ডব্রিউডিআর ২০১৬ : ব্রডব্যান্ড ও ব্রডব্যান্ড
নানান রকম রিপোর্ট পড়া আমার একটা নেশা এবং কোনো কোনোটি পড়লে মন জানি কেমন হয়। এই যেমন এখন পড়ছি বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন। বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবছর এই রিপোর্ট বের করে। (ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। আমি পুরান দিনের মানুষ বলে এক কপি আনিয়ে নিয়েছি)। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম – ডিজিটাল লভ্যাংশ, ডিজিটাল ডিভিডেন্ট।
এই পুরো প্রতিবেদনটিকে কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার ব্রডব্যান্ড ভার্সনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
বিশ্ব যতো এগিয়ে চলেছে
আমরা ততো পিছে
ব্রডব্যান্ডকে মারছি পিষে
আঙ্গুল আর কলড্রপের চাপে।
গ্রোথ, এক্সিলারেশন আর ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে ইন্টারনেটে –ব্রডব্যান্ডের সম্পর্ক হল এই প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য। নানান বিষয় আছে। তবে, বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য প্রতিবেদনের মতো এখানে প্রচুর তথ্য, রেফারেন্স আর এনালিসিস আছে। অনেকের ধারণা ওদের সিদ্ধান্ত টানার মধ্যে এক ধরণের পক্ষপাতিত্ব থাকে। তবে, ডেটা, রেফারেন্সগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী।
যেমন ধরা যাক ফিলিপাইনের কথা। বিজনেজ প্রসেস আউটসোর্সিং , আইটি আউটসোর্সিং আর নলেজ আউটসোর্সিং-এর ওদের বছর টু বছর প্রবৃদ্ধি মাত্র ২৪%। বিশ্ব আউটসোর্সিং-এর৫% বাজার ছিল ওদের দখলে ২০০৫ সালে, ২০১৩ সালে এটা হয়েছে ১১%!!! ১৯৯৯ সালে এই খাতে ওদের কর্মসংষ্থান ছিল শূন্য, এখন হয়েছে মাত্র ১০ লক্ষ যা কিনা দেশের মোট কর্মসংষ্থানের ২.৩ শতাংশ।৬৪% রাজস্ব আসে বয়েস সার্ভিস থেকে। ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্যতথ্য খাতে প্রবৃদ্ধি ৪৭% আর আইটি খাতে ৫২%। ইনডাস্ট্রিতে কর্মীদের বার্ষিক গড় আয় ৮৮৪৯ ডলার (মাসে আমাদের টাকায় ৬০ হাজার টাকার মতো)।
প্রশ্ন হচ্ছে শুরুতে এতো ছিল কী না।
উত্তর হচ্ছে ছিল না। ওরা অনেক কম টাকায় শুরু করেছে এবং আস্তে আস্তে ভ্যালুচেনের ওপর দিকে গিয়ে উঠে পড়েছে। যারা কাজগুলো তাদের কাছে আউটসোর্সিং করে তাদের কিন্তু একটু একটু মাথা চুলকানো শুরু হয়েছে?
কেন? – খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ওরা তাই নতুন জায়গা খুঁজছে। যেমন ভিয়েতনাম। ওরা এখন বছরে ২টা করে নতুন আইট পার্ক বানাচ্ছে। কারণ এখনো ওরা ফিলিপিনোদের চেয়ে সস্তা।
আমি কিন্তু বাংলাদেশের কথা বলছি না, সঙ্গত কারণে। আমরা কিন্তু ওখানে কিছুই করতে পারবো না।
গ্লোবাল বিপিও মার্কেটের ১% ও যদি ধরতে হয় তাহলেও আমাদের স্কিল বাড়াতে হবে অনেক খানি। কতো খানি? আমি কয়েকটা উদাহরণ দেই-
১. আমার অফিসে একজন এক্সিকিউটিভ নেওয়া হবে। আমি একটা স্ট্রং সুপারিশ পেলাম। সিভি দেখে আর কথা শুনে মনে হল ঠিকই আছে। কাজে নিজ যোগ্যতায় লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়ে গেল। সময়মতো ই-মেইলও চলে গেল। পরীক্ষা হচ্ছে দুই শিফটে। কিন্তু ও আর আসলো না। কয়েকদিন পর দেখা। পরীক্ষা দিতে আসো নাই কেন?
মাথানিচু।
কী হয়েছে? না, উনি ই-মেইল চেক করেননি। যেদিন চেক করেছেন সেদিন পরীক্ষা হয়ে গেছে।
আচ্ছা তুমি কী এই ক’দিন ফেসবুক ব্যবহার করছো?
আবার মাথা হেট!
২. গত তিন মাসে আমাকে অনেকগুলো নিবন্ধনের ই-মেইল পাঠাতে হয়েছে। এর মধ্যে একটা লটের প্রায় ২২% বাউন্স ব্যাক করেছে। ভালমতো খেয়াল করে বিশ্লেষন করে দেখলাম ঘটনা হলো ই-ফরম পূরণ করার সময় ই-মেইল এড্রেসটা ঠিক মতো দেওয়া হয়নি। এত কিসের তাড়া?
৩. ডিজিকন টেকনোলজিস্ট লোকাল কলসেন্টারের জন্য ৩০০ জন কর্মী নেবে। আজ প্রায় কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে। আজতক ৩০০ জন পুরা করা যাচ্ছে না। ওদের ইংরেজি জানতে হবে না। শুধু বাংলাটা ভালভাবে বলতে পারতে হবে আর কম্পিউটারে কিছু ইনপুট দিতে হবে (ফেসবুকে নয়)।
অনেকেই অভিযোগ করে যে, কল সেন্টারে বেতন কম। তো বেতন তো হয় যোগ্যতা আর বাজার চাহিদা অনুসারে। ভারতে যে গড় গড় করে ইংরেজি বলে ডলার আর্ন করতে পারে, আমাদের কাউন্টার পার্ট তো বাংলাটাই বলতে পারে না। তাহলে কেমন করে হবে?
সমস্যাটা কোথায়?
নিশ্চয়ই আছে কোথাও। আমরা নিশ্চয়ই কোথাও কোন বড় ভুল করেছি। যে কারণে আমাদের অবকাঠামোর কিছুটা সমাধান হলেও আমাদের হিউম্যান রিসোর্সের সমাধান হচ্ছে না।
অনেক ভাবনা চিন্তার ব্যাপার মনে হচ্ছে!!!