উদ্ভাবনের কল-কব্জা ৫: আমার রাস্তা ঠিক কর

Spread the love

উদ্ভাবনের কল-কব্জা-৪ : গোল্লাপূরণের পরীক্ষা

fix2ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যার চমৎকার সমাধান করা যেতে পারে। আজকের উদাহরণটির প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ নয়, যুক্তবাজ্য। ব্রিটিশদের কাছ থেকেই আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। কাজে উদ্ভাবনের এই নজিরটি আমাদের কাজে লাগতেও পারে।
যেকোন স্থানীয় পরিষদের (ইউনিয়ন পরিষদ, মিউনিপ্যালিটি কিংবা সিটি কর্পোরেশন) সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখা, নিরাপদ রাখা। এই জন্য তৈরি হয় রাস্তা-ঘাট, নদীর ঘাট, বাস স্টেশন কিংবা পাবলিক টয়লেট। এগুলোকে ঠিক রাখা স্থানীয় সরকারের বড় কাজ, কঠিনও বটে। একটা বড় কারণ হল লোকবল। এই সব প্রতিষ্ঠানের লোকবলের সংখ্যা বের করার একটা থাম্বরুল আছে। ধরা হয় মাত্র ১০% সুবিধাদি নিয়মিত নজরদারিতে রাখা দরকার। সেভাবে লোকবল হিসাব করে একটা প্রতিষ্ঠান গড়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই সেটা ঠিক থাকে না। তখন নানান সমস্য দেখা দেয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় কোন একটি বিশেষ সমস্যা সম্পর্কে স্থানীয় সরকারের অবহিত হওয়া। কর্পোরেশনের লোকের পক্ষে আনাচে কানাচের খবর বের করা কিন্তু সম্ভব হয় না।

এরকম একটা সমস্যার সমাধান করা হয়েছে জনগণকে চোখ বানিয়ে। যুক্তরাজ্যে গড়ে উঠেছে “ফিক্স মাই স্ত্রীট” নামের একটি প্ল্যাটফরম। এটি একটি ইন্ট্যারেকটিভ ওয়েবসাইট যেখানে ব্রিটেনের যে কেও তার নিজের এলাকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে রিপোর্ট করতে পারে। রাস্তায় জলাবদ্ধতা হয়েছে, ট্যাপের পানি পড়ে যাচ্ছে, পাবলিক টয়লেটের ছিটকিন কাজ করছে না, ময়লা সরানো হচ্ছে না দুইদিন ধরে ইত্যাদি যে কোন বিষয় এই প্ল্যাটফর্মে যোগ করা যায়। শুধু যে ছবি বা লেখা যায় তা নয়, গুগল ম্যাপে জায়গাটা চিহ্নিত করারও সুযোগ রয়েছে।
কেও একজন এরকম কোন সমস্যা আপলোড করার পর সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত সেটার ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ নেয়। এবং আসলেই নেয়।

fixstreet1টম স্টেইনবার্গ মাইসোসাইটি নামে একটা প্রতিষ্ঠান চালান। সেই টমই ২০০৭ সালে ইউকে-তে এই সাইটটা প্রতিষ্ঠা করে। আগে পুরা সময়ের পরিসংখ্যান দিত এখন আগের একমাসের টা দেয়। গত এক সপ্তাহে তিন হাজারের বেশি রিপোর্ট হয়েছে। গত এক মাসে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি সমস্যার সমাধান হয়েছে। আর এই পর্যন্ত সাড়ে ৬ লক্ষের বেশি রিপোর্টের ব্যাপারে আপডেট পাওয়া গেছে।

সামান্য একটা মোবাইল ক্যামেরা একটি স্থানীয় সরকার পরিষদকে কতোটা জবাবদিহীতার আওতায় আনতে পারে এ হলো তার একটি দৃষ্টান্ত। একন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও অনুরূপ সাইট তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষন করলে আমরা দেখবো এখানে উদ্ভাবনটা হয়েছে জানানো মাধ্যমে। শুরুর দিকে মিডিয়াগুলো সাহায্য করতো। রিপোর্ট করতো- রিপোর্ট করার ১৫ দিন পরেও কিছু হয়নি।

টমের মাই সোসাইটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে – বেশিরভাগ মানুষ আসলে জানে না কোন সমস্যার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে বলতে হবে। তো, সাইটের বৈশিষ্ট্য হল সেটা জানার দরকারও নাই। ঠিকমত জায়গাটা লোকেট করতে পারলে ব্যাকএন্ড এটা ঠিক করে ফেলে। তারপর তারা রিপোর্টটা সংশ্লিষ্ট পরিষদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে দেয়। এই জন্য অবশ্য ওদের সাইটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিষদের একটা চুক্তি হয়। ফলে, ঐ পরিষদের পক্ষে ব্যাপারটা হানা সম্ভব হয়। (ব্রিটিশদেরও আমাদের মত কে কোন ওয়ার্ড এটা কেবল ইলেকশন আগের রাতে জানতে পারে)।

আমি একটু আগে (২৭ জুন, রাত ১০.২৫ মিনিটে) সাইটে ঢুকে দেকলাম তিনমিনিটের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একটা সমস্যার আপডেট দিয়েছে!

সমস্যা সমাধানের সহজ চিন্তা করলেই উদ্ভাবনটা বেরিয়ে আসে। সমস্যা সমাধানের কথা ভাবলেই উদ্ভাবন হবে।কেবল উদ্ভাবনের কথা ভাবলেই উদ্ভাবন হয় না।

এরম একটি সহজ সমাধান আমাদের দেশেও হয়েছে অনেক আগে। সেটাও শেয়ারিং ইনফরমেশনের একটি চমৎকার উদাহরণ। সেটি থাকবে অন্য কোন পর্বে।

সবার জবন পাই-এর মত সুন্দর হোক।

 

 

 

 

Leave a Reply