আমাদেরও একটা স্বপ্ন আছে
আমরা অনেকেই সেভাবে আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কথা পড়ি নাই। আমি নিজেও তেমন একটা পড়ি নাই। সম্ভবত বছর খানেক আগে আমাদের চট্টগ্রামের বাসায় আমি রোজা পার্কের আত্মজীবনী দেখি এবং পড়তে শুরু করি। পড়তে পড়তে আমার গায়ের লোম দাঁড়াতে শুরু করে।
রোজা পার্কের কারণে বিখ্যাত মন্টোগোমারি বাস বয়কট শুরু হয়েছিল। ১৯৫৫ সালের ৫ ডিসেম্বর আমেরিকার আলাবামা অঙ্গরাজ্যের মন্টোগোমারি শহরে এই বয়কটের শুরু। সেখানে একটা আইন ছিল বাসের আসনের। বাসের আসন দুইভাগে ভাগ করা ছিল। একটা অংশ শাদাদের জন্য, অন্য অংশ কালোদের জন্য। তবে, শাদাদের আসন পূর্ণ হয়ে গেলে তারা একটা বাড়তি সুবিধা পেতো। সে সময় কোন শাদা বাসে উঠলে ড্রাইভার কালোদের আসনের লোকদের উঠে যেতে বলতো। সেদিনও ঠিক এই কাজটি হলো। রোজাপার্ক কালো অংশের প্রথম সারিতে ছিলেন এবং তিনি আসন ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। ফলাফল – ড্রাইভার পুলিশ ডেকে আনে এবং রোজা গ্রেপ্তার হোন। রোজার গ্রেপ্তারের পর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতি সোমবার শহরের ট্রান্সপোর্ট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং সেটি কার্যকরী করা হয়।
সেই আন্দোলনের দিনগুলো রোজার বই-এ চমৎকার করে লেখা। সেই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যান মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। কিং-এর জরিমানা হয় ৫০০ ডলারের অথবা ৩৮৬ দিনের কারাবাসের। শেষমেষ তিনি দুই সপ্তাহ জেলে ছিলেন। নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি অকপটে বলেছেন – ,” “I was proud of my crime. It was the crime of joining my people in a nonviolent protest against injustice.”
পরের বছর ২০ ডিসেম্বর আমেরিকার সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে ঐ বাস বয়কট আন্দোলন সমাপ্ত হয়। ততোদিন মার্টিন লুথার কিং হয়ে উঠেছেন আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সামনের সারির নেতা। এমন নেতা যিনি মানুষের অধিকারের কথা বলেন, গায়ের বর্ণ নির্বিশেষে।
১৯৬৩ সালের আগস্ট মাসে কাজ ও স্বাধীনতার দাবীতে আমেরিকার কালো মানুষেরা ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে সমবেত হয়। তাদের উদ্দেশ্যে মার্টিন তার বক্তৃতায় বলেন – আমার একটা স্বপ্ন আছে। আই হ্যাভ এ ড্রিম।
“আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন, জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, সাবেক দাসের সন্তান আর সাবেক দাস-মালিকের সন্তান একসঙ্গে বসতে সক্ষম হবে ভ্রাতৃত্বের আসনে।আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন, এমনকি মিসিসিপি স্টেটে—যেটি ছটফট করছে অবিচারের উত্তাপে, যেটি ছটফট করছে নিষ্পেষণের উত্তাপে—সেটিও পাল্টে গিয়ে হয়ে উঠবে মুক্তি আর ন্যায়ের মরূদ্যান।আমার একটি স্বপ্ন আছে যে আমার ছোট চারটি সন্তান একদিন এমন একটি জাতির মধ্যে বসবাস করবে, যেখানে গাত্রবর্ণ দিয়ে আর তাদের বিচার করা হবে না, করা হবে চরিত্রগুণ দিয়ে…আজকে আমার একটি স্বপ্ন আছে।”
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল ঘাতকের হাতে প্রাণ দেন কিং। তবে, ততোদিনে তিনি আমেরিকাকে একটি গ্রেট নেশন হওয়ার পথে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছেন।
মজার ব্যাপার হলো মার্টিনের জন্মদিন ১৫ জানুয়ারি হলেও প্রতিবছর তার জন্মদিন পালিত হয় জানুয়ারির তৃতীয় সোমবার। সেই হিসাবে আজ আমেরিকায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ডে পালন করা হচ্ছে। দিনটি একটি সরকারি ছুটির দিন।
কিং-এর আন্দোলনের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের একটা মিল আছে। দুজনই সহিংসতার বিরুদ্ধে অহিংসার বানী দিয়ে লড়াই করে সফল হয়েছেন।
যারা পৃথিবীকে বদলে দিতে চায় তারা এই মানুষটির জীবনী পড়তে পারে, জানতে পারে। যারা একটি সামাজিক আন্দোলন করতে চায় তারা আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসটা দেখতে পারে। কারণ
আমাদের সবারই তো একটা স্বপ্ন আছে।