উদ্ভাবনের কলকব্জা ৩: দেখতে হবে আশে পাশে

Spread the love

প্রথম পর্ব- উদ্ভাবন বৈষম্য???

দ্বিতীয় পর্ব : বাক্সের বাইরে – ব্যাক টু ব্যাক লেটার অব ক্রেডিট

আমরা যখন ছোট ছিলাম, মানে প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে, থাকতাম চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায়। নামাজ পড়তাম আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে। রোজার সময় তারাবী পড়তে যাওয়াও একটা বিশাল ব্যাপার ছিল।তো, মসজিদে তারাবীতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হতো শুরু থেকে মেষ পর্যন্ত। আমরা খতম তারাবী বলতাম। তো প্রথম দিন শুরু হয়ে ২৭ রোজার রাতে শেষ হতো। আমাদের মধ্যে যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তেন তারা এই সময়টাতে কোথাও যেতে চাইতেন না। মিস হযে যাবে বলে। আমার আশে পাশে অবশ্য রোজার মাসে মুভ করেন এমন লোকজন বেশি ছিল না।
কিন্ত এটা জানা কথা যে, রোজর মাসে মুভমেন্ট বন্ধ রাখা যায় না এমন সার্ভিসও তো আছে। বিশেষ করে বাহিনীগুলোতে। দেখাগেল তারাবীর কারণে অনেকেই সেই সময় মুভমেন্টে একটু দ্বিধান্বিত থাকতো।  সেই কারণে গেল শতকের আশির দশকে প্রথমে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতাধীন মসজিদগুলোতে তারাবী পড়ার একই নিয়ম চালু করা হল। মানে প্রথম ৬ দিন দেড়পারা করে ৯ পারা এবং পরের ২১ দিন প্রতিদিন এক পারা করে পড়া হবে। ব্যাস, এক ক্যান্টনমেন্ট থেকে অন্য ক্যান্টনমেন্টে মুভমেন্টে খতম তারবী জনিত কোন সমস্যা হবে না।
কয়েক বছর এই নিয়মটাই গ্রহণ করে ইসলামী ফাউন্ডেশন। এখন দেশের প্রায় ৮০-৮৫% শতাংশ মসজিদে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। কাজে রোজার মধ্যে আপনি এক শহর থেকে অন্য শহরে গেলেও তারাবীর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবেন।

এই উদাহরণটি আসলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কত সহজে একটা জটিল সমস্যার সমাধান করা যায়। এবং এর জন্য কোন স্টার্টআপ লাগে না বা কোন এপও বানাতে হয় না।

বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি-

সমস্যা : বিভিন্ন মসজিদে বিভিন্নভাবে খতম তারাবী পড়া। ফলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গেলে খতমে তারবীর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারার সম্ভাবনা।

সমাধানের পথ: বেশিরভাগ মুসল্লী চান যে ২৭ রোজা তথা পবিত্র শবে কদরের রাতে কোরআন খতম হোক। অর্থাৎ ২৭ দিনে ৩০ পারা পড়তে হবে। সমানভাবে ভাগ করলে সেটির হিসাব রাখা কঠিন হবে, বিশেষ করে, পরস্পর অসংযুক্ত, কেসের ব্যাপারে। সবাই একমত হবেনও না।

সমাধান: প্রথম ৬ দিন প্রতিদিন দেড়পারা এবং পরবর্তী ২১ দিন একপারা করে পড়ে ২৭ রোজাতে শেষ করা।

উদ্ভাবনের ব্যাপারটাই আসলে সেরকম। একবার হয়ে যাওয়ার পর মনে হয় কত সহজ। আসলেই ব্যাপারটা সহজ। যে কোন কঠিন সমস্যার একটা সহজ সমাধান থাকার কথা। ইতিহাস তাই বলে।
KeplerMarsটলেমি যখন  গ্রহের গতিপথ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতেন তখন ভাল বিপদেই পড়তেন। কারণ তিনি জানতেন গ্রহগুলোর গতিপথ হলো বৃত্তাকার। কিন্তু যখন ব্যাখ্যা করতে পারতেন না তখন তিনি নতুন বৃত্ত আমদানীকরতেন। এরকম করতে করতে কোন কোন গ্রহের কক্ষপথ ব্যাখ্যা করার জন্য ওনার মাত্র ৩৪টি বৃত্তের প্রয়োজন হতো!
কেপলার এসে দেখালেন, বৃত্তের জায়গায় উপবৃত্ত হলেই আর এত প্যাচাল লাগে না। এক উপবৃত্ততেই কাজ হয়ে যায। সিম্পল!

উদ্ভাবনের জন্য তাই সহজভাবে চিন্তা করতে হয়। কারন যা সহজ তাই সুন্দর।

সবার জীবন পাই-এর মত সুন্দর হোক।

 

পরের পর্ব :উদ্ভাবনের কল-কব্জা-৪ : গোল্লাপূরণের পরীক্ষা

 

Leave a Reply