বইমেলার বই-১০ : চিন্তা করে রেডিও সারাই করে যে বালক!

Spread the love

সময় পরিভ্রমণের বিরুদ্ধে একটা সাধারণ কু-যুক্তি হলো – কেউ যদি অতীতে গিয়ে নিজের বাবাকে মেরে ফেলে তাহলে কী হবে? জটিল প্রশ্ন কিন্তু একটি কোয়ান্টাম কণার ক্ষেত্রে আসলে ব্যাপারটা কি হয়? আমরা কোন কণার গতি, ভর ইত্যাদি জানলে সেটি ঘন্টাখানেক পরে কোথায় থাকতে পারে তার একটা হিসাব পেতে পারি। কিন্তু মাঝখানে যদি কেউ ভাবে যে, আচ্ছা ব্যাটা ঠিক মতো যাচ্ছে কিনা সেটা একটু দেখি? ঐ দেখার জন্য ব্যাটাকে ঐ কণার ওপর ফোটন ফেলতে হবে। তখন কিন্ত একটু ঝামেলা হয়ে যাবে। ফোটনের সঙ্গে সংঘর্ষে কনাটার যে অবস্থান দর্শক ব্যাটা জানবে সেটার সঙ্গে আগের হিসাবের তেরোটা বেজে যাবে। কেননা তখন কণাটির ভরবেগ ইত্যাদি পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখন যদি এটাকে একটু বড় করি।
ধরা যাক, অফিসের একটা ক্রিকেট খেলায় আপনি শেষ ব্যাটসম্যান। শেষ বলে একটি চার মারতে পারলেই আপনার টিম জিতবে, আপনিও বসের মেয়েকে পটাতে পারবেন। কিন্তু আপনি আউট হয়ে গেলেন এবং ফলাফল হিসাবে এমন একটা বিভাগে বদলি হয়ে গেলেন যে আপনার জীবনের কোন মূল্যই থাকলো না। ২০ বছর পরে একজন দেবদূতের সঙ্গে আপনার দেখা হলো একটা পাবে। তাকে আবেগটাবেগ দিয়ে বোঝালেন সেদিন যদি চার মারতে পারতেন তাহলে তার জীবনটা কতোই না সুখের হতো? তো, দেবদূত বললেন আচ্ছা। তারপর আপনাকে ২০ বছর পিছিয়ে চার মারার ব্যবস্থা করে দিলেন। কেমন হবে আপনার জীবন?

আজ সকালে ট্রান্সকম প্রিমিয়াম লিগের খেলা দেখে আর সন্ধ্যায় রিচার্ড ফাইনম্যানের আত্মজীবনী “সিওরলি, ইয়্যু আর জোকিং ফাইনম্যান”-এর বাংলা অনুবাদ পড়ে এ কথাগুলো মনে পড়ছে। নোবেল বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী ফাইনম্যানের  খুব সাবলীল বিচরণ ছিল কোয়ান্টাম জগতে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ম্যালাকিছু তিনি করেছেন। জীবদ্দকালে তিনি প্রায় কিংবদন্তী তূল্য খ্যাতি পান। যদিও অনেক পদার্থ বিজ্ঞানী ব্যাপারটা মানতে পারতেন না। তাদের ধারণা ছিল – আং ফাং না করে ফাইনম্যান আরও অনেক কিছু করতে পারতেন। এদের মধ্যে গেলম্যান তো এককাঠি সরেস। তার কথা সোজা সাপ্টা –   “[Feynman] was a great scientist, but he spent a great deal of his effort generating anecdotes about himself. He noted that Feynman’s eccentricities included a refusal to brush his teeth, which he advised others not to do on national television, despite dentists showing him scientific studies that supported the practice.

যাকগে, এসব কথা। ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে কী হবে। ফাইনম্যানের আত্মজীবনীটা সবার পড়া দরকার। আমাদের জাভেদ পারভেজ এটির একটি সহজ-সরল অনুবাদ করেছে। অনুবাদটি হয়েছে খাসা। ফলে, ছোট্ট ফাইনম্যানকে যেমন চেনা যায় তেমনি বড় ফাইনম্যানকেও চেনা যায়।

পড়, পড় আর পড়ো এবং ভাব, ভাবো আর ভাবোর ব্যাপারটা ফাইনম্যানকে তৈরি করে দিয়েছে। যে কোন সম্যা নিয়ে ফাইনম্যান প্রথমে ভাবতে ভালবাসতেন। “ধর তক্তা, মারো পেরেক” তত্ত্বে তার মোটেই বিশ্বাস ছিল না। ছোটবেলায় তাঁর একটা খ্যাতি হয় রেডিও সারাইকার হিসাবে। একবার একজনের রেডিও সারাই করতে গিয়ে ফাইনম্যান সমস্যাটা নিয়ে অনেক ভাবেন। যার রেডিও সে খুবই চিন্তিত আর অধৈর্য হয়ে পড়ে যে কেন ফাইনম্যান রেডিওটা খুলে দেখছে না। চিন্তা করেই ফাইনম্যান সমস্যাটার সমাধান বের করে ফেলে এবং তারপর হাত দিয়ে ধরেই সমস্যার সমাধান করে ফেলে। রেডিওওয়ালা সারা শহরে ছড়িয়ে দেয় ফাইনম্যান চিন্তা করেই রেডিও সারাই করতে পারে!!!

ফাইনম্যানের কেমন করে চিন্তা করতেন?
“আমি একটা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করি। যখন কেউ কিছু ব্যাখ্যা করে আমি তখন মনে মনে উদাহরণ তৈরি করার চেষ্টা করি”।আর এভাবে তিনি বোকা বানাতেন গণিতের লোকেদের।

প্রিন্সটনে জন হুইলারের সহকারি হিসাবে কাজ করার সময় ফাইনম্যান আইনস্টাইন, পাউলির মতো বিজ্ঞানীদের সাহচর্য পেয়েছেন। সে বর্ণণাগুলোও অসাধারণ। তবে, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের  সময় বোমা বানানোতে সাহায্য করেছেন।

এই বইটা কয়েক শ্রেণীর লোকেদের অবশ্য পাঠ্য-

প্রথমত যারা আড্ডাবাজিতে সবসময় এগিয়ে থাকতে চান। টেকনিকগুলো কাজে লাগবে।

দ্বিতীয়ত যারা বিজ্ঞানী হতে চায় কারণ গবেষণার অনেক মৌল বিষয় তিনি এখানে হাসতে হাসতে বলে ফেলেছন।

আর যারা মানবচরিত্র বুঝতে চায়।

জাভেদ পারভেজকে ধন্যবাদ কষ্ট করে দ্বিতীয়বার পুরো বইটা সম্পাদনা করার জন্য।

ফাইনম্যান, তুমি নিশ্চয়ই মজা করছো!
অনুবাদ : জাভেদ পারভেজ
প্রকাশ করেছে ছায়াবীথি।
গায়ের দাম -২৫০ টাকা।

 

 

 

Leave a Reply