ক্যারিয়ার আর ক্যারিয়ার মেলা!!!

Spread the love

teamআমি পাস করি ১৯৯১ সালে। পকেটে এন-সংখ্যক বায়োডাটা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। সেসময় সিভি/রিজিউমে এসবের কিছুই বুঝতাম না। নীলক্ষেত থেকে টাইপ করিয়ে একটা জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করেছিলাম। চাকরির খবর জানার আমাদের কাছে মাধ্যম ছিল মাত্র দুইটা – খবরের কাগজ আর যে অফিস নেবে সে অফিসের নোটিশ বোর্ড। নোটিশ বোর্ড দেখার জন্য কয়েকদিন পর পর মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন অফিসে ঢু মারতাম। কোথাও তেমন একটা সুবিধা করতে পারতাম না। মাঝে মধ্যে দুই একটা অফিসে দরখাস্ত দিতাম। দরখাস্ত দেওয়াতেও হাঙ্গাম কম নয়। প্রথমে ঐ অফিসে গিয়ে পদের নাম ইত্যাদি জানা লাগতো। তারপর কাছাকাছি টিনশেড দেওয়া টাইপিং এলাকায় গিয়ে দরখাস্ত টাইপ করানো লাগতো। তারপর সেটা জমা দেওয়া।

এটি মাত্র ২৫ বছর আগের ঘটনা।

এখন কিন্তু দিন পাল্টেছে। এখন আর আমাদের মত রোদে ঘুরে চাকরির পেছনে দৌড়াতে হয় না (যারা কেবল বিসিএস দেন তারা আলাদা)। এখন আছে ফেসবুক নোটিফিকেশন, এসএমএস এলার্ট, জব পোর্টাল এবং জব বা ক্যারিয়ার ফেয়ার।

ফেয়ারগুলোতে কোম্পানিগুলোই হাজির হয় তাদের চাহদিা নিয়ে। সেখানে দুই ধরণের কর্মপ্রত্যাশীরাই আসে। একদলের নগদ চাকরি দরকার। আর একদল আগামীতে কীপদে লোকজন নেওয়া হবে সে খবর নিতে আসে।

গতকাল ২৭ এপ্রিল গার্লস ইন আইসিটি প্রোগ্রামের ওপেন হাউস ডে-তে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন বড় কর্তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন ঠিক যেমনটা চান তেমনটা লোক পাচ্ছেন না!!! একই কথা শুনে এসেছি কয়েকটা কলসেন্টারেও। ওরা বরং পারটটাইমারও খুঁজছে। কিন্তু সেভাবে পাচ্ছে না।  অথচ আমাদের পাসকরা গ্র্যাজুয়েটদের প্রায় ৪৭%-এই কোন কাজ পাচ্ছে না। বৈপরীত্যটা কোথায়?

ক্যারিয়ার ফেয়ার এটাও জানার একটা জায়গা। এই যেমন আগামি ২৯-৩০ তারিখে ঢাকার গ্রীনরোডে একটা ক্যারিয়ার ফেয়ার হচ্ছে। এটার আয়োজক ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক। সহযোগিতা করছে চাকরি ডট কম নামের একটা অনলাইন জব পোর্টাল। প্রায় গোটা বিশেক কোম্পানি সেখানে সিভি সংগ্রহ করবে সুনির্দিষ্ট পদের বিপরীতে। এর মধ্যে অনেকেই অনলাইনে আবেদন করছে। বাকীরাও করতে পারে। এখন ঐ ক্যারিয়ার ফেয়ারে যে কোম্পানিগুলো থাকবে ওরা বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিত্বকারী। সেখানে যারা থাকবে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কর্মবাজারের একটা খবর পাওয়া যাবে। এই খবরটা দরকার।

আমার গত দুই সপ্তাহের অভিজ্ঞতা হলো অনেকেই আসলে কতো হাজার রকমের চাকরি আছে তার খবর রাখে না। তাদের কাছে জগতে মাত্র কযেকটা পদের চাকরি।

আমি কযেকটা উদাহরণ দেই। একটা পত্রিকা অফিসের প্রাণ হল সাংবাদিকরা। কিন্তু কেবল সাংবাদিকরাই কী পত্রিকা প্রকাশ করতে পারবেন? পারবেন না। প্রথম প্রিন্টেড পত্রিকা ছাপানোর খরচের বড় অংশ আসে বিজ্ঞাপন থেকে। কাজে সেটার জন্য লোক দরকার। সাংবাদিকরা যা লিখবেন, বিজ্ঞাপনের কর্মীরা যে সব বিজ্ঞাপন আনবেন সেগুলো আট কলাম বিশ ইঞ্চির মধ্যে সাজাতে হবে যাতে সেটা দৃষ্টিনন্দন হয়। মানে লাগবে গ্রাফিকসের লোক। তারপর সেটা প্রেসে গিয়ে বানাতে হবে প্লেট, ছাপতে হবে প্রিন্টারে। ছাপার পর সেগুলো পৌছে দিতে হবে সারা দেশে। এখনতো অনেক লোক হয়ে গেল। তাদের সামাল দিতে লাগবে এইচআর। হিসাবপত্র রাখার জন্য হিসাবরক্ষণ বিভাগ। অফিসে আছে চেয়ার টেবিল, এসি ইত্যাদি। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। অফিসের নিরাপত্তা দিতে হবে। আবার অফিসের অনেক অনুষ্টান করতে হবে সেটার জন্য ইভেন্টের লোক দরকার। দরকার ব্র্যান্ডিং-এর লোক। সর্বোপরি লাগবে তথ্যপ্রযুক্তি। তারমানে একটা পত্রিকা অফিসেই শত-রকমের চাকরি।

একটা ছোট আইটি ফার্মেও কিন্ত হিসাব আর এইচআরের লোক লাগে। কাজে এখন আমার মতো লোকেরাও কিন্ত মিডিয়া হাউসে চাকরি করে। এটি এই বৈচিত্রের কারণে। ক্যারিয়ার ফেয়ারে এই বৈচিত্র সম্পর্কেও ভাল ধারণা পাওয়া যায়।

UAP_career Fairফেয়ারগুলোর আর একটা সুবিধা হলো সেখানে কয়েকটা সেমিনার-আলোচনা হয়। যেমন ইউএপির ক্যারিয়ার ফেয়ারে ৪টি সেমিনার হবে।

২৯ তারিখ সকাল ১০.৩০ এ, উদ্বোধনের পর প্রথম সেমিনারটা হবে বাংলাদেশে বিপিও সেক্টরের কাজের সুযোগ সম্পর্কে। আমাদের দেশে বিপিও কিন্ত বাড়ছে। এক সময় কেবল কলসেন্টার ছিল সব। এখন কিন্তু নানান কিছু হচ্ছে। কলসেন্টারে কিন্তু পার্টটাইম কাজেরও সুযোগ আছে। অনেকে আবার ভাবে কলসেন্টার মনে হয় খালি ইংরেজি জানার জন্য। তা নয় কিন্ত। বাংলা জানা প্রচুর লোকও ওনারা খুজছেন।

শুক্রবার দুপুরের পরের সেমিনারটা হলো সিভি লেখার ভালমন্দ আর ইন্টারভিউ টেকনিক নিয়ে। সেখানে মূল বক্তদব্য রাখবেন এপর্যন্ত চারটি সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন এইচআর। এই সেমিনারে আমিও কথা বলবো আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে। এই নিয়ে আমি কয়েকটা লেখা লিখেছি। সেগুলো এখানে দেখা যেতে পারে।

ঐ যে একটু আগে বললাম পত্রিকায় কেবল সাংবাদিকদের জন্য চাকরি নেই অন্যদেরও আছে। সেরকম আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে নন-আইসিটিরও সুযোগ আছে প্রচুর। এটা কেবল ফ্রন্টডেক্স, এইচআরে সীমাবদ্ধ নেই। স্পীকারদের একজন বিজনেজ গ্র্যাজুযেট কিন্তু ডিজাইন করেছেন গ্রামীণ ফোনের ইন্টারনেট প্রোডাক্ট। এই নিয়ে সেমিনারটি শনিবার বেলা ১১টায়। সেখানে থাকবেন কৃষিখাতে আইটি নিয়ে কাজ করার বাংলাদেশের পাইওনিয়ার ড. কাশফিয়া আহমেদ। কাজেই এগ্রিকালচারের লোকেরাও জানতে পারবে তাদের কাজের খবর। আর এই সেমিনারটি মডারেট করবেন ওয়ান এন্ড অনলি সোলাইমান সুখন। কাজে আমার নিজের ধারণা এটি একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে সবার জন্য।

শনিবারের সবার শেষের সেমিনারটি দেশে বিদেশে আইসিটি সেক্টরের সুযোগ নিয়ে। এখানে মূল আলোচনা করবেন মাহিনাজ চৌধুরী, যিনি দীর্ধদিন ধরে দেশের শীর্ষ আইটি প্রোডাক্ট রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাপিক পিপলে কাজ করেন। এ সেমিনারে আরো থাকবেন লাফিফা জামান, ড. নোভা আহমেদ ও ড. আরজুমান্দ আরা। শ্রোতাদের মধ্যে অনেকেই থাকবেন যারা হরদম লোক খুজছেন।

আমাদের আগেকার দিনগুলিতে সেমিনারগুলো পুরুষশাষিত হতো। ৩০ তারিখের সেমিনারগুলো তার ব্যতিক্রম। কারণ ৩০ তারিখে ক্যারিয়ার ফেয়ারের পাশাপাশি আমরা গার্লস ইন আইসিটিরও সমাপনী করবো।

চাকরি করতে চাইলে, ক্যারিয়ারিস্ট হতে চাইলে নিজেকে তৈরি করার কোন বিকল্প নেই। আর তৈরি হতে হলে জানতে হবে – সুযোগ, সীমাবদ্ধতা এবং চ্যালেঞ্জগুলো। তাহলেই কেবল এগিয়ে যাওয়া যাবে। নতুবা দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত করা যাবে না।

আমার নিজের ইচ্ছা ২০১৬ সালে দেশের নানান স্থানে এই ধরনের ক্যারিয়ার ফেয়ারের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা। যার কারণে আমি প্রায় প্রথম থেকেই এই ফেয়ারের সঙ্গে যুক্ত। এবারে অভিজ্ঞতা আমাকে আগামীদিন গুলোতে “চাকরি চাই” গ্রুপের কাজটা এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

এ জন্য দুইদিনই সেখানে থাকবো।

শুভ কামনা সবার জন্য।

 

Leave a Reply