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পারেননি্ কিন্তু প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও অন্য একজনের রচনাকে আদর্শের কাছাকাছ (Proxime accessment) হিসেবে গণ্য করা হয়। সে সময় ‘ফটোকপি’ করার ব্যবস্থা ছিল না। কাজে আয়োজকদের কাছে আবেদন করে প্রফুল্ল চন্দ্র তার রচনাটি সংগ্রহ করে সেটি পুস্তিকাকারে প্রকাশ করেন। এই রচনার জন্য গবেষণা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন একটি বিষয়ে নিজের ধারণা প্রকাশের ব্যপারে তার দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি নিজেকে ডিএসসি বা ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রীর জন্য তৈরি করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি ডিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। তার পড়াশোনার কৃতিত্বের জন্য তিনি হোপ প্রাইজ পান যা দিয়ে তিনি আরও এক বছর এডিনবাগে গবেষণা করার সুযোগ পেলেন। এছাড়া গিলক্রাইস্ট কতৃপক্ষও মেয়াদ শেষে তাকে ৫০ পাউন্ড পুরস্কার প্রদান করে। তিনি কলেজের কেমিক্যাল সোসাইটির প্রথম সহ-সভাপতি হলেন। হোপ প্রাইজের অর্থে তিনি আরও কিছুদিন গবেষণা করে ১৮৮৮ সালের শীত সেমিস্টার শেষে দেশে ফেরার জন্য মনস্থির করেন। দেশে ফেরার আগে তিনি একজন মুসলমান বন্ধুর সঙ্গে পদব্রজে ইংলন্ডের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন। এছাড়া ইংলন্ড হতে সরাসরি জাহাজে ফেরার পরিবর্তে তিনি ট্রেনে করে ইউরোপের বিভিন্ন শহর ঘুরে ১৮৮৮ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় ফিরে আসেন।
কর্মজীবন ও গবেষণা
ইংলন্ডে থেকে ফেরার কিছুকাল আগে ভারতবর্ষে চাকরির জন্য প্রফুল্র চন্দ্র রায় (ইতোমধ্যে তিনি পি সি রায় নামে পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন) বেশ কয়েকজন কর্তা ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু প্রশংসা ও পরিচিতি পত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু দেশে ফিরে তাতে তেমন কোন লাভ হলো না। ১৮৮৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত পি সি রায়ের কোন চাকরি হলো না। ‘চুল ব্যতিরেকে স্যামসনের যে অবস্থা, ল্যাবরেটরী ছাড়া” পি সি রায়েরও একই দশা হলো। এই সময় তিনি জৈব রসায়ন নিয়ে পড়ামোনার পাশাপাশি উদ্ভিদ বিজ্ঞানে কাজ করে সময় কাটাতেন এাং প্রায়শ জগদীশ চন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রীর আতিথ্য গ্রহণ করতেন। অবশেষে প্রেসিডেন্সী কলেজে রসায়নের একটি অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি হলো এবং সেটির বিপরীতে মাসিক ২৫০ টাকা বেতনে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সে পদে যোগদান করেন। কাজে যোগদানের পর তিনি রসায়ন বিভাগের একতলা ভবনে কাজ শুরু করেন। এই ভবনটি পূর্বে হেয়ার স্কুলের অংশ ছিল। ১৮৭০ সালে যশোর থেকে কলকাতায় এসে বালক ফুলু এই স্কুলের যে বেঞ্চে বসতেন, কী আশ্চর্য ঠিক একই জায়গাতে সহকারী অধ্যাপকের বসার স্থান নির্ধারিত হয়।
পড়ানো শুরু করার পর পরই তিনি এক্সপেরিমেন্টাল রসায়নে জোর দেন। রসায়ন পড়ানোর ব্যাপারটিকে তিনি পরীক্ষণের মাধ্যমে আনন্দময় ও কৌতুহলময় করে গড়ে তোলেন। প্রথম তিনমাস তিনি সহকারির কাজ থেকেও শ্রেণি কক্ষে ও পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ কাজ রীতিমতো মহড়া দিতে তৈরি হতেন। এছাড়া শ্রেণি কক্ষে নিজের লেকচারও ‘কাগজে লিখিয়া লইতেন”। হোপ প্রাইজের সময় তিনি বিলাতে অধ্যাপকদের সহায়তা করে এসেছেন। কাজে অধ্যাপনায় তাহার তেমন সমস্যা হলো না। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের পর পূজার ছুটির সময় আলেকজান্ডার পেডলার তিনমাসের জন্য বিলাতে গেরে রসায়ন বিভাগের দায়িত্ব পি সি রায়ের ওপর বর্তায়। ফলে কোন কোন সময় তিনি পরপর তিনটি ক্লাস নিতেন, কিন্তু কখনোই তিনি হয়রান বা হতাশ হোননি। বরং এতে তার কাজের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেল।
রসায়নের ক্লাসে তিনি অনেক কিছু হাতে কলমে করে দেখাতেন। ছাত্রদের সামনে এক টুকরো হাড় হাতে নিয়ে বুনসেন বার্নারে পুড়িয়ে মুখে পুরে দিয়ে ছাত্রদের শেখালেন, এটা ক্যালসিয়াম ফসফেট। এছাড়া আর কিছুই নয়। সেটা কোন প্রাণীর হাড় তা-ও আর চেনার উপায় রইল না।
১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন। যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। ইউরোপীয় বিজ্ঞানীগণ তাঁকে মাস্টার অব নাইট্রাইটস আখ্যায় ভূষিত করেন। এ ছাড়া পারদ-সংক্রান্ত ১১টি মিশ্র ধাতু আবিষ্কার করে তিনি রসায়নজগতে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। গবাদি পশুর হাড় পুড়িয়ে তাতে সালফিউরিক এসিড যোগ করে তিনি সুপার ফসফেট অব লাইম তৈরি করেন।
১৮৮৯ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক ছিলেন।
এরপর ১৯১৬ সাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। বিজ্ঞান কলেজের দোতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোনের একটি কক্ষে তিনি থাকতেন। আসবাবপত্রের মধ্যে একটি খাটিয়া, দুটি চেয়ার, ছোট একটি খাবার টেবিল, একটি পড়ার টেবিল ও জামাকাপড় রাখার একটি সস্তা আলনা। পড়নে থাকত কম দামের মোটা খোটা ধুতি, চাদর, গেঞ্জি অথবা গায়ে একটি কোট। এক রাশ দাড়িগোঁফ মুখে লোকটির চুলে বোধকরি চিরুনি পড়েনি।সকালে মাত্র এক পয়সার নাস্তা।অন্যান্য খাবারদাবারও খুব সাদামাটা। খাদির জামা কাপড় পড়তেন। নিজেই সেগুলো কেঁচে পরিস্কার করতেন।অথচ তখন মাসিক আয় হাজার টাকার উপরে।
বিজ্ঞান কলেজে গবেষণার পাশাপাশি নিতে বিজ্ঞানীদের সংগঠিত করতে কাজ করেন। ১৯২৪ সালে ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি প্রতিস্ঠা হলে তিনি সেটির প্রতিস্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হোন। ১৯৩৭ সালে ৭৫ বছর বয়সে তিনি পালিত প্রফেসর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিপূর্ণ অবসর গ্রহণ করলেও তাঁকে এমিরিটাস অধ্যাপক (Emiritius Professor) হিসেবে রসায়নের গবেষণাকর্মের সঙ্গে যুক্ত রাখা হয়।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, নীলরতন ধর, পুলিন বিহারী সরকার, রসিকলাল দত্ত, মেঘনাদ সাহা, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বিজ্ঞানী কুদরত-ই খুদা, হেমেন্দ্র কুমার সেন, বিমান বিহারী দে, প্রিয়দা ভঞ্জন রায়, জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়, জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্র লাল দে, প্রফুল্ল কুমার বসু, বীরেশ চন্দ্র গুহ, অসীমা চ্যাটার্জি প্রমূখ।
উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা বিজ্ঞানী
প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ানোর সময় তিনি কয়েকটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করেন। এর মধ্যে একটি হরো রসায়নের শিক্ষার্থীদের রসায়নের পাশাপাশি আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন। তিনি আবিস্কার করলেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে কারণ তাদের একটি ‘চাকরি’ দরকার। সেটি না হলে যেন জজিয়তি করা যায় সেটিও তারা চিন্তা করে। এ সময় তিনি আরও লক্ষ করেন শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে মাঠে-ময়দানে কাজ কিংবা ব্যবসা করার আগ্রহ মোটেই নেই। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, “কেলেজ শিক্ষিত বাঙ্গালি যুবকেরা শেক্সপীয়রের বই হইতে মুখস্ত বলিতে পারিত এবং মিল ও স্পেন্সারও খুব দক্ষতার সঙ্গে আওড়াইতে পারিত, কিন্তু জীবন যুদ্ধে তাহারা পরাস্ত হইল”। কারণ কর্মকুশলী, পরিশ্রমী অবাঙ্গালিরা বিশেষ করে রাজপুতানার মরুভূমি হইতে আগত মাড়োয়ারীরা শুধু কলকাতা নয় সমগ্র বাঙ্গাল মুলুকে নিজেদের আসন ক্রমাগত স্থায়ী করে নিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং শিক্ষিত যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের জন্য তিনি নিজেই শিল্প প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। কারণ কেরানি বানানোর শিক্ষাতে তাঁরও প্রবল আপত্তি। “একটি সমগ্র জাতি মাত্র কেরানী বা মসীজীবী হইয়া টিকিতে পারে না; বাঙালি এতোদিন সেই ভ্রান্তির বশবর্তী হইয়া আসিয়াছে এবং তাহারই ফলে আজ সে সকল প্রকার জীবনোপায় ও কর্মক্ষেত্র হইতে বিতাড়িত। বৈদেশিকগণের তো কথাই নাই, ভারতের অন্যান্য প্রদেশসহ লোকের সহিতও জীবন সংগ্রামে আমরা প্রত্যহ হটিয়া যাইতেছি। বাঙালি যে নিজ বাসভূমে পরবাসী হইয়া দাঁড়াইয়াছে ইহা আর কবির খেদোক্তি নহে, রূঢ় নিদারুণ সত্য।”
এডিনবার্গে থাকাকালীন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল সোসাইটির সদস্য রূপে বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানা পরিদর্শন করে রাসায়নিক কারখানা তৈরির প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন তিনি। সেই জ্ঞান নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করতে, যাতে তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
১৮৯৩ সালে পি সি রায় নিজের ল্যাবরেটরিতে ব্রিটিশ কোম্পানি ফার্মাকোপিয়ার একটি ওষুধ তৈরির ব্যবস্থা করেন। এ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাত্র ৮০০ টাকা পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস। এটি শুরু হয় পি সি রায়ের ৯১ নং আপার সার্কুলার রোডের বাসভবনের পাশে। পরে ১৯০১ সালে কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। একই সঙ্গে এটি শেয়ার মার্কেটেও তালিকাভুক্ত হয়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এটিই কোন বাঙ্গালির প্রতিষ্ঠিত প্রথম কোন শিল্প-কারখানা্। এর মধ্যে তার বাড়ি নতুন খুলনা জেলার অন্তর্গত হয়। নিজ জেলা শহরেমানুষের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এ পি সি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও এ পি সি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (বর্তমানে খুলনা টেক্সটাইল মিলস নামে পরিচিত)। এ ছাড়াও ক্যালকাটা পটারি ওয়ার্কস, বেঙ্গল এনামেল ওয়ার্কস, ন্যাশনাল ট্যানারি ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠায় তিনিই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।
১৯০৬ সালে তিনি রাঢ়ুলি এবং এর আশপাশের গ্রামের মানুষকে জড়ো করে ৪১টি কৃষি ঋণদান সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে সমিতিগুলো নিয়ে রাঢ়ুলি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল অবিভক্ত বাংলায় তৃতীয় ব্যাংক।
১৯২৩ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ধর্মগোলা ও সমবায় ভান্ডার স্থাপনের পরামর্শ দেন। ১৯১৭ সালে বেঙ্গল কেমিক্যাল সমবায় সমিতি, ১৯১৮ সালে বঙ্গবাসী কলেজ কো-অপারেটিভ ষ্টোর এন্ড ক্যান্টিন, ১৯২১ বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি সহ অনেক সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।
রসায়ন শাস্ত্রে ভারতের গৌরব
বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে তিনিই খুঁজে বের করলেন রসায়ন শাস্ত্রে প্রাচীন ভারতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ধাতু সঙ্কর তৈরিতে ভারত যে পিছিয়ে ছিল না, চরক সংহিতা-সুশ্রুত সংহিতায় উল্লেখিত অস্ত্রোপচারের সূক্ষ্মাগ্র যন্ত্র যেমন স্ক্যালপোল বা ল্যানসেট তার প্রমাণ। ইস্পাত আবিস্কারের প্রথম কৃতিত্বও প্রাচীন ভারতের। প্রাচীন রসায়নে শুধু মিশর, সিরিয়া, চিন বা আরব নয় প্রাচীন ভাতরবর্ষও যে কতটা এগিয়ে ছিল,তা তুলে ধরতেই তিনি লিখলেন ‘দ্য হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’। এ বিষয়ে প্যারিসের বিখ্যাত বিজ্ঞানী মার্সিলিন বের্তেলোর সান্নিধ্য তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। এই কাজের জন্য তিনি সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি পালি ভাষাও শিখেছিলেন।
বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী
দেশপ্রেম তাকে ইউরোপে থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। আর বাংলা ভাষা ছিল তার অস্তিত্ব। ইংরেজি পঠন-পাঠনে অত্যন্ত বুৎপত্তি থাকার পরও তিনি তিনি ক্লাসে বাংলায় লেকচার দিতেন। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম পর্যায় থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হোন। ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তিনি বিপ্লবীদের অর্থ সাহায্য করেন। ১৯১৬ সালে কলকাতায় তিনিই প্রথমবারের জন্য মহাত্মা গান্ধীর জনসভার আয়োজন করেছিলেন। ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তরে স্যার পি সি রায়ের নাম লেখা ছিল ‘বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী’।
নিজে খুব শাদামাটা জীবন যাপন করতেন। তার বেতন থেকে মাত্র ৪০ টাকা নিজের জন্য রেখে তিনি বাকী অর্থে দরিদ্র ও বিপ্লবীদের সহায়তা দিতেন। ১৯১৯ সালে কলকাতার টাউন হলে রাউলাট বিলের বিরোধিতায় আয়োজিত জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য প্রয়োজন হলে বিজ্ঞানীকে টেস্ট টিউব ছেড়ে গবেষণাগারের বাইরে আসতে হবে। বিজ্ঞানের গবেষণা অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু স্বরাজের জন্য সংগ্রাম অপেক্ষা করতে পারে না।’
ভারতে ফেরার পর গান্ধীজীর সঙ্গে ১৯০১ সালে তার দেখা হয়। বন্ধুবর রাজনীতিবিদ গোপাল কৃষ্ণ গোখলে তাদের দুইজনকে পরিচয় করিয়ে দেন। এ নিয়ে নিজের আত্মজীবনীতে মহাত্মা গান্ধী লিখেছেন, “He (Gokhale) would introduce me to all the important people that called on him. Of these the one who stands foremost in my memory is Dr. (now Sir) P. C. Ray… This is how he introduced Dr Ray: ‘This is Prof. Ray, who having a monthly salary of Rs. 800, keeps just Rs. 40 for himself and devotes the balance to public purposes. He is not, and does not want to get, married.’ I see little difference between Dr. Ray as he is today and as he used to be then. His dress used to be nearly as simple as it is, with this difference of course that whereas it is Khadi now, it used to be Indian mill-cloth in those days.” (The Story of My Experiments with Truth, Mahatma Gandhi)। গান্ধীজির অনাড়ম্বরপূর্ন জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি নিজেকে কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন।
১৯২৫ সালে কোকনাদ কংগ্রেসের কনফারেন্সে সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতে কিছু সময় স্যার পি সি রায় সভাপতিত্ব করেন। একই সময় পাইকগাছা উপজেলার কাটিপাড়ায় ‘ভারত সেবাশ্রম’ নামে একটা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে নিজ জন্মভূমির এলাকার মানুষকে চরকায় সুতো কাটার মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। বিজ্ঞান কলেজের বারান্দায় একটা চরকা স্থাপন করে তিনি নিজেও সুতা কাটতেন। ১৯৩০ সালে কংগ্রেসের লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের খুলনা জেলার স্থান হিসেবে পি সি রায় নিজ গ্রাম রাঢ়ুলিকে নির্বাচন করেন।
অনারম্বর জীবনের অবসান
ব্রিটিশ সরকার প্রথমে ১৯১২ সালে তাকে সিআইই (CIE) এবং ১৯১৯ সালে নাইটহুড প্রদান করেন। পিসি রায় হয়ে যান স্যার পিসি রায়। শিক্ষকতা তার অবদানের জন্য এরই মধ্যে তিনি সাধারন্যে আচার্য হিসেবেই পরিচিত হয়ে উঠেন।
লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন। ১৯০২ তিনি ক্যেমিক্যাল সোসাইটির ফেলো(এফসিএস), ১৯৩৫ সালে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (এফএনআই) ও ১৯৪৩ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্সের ফেলো (এফআইএসিএস) মনোনীত হোন।
১৯৪৪ সালের ১৬ জুন তিনি মারা যান।