গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৬: নট অল পিপল, রাইট পিপল

Spread the love

গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৫: খুঁজো তোমার গ্রোথ হ্যাক!

মার্কেটিয়ারদের পুরানো চিন্তা হলো দ্রুত রাস্তায় বের হয়ে পড়া এবং যতো বেশিজনকে জানানো যায় ততোজনকে জানানোর বন্দোবস্ত করা। প্রোডাক্ট লঞ্চিং হয় বিশাল কোন হোটেলে, খবরের কাগজে থাকে পিআর, কখনো কখনো প্রথম আলো- ডেইলিস্টারের মলাট পাতার বিজ্ঞাপন – কী নয়! উদ্দেশ্য মহৎ – যাতে এটি একটি বাজওয়ার্ডে পরিণত হয়, বিপুল সংখ্যক লোক দেখে এবং কাস্টোমারে পরিণত হয়। মার্কেটিয়ারদের বেশি দোষও দেওয়া যায় না কারণ ক্লায়েন্টদের এই চাহিদা থাকে।

কিন্ত আসলে কী অনেক লাভ হয়? বিশেষ করে টেকি সার্ভিসের বেলায়? হয় না। হয় না বলেই গ্রোথহ্যাকারদের ধান্ধাটা হয় ভিন্ন। তাদের প্রথম উদ্দেশ্যই থাকে আর্লি এডাপ্টারদের খুঁজে বের করা, প্রথম ১০০ জন! যারা কেবল ব্যবহারকারী হবে না, একই সঙ্গে বিলবোর্ডও হবে! এর মানে তারা শুধু লয়্যাল নয়, ফ্যানাটিক ইউজারও বটে। কাজে গ্রোথহ্যাকারের সকল কাজের লক্ষ্য হবে এই লোকগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে পৌছানো।

ওরা যদি টেকি গিক হয় তাহলে ওরা প্রতিদিন টেকক্রান্চ বা হ্যাকার নিউজ বা রেডিট খুলে বসে থাকে অথবা বছরজৃড়ে বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগ দেয়।

তারা যদি ফ্যাশনসচেতন হয় তাহলে তারা নকশা পড়ে, সাজগোজ ডট কমে ঢু মারে, সাজুগুজু ফেবু গ্রুপে আড্ডা দেয়।

যদি তারা তোমার মতো উদ্যোক্তা হয় তাহলে তারা “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেবো” গ্রুপের মেম্বার হয়, স্টার্টআপ হাওকাওতে যায় আর কর্মশালা খুঁজে বেড়ায় যেখানে তার জন্য রসদ আছে।

কাজে তাদের মনোযোগ আকর্ষন করে তাদেরকে কাস্টোমার বানাতে হবে।

ট্রাভিস কালানিক আর জেরাট ক্যাম্পের উবারের কথা ধরা যাক। দীর্ঘদিন ধরে তারা অস্টিনে হওয়া এসএক্সএসডব্লিউ কনফারেন্সের লোকেদের উবার সার্ভিস দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে হাইলি টেকি, তরুন কিন্তু টাকা পয়সাওয়ালা, ক্যাব খুঁজে পায় না এমন লোকেদের উবার সুযোগ দিয়েছে তাদের ফ্রি রাইডের। এরা সবাই পটেনশিয়াল রাইডার। এক বছর দিয়েছে বারবিকিউ-এর অফার। ঠিক ঐ লোকগুলোকে তারা এমনভাবে খুঁজে নিয়েছে যাতে তাদের সেবাটাও ব্যবহার হলো আবার উদ্দিস্ট লোকের কাছেও পৌছানো গেল। বিজ্ঞাপন-বিলবোর্ডে টাকা খরচ না করে উবার বছরের এই এক সপ্তাহ তাদের সবাইকে একসঙ্গে পেয়েছে এবং তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে উবার এটিই বা করলো কেন? করলো কারণ তারা দেখেছে কয়েকবছর আগে টুইটারও একই কাজ করেছে!

এভাবে চিন্তা করাটাই জলো গ্রোথ হ্যাকারের কাজ। সঠিক লোকদের কাছে পৌঁছে তাদেরকে নিজের প্রোডাক্টের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা।

একটা সম্পূরক প্রশ্ন হতে পারে “সঠিক লোকদের আমি কোথায় খুঁজে পাবো?” এই প্রশ্নের উত্তর যদি তোমার কাছে সঙ্গে সঙ্গে অভিয়াস না হয় তাহলে তোমার ঐ প্রোডাক্ট মার্কেটিং করাই ঠিক হবে না।

শুরু করা এবং প্রথম টার্গেটের কাছে পৌঁছানোর জন্য তোমার অনেক অপশন আছে-

১. তোমার পটেনশিয়াল কাস্টোমাররা নিয়মিত ভিজিট করে এমন সাইট খুঁজে বের করে সেটির লেখকদের একটা ছোট্ট ই-মেইল ‘পিচ’ করা। ই-মেইলে থাকবে নিজেদের প্রোডাক্টের বর্ণনা এবং কী কারণে সেটি নিয়ে লেখা উচিৎ তার একটা বক্তব্য।

২.কোরা, হ্যাকারনিউজ কিংবা রেডিটে নিজেই একটা কিছু আপলোড করা যেখানে প্রোডাক্ট সম্পর্কে একটা কিছু থাকবে।

৩. নিজেই পপুলার বিষয়ে ব্লগ লেখা শুরু করতে পার। তাতে তোমার ব্লগের ভিজিটর বাড়বে এবং অপ্রত্যক্ষ কিছু মার্কেটিং-এর সুযোগ থাকবে।

৪. নিজের প্রোডাক্টটা কিক-স্টার্টারে দেওয়া যায়। তারপর যারা প্রথম কাস্টোমার হবে তাদেরকে ‘ঘুষ’ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যায়।

৫. হেল্প এ রিপোর্টারের মতো সার্ভিস থেকে এমন একজন রিপোর্টারকে খুঁজে বের করা যিনি তোমার প্রোডাক্ট সম্পর্ক লিখতে রাজী হবেন

৬. একজন একজন পটেনশিয়াল কাস্টোমারকে খুঁজে বের করে ওয়ান-টু-ওয়ান এপ্রোচ করে তাকে কাস্টোমার বানাতে পারো।
ওপরের ছয়টির মধ্যে একটি/দুইটিকে কাজে লাগোনো একটা ই-মেইল করার মতোই সহজ। যদি তোমার প্রোডাক্ট আসলেই “ভাল” হয় তাহলে সেটির ব্যাপারে কেউ না কেউ আগ্রহী হবে। মোদ্দাকথা হলো এ থেকে ইনিশিয়াল কাস্টোমার ধরার কাজটা তোমাকে করতে হবে।

যদি কোন ‘স্টান্টবাজি’ করতে পারো তাহলে সেটাও কাজের হতে পারে।

প্যাট্রিক ভাস্কোভিট, প্রথম দিককার একজন গ্রোথ হ্যাকারের বক্তব্য হলো প্রোডাক্ট যদি ব্যাপক উদ্ভাবনী হয় তাহলে সেটা খুব সহজেই একটা উদ্ভাবনী চ্যানেল পেয়ে যায়।

তখন অনেক কিছু করা যায়। যেমন –

১. মেইলবক্সের মতো তুমি শুরুতে তোমার সার্ভিস কেবল “আমন্ত্রিতদের জন্য” রাখতে পারো।

২. রেডিট যেমন শুরুতে করেছিল সেরকম তুমিও প্রচুর লাইক কিনতে পারো, নিজেই ফেইক একাউন্ট তৈরি করতে পারো যাতে তোমার প্রোডাক্ট ‘জনপ্রিয়’ দেখায়। ঝামেলা হলো লোকে যদি একবার বুজে ফেলে তাহলে খবর আছে।

৩. পেপাল যেমন ই-বের কাস্টোমারদের মধ্যে নিজের প্রথম চাংকটা খুঁজে নিয়েছে সেরকম তুমিও একটা কোন সার্ভিসের সঙ্গে লেগে থাকতে পারো। মেধা, শ্রম সবই সেখানে দাও।

৪. একটা ছোট্ট গ্রুপের জন্য প্রথমে প্রোডাক্টটা লঞ্চ করতে পারো। তারপর গ্রুপ গ্রুপ ধরে আগাতে পারো যতক্ষণ না সেটা ভাইরাল হচ্ছে। ফেসবুক যেমন কেবল শুরুতে হার্বাডের জন্য ছিল- তারপর আমেরিকার কলেজগুরোর জন্য ছাড়া হয়েছে এবং সবশেষ সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

৫. খুবই কুল কিছু ইভেন্টের আয়োজন করে প্রথমদিককার কাস্টোমারদের ধরতে পারো। মাইস্পেস, ইয়েল্প এবি ইউডেমি একাজটা করেছিল।

৬. তোমার প্রোডাক্ট যদি এমন হয় যে, লোকে সেটার জন্য বসে আছে ঘাপটি মেরে তাহলে তুমি সেটা সরাসরি এপের বাজারে ছেড়ে দিতে পারো। ইনস্টাগ্রামের প্রথম দিনের ডাউনলোড মাত্র ২৫ হাজার!

৭. ইনফ্লুয়েন্সিয়াল এডভাইজার ও ইনভেস্টরদের তাদের চ্যালাচামুন্ডাসহ দাওয়াত দিয়ে একটা ইভেন্ট করতে পারো। ওই ইভেন্টের লক্ষ্য কিন্তু ইনভেস্টরের টাকা বা এডভাইজরের উপদেশ নয়। এর মাধ্যমে ওদের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু লোককে ডেকে আনা যাদের মাধ্যমে প্রোডাক্টের খবর অল্পকিছু লোকের কাছে পৌঁছানো যায়। এবাউট ডট মি এটা শুরু করেছে এখন অনেকেই এ পথ নিচ্ছে। আমাদের দেশেও এমন কাজ হচ্ছে। বেসিসের অডিটোরিয়ামে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান করে প্রোডাক্ট লঞ্চ করা হচ্ছে।

৮. অ্যামাজনের স্মাইল অ্যামাজনের মতো একটা কিছু করা যেতে পারে।

এরকম সব আউটরিচ প্রোগ্রামের ডিচাইন ও কার্যক্রম খুবই স্পেসিফিক লক্ষ্য নিয়ে করতে হবে। কোনভাবেই ব্যাপারটা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মতো হবে না। এখানে ফলোআপের ব্যাপারটাই হবে মুখ্য। যতো লিড তৈরি হবে চেষ্টা করতে জবে তাদের কাস্টোমার বানানোর। ব্যাপারটা হবে ট্রয়ের ঘোড়ার মতো। এমনকিছু যা শুরুতে ঠিক মার্কেটিং মনে হবে না কিন্তু এর মাধ্যমে তোমার কোম্পানি পেয়ে যাবে কাঙ্খিত একসেস যাতে তোমার গ্রাহক বাড়বে, সাইন-আপ হবে এবং তুমি আগাতে থাকবে।

পরের পর্ব – লেটস গেট টেকনিক্যাল।

 

[এতদূর পর্যন্ত শেয়ার করে এসে মনে হচ্ছে সরাসরি বই থেকে না  দিয়ে একটু কাস্টোমাইজেশন মনে হয় করতে হবে। আর একটা ঝামেলাও হচ্ছে মনে হয় সেটা হলো উদাহরণগুলো পাঠক বুজছে কিনা কারণ এগুলোর সবই কিন্তু সিলিকন ভ্যালির। অনেকেই সেটা জানে না। আবার সেটার বর্ণণা যোগ করতে হলে লেখাটা স্লো হয়ে যাবে। ভালই ডিলেমা। এনি সাজেশন?]

Leave a Reply