উদ্যোক্তাদের মিলন মেলায় সাদর আমন্ত্রণ
ঘটনাটা শুরু হয় গণিত অলিম্পিয়াডে। তখন আমরা প্রতিবছর একটা আলাদা শ্লোগান নিতাম। যেমন আমাদের ধান আমাদের মান, আমাদের সংস্কৃতি আমাদের ঐতিহ্য, সুন্দরবন ইত্যাদি। এরকম করতে করতে ২০১০ সালের শেষে আমরা ঠিক করলাম পরের বছর আমরা সকল ভ্যেনুতে একজন উদ্যোক্তা নিয়ে আসবো, তিনি তার গল্প শোনাবেন। উদ্দেশ্য কেবর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের কবল থেকে মেদাবীদের বাঁচানো। ২০১১ এর গণিত উৎসবে তাই আমরা শুরু করলাম। সেটার জন্য আলাদা কোন শ্লোগান করার আগেই ঘটনা শুরু হয়ে যায় কাজে আমরা শ্লোগান ছাড়াই আগাতে থাকি। এর মধ্যে একদিন মাহমুদুল হাসান সোহাগের মাথা থেকে বের হয় – আমরা চাকরি করব না। উৎসব শেষ হওয়ার পর প্রথম আলোর স্বপ্ন নিয়ে’র তখনকার সম্পাদক আমাকে বললেন এই শিরোনামে একটা লেখা লিখতে। তো আমি সেটা লিখলাম। প্রেসে যাওয়ার আগে ফিরোজ চৌধুরী সেটি এক্সটেন্ট করলেন – চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেবো। এপ্রিলের ৭ তারিখে লেখাটা প্রকাশিত হলো। এরপর আমরা ভাবলাম তাহলে এই প্রচারণাটা চালু রাখা যাক। কিন্তু ততোদিনে আমরা জেনে গেছি এ দেশে উদ্যোক্তাদের প্রথম সংকট হলো তথ্যের। তো, আমরা ভাবলাম সীমিত সামর্থে আমরা ফেসবুকেই কিছু সহযোগিতা দেই। সোহাগ আর সুবিনকে যোগ করে আমি একটা ফেসবুক গ্রুপ খুললাম, এপ্রিলের ১৩ তারিখে – চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব। তো, এই গ্রুপটা আর দশটা গ্রুপের মতো হবেনা এটা বোঁঝানোর জন্য আমার ঐ লেখাটাকে করা হলো গ্রুপের ইশতেহার। কী এক অজ্ঞাত কারণে দেখলাম টুক-টুক করে কয়েকজন যোগ দিল। কয়েকজন প্রশ্ন-টশ্ন করতে শুরু করলো। আমরাও জানা-অজানা কায়দায় জবাব দিয়ে গেলাম। এ করতে করতে গ্রুপটা একদিন সত্যি সত্যি দাড়িয়ে গেল। এখন ওর অনেক সদস্য। ফেসবুকের বাইরেও ওর অনেক কাজকর্ম।
এই গ্রুপেরই একটি বাৎসরিক আয়োজন হলো উদ্যোক্তা সম্মাননা – উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দেওয়া। এই ২০১৪ সালে প্রথম দেওয়া হল। প্রথমবার ঠিক হলো বৈশাখেই দেওয়া হবে বাংলা সন হিসাবে। পরের বছর থেকে আমরা প্রচলিত ক্যালেন্ডারে চলে গেলাম। ২০১৪ সালের জন্য ২০১৫তে যারা পেলেন আর গতবছর যারা পেলেন।
এরপর থেকে এটিকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করছি আমরা। যদিও এখনো সেভাবে কাঠামোর মধ্যে আসেনি। তবে, সম্মাননাটি আমরা গ্রুপের মধ্যে রাখিনি। গ্রুপের বাইরের উদ্যোক্তাদেরও আমরা এর মধ্যে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। প্রথমবছর জাফর স্যার আর আমরা মিলে দিয়ে দিলাম। পরের বছর থেকে আমরা পুরস্কার তুলে দেওয়ার জন্য সম্মানিত ও প্রতিষ্ঠিত উদ্যক্তাদের দাওয়াত দিতে শুরু করলাম। আর অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে গেলাম বড় পরিসরে। গত বছর আমরা এ আয়োজন করেছি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মিলনায়তনে। আর এবার হবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে। এটি সোবহানবাগ ক্যাম্পাসে।
উদ্যোক্তারা যারা সম্মানিত হোন তারা সবাই যে এগিয়ে যেতে পারেন তা নয়। অনেকেই সামনে আগাতে পারেন না, বন্ধ করে দেন। নতুন একদল আসেন। পুরানো কেউ কেউ টিকে যান।
এখন আমরা জানি কেবল উদ্যোক্তাদের নিয়ে এই ইকো সিস্টেম দাড়াবে না। এখানে অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা লাগবে। ২০১১ সালে দেশে ভেঞ্চার ইনভেস্টর ছিল না, এখন আছে। সরকারে আইডিয়া প্রজেক্ট ছির না, এখন আছে। ইন্টারনেট আর স্যোসাল মিডিয়ার অনেক বিস্তৃত হয়েছে। ফলে এন্ট্রিব্যারিয়ার কমেছে। অনেকেই আসছেন।
আমাদের এই গ্রুপ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছে। অবশ্য কারণটা এখনো আমরা বের করতে পারিনি। আমাদের পরে আরও অনেকেই উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কাজ করেছেন।
মনে হবে, শত ফুল ফোটার অপেক্ষায় ছিল। আমরা একটা চেইন রিএকশন শুরু করে দিয়েছি মাত্র।
একজনকে আমরা দেই নুরুল কাদের সম্মাননা। শতভাগ রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্পের পথিকৃত নুরুল কাদেরের নামে এই সম্মাননাটি দেওয়া হচ্ছে দুই বছর ধরে। প্রথম বার পেয়েছেন অকালে চলে যাওয়া মাহমুদ হাসান। গতবার পেয়েছেন জুমশেপারের কাওসার আহমেদ। গতবার থেকে আমরা শুরু করেছি চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা ইউসুফ চৌধুরীর নামে ইউসুফ চৌধুরী সম্মাননা। গতবার এই সম্মান পেয়েছেন এশ এম প্লাস্টিকের গাজী তৌহিদুর রহমান।
উদ্যোক্তা সম্মাননা ছাড়া থাকে নবীন উদ্যোক্তা স্মারক।
১৩ তারিখ শনিবার বিকেল ৫টা থেকে আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। তবে, বেশিরভাগই চলে আসবেন আগেভাগে। অনুষ্ঠানের চেয়ে আড্ডাটা বড়। কারণ এ আমাদের মিলন মেলা।
আমাদের এই মিলনমেলায় কোন গেইট নাই। যে কেউ আসতে পারেন। আপনাদের উপস্থিতি আমাদের উৎসাহিত করবে। একদল তরুন যারা পথ চেনার জন্য পথে নেমে পড়েছেন তারা অনুপ্রাণিত হবেন।
আমাদের মিলন মেলায় আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ।
চলে আসুন।