আমাদের কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা – সাহায্য দরকার

Spread the love

আমাদের দেশে কারিগরী শিক্ষার হাল হকিকৎ ভাল নয়। কেন কে জানে?

আমি একবার কিছু লোকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা কেন তাদের সন্তানদের গুচ্ছের টেকা-টুকা খরচ করে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াচ্ছেন, যেখানে তার সন্তানের ক্যালিবার ও যোগ্যতা ঠিক সেরকম না যাতে সে সেখান থেকে একটা ভাল ডিগ্রী করে বের হবে?

-তাহলে কী করবো এ প্রশ্নের উত্তরে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম টিভেট-এ দ্যান না কেন। সেখানে পড়াশোনার খরচ নাই বললেই চলে। তাছাড়া ওখানে পড়লে সবাই বৃত্তি পায়। ইনফ্যাক্ট আমাদের (কারিগরি শিক্ষা) বাজেটের একটা বড় অংশ বৃত্তিতে চলে যায়।

ওনাদের জবাব – আপনাকে আমরা ভাল মানুষ বলে জানতাম। কিন্ত আপনি আমার ছাওয়ালডারে এমন জায়গায় দিতে কইলেন যেটা খারাপ?
-মানে কী?????
মানে সহজ। ঐখানে পড়লে টেকা দ্যায়। অথচ অন্য জায়গায় টেকা দিয়েই পড়া লাগে। তারমানে এডা খুবই খারাপ কারণ এখানে পড়লে টেকা দেয়। যদি খারাপ না হবে তাহলে ক্যান টেকা দেয়?
!!!!!!!!!!!!!!!!!

সম্প্রতি আমি লক্ষ করছি, এক বিশাল অংশ পলিটেকনিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আবারও ৪ বছরের ডিগ্রী কোর্সে ভর্তি হয়। কমবেশি ৩-৫.৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নেয়। কিন্তু কেন?

সম্প্রতি আমার এরকম একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার সঙ্গে আমার কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ –
-তোমার বাবার তো ওতো টাকা নাই। মাসে ২১ জহাজার টাকা কেমনে দেবেন।
আমি ৭ হাজার যোগাড় করতে পারবো। টিউশনি করবো এবং একটা স্কুলে আইসিটি পড়াই সেটা দিয়ে।
-তুমি কেন আবার ডিগ্রী নিতে চাচ্ছো?
আমি চারবছরের কোর্সে তেমন কিছু শিখি নাই।
-কেন?
আমাকে পড়ার খরচ যোগাড় করতে হয়েছে।
-এখানেও তো তুমি একই অবস্থাতে পড়বা কারণ তোমাকে এখানে ২১ হাজার টাকা মাসে যোগাড় করতে হবে। তাহলে এখানেও তুমি শিখবা না।|
– জবাব নাই।

পরে তার সঙ্গে অনেক আলাপ আরোচনা করে তাকে একটা আইএসপিতে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছি। যদিও সে ঢাকার বাইরে যাবে না এবং টেবিলে বসে কাজ করতে ইচ্ছুক।

কয়েকবছর আগে সিঙ্গাপুরে জাহাজ শিল্পের সবচেয়ে বড় রিক্ট্রুকমেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করতে গিয়েছিলাম।
-আপনারা আমাদের ওয়ের্ডারকে দ্যান ৮০০ সি. ডলার। আর একই কাজের ভারতীয় ওয়েল্ডারকে দেন ২০০০। কেন?
উনি টেবিল থেকে উঠে কোথায় জানি গেলেন। তারপর দুইটা ফাইল নিয়ে আসলেন। আমাকে দেখালেন ভারতীয় ওয়েল্ডারের একটা আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট আছে আর আমাদের ওর সেরকম কিছু নাই।
বললেন – সার্টিফিকেট আছে মানে সে তার কম্পিটেন্সি প্রমাণ করেছে। এবং তাকে ১৬০০ ডলারে নিচে আমি বেতনই দিতে পারবো না।
তো এই সার্টিফিকেটের পরীক্ষাটা দিতে হয় সিঙ্গাপুরে গিয়ে। তখন ফী ছিল ৫০০ ডলার। আর সিঙ্গাপুরে গিয়ে থাকা। আমাদের লোকজন যখন ওখানে যায়, তারপর ৮০০ ডলারের চাকরি পেয়ে যায় তখন আর পরীক্ষা দেয় না।
ভারতীয়রা কেমনে দেয়?

-ওরা পুরো পরীক্ষা সিস্টেম নিয়ে যায় ভারতে। নির্ধারিত সময় ভারত তাদের একটি ইনস্টিটিউটকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পরীক্ষা কর্তৃপক্ষকে ছেড়ে দেয়। ওরা ভারতে গয়ে পরীক্ষাটা নেয়। ফলে ভারতীয়দের ৫০০ ডলারের বাইরে অতিরিক্ত তেমন খরচ হয় না। আরও আছে। ওয়েল্ডার যদি একবারে এই পরীক্ষা পসা করতে পারে তাহলে সরকার তার ৫০০ ডলারও ফেরৎ দিয়ে দেয়!!! তো ওরা তো পরীক্ষা দেবেই।

এরকম হয়তো আরও সমস্যা আছে। আমি তেমন একটা কাজ এ নিয়ে গত ৮ বছরে করি নাই। কিন্তু যেহেতু পরের পাঁচবছরে আমার প্রথম প্রায়োরিটি শিক্ষা তাই আবার টিভেট-এ ফেরৎ যাচ্ছি।

প্ল্যান করেছি একটি সচেতনতা ও ওডভোকেসি প্রোগ্রামের। এটি করবো কয়েকটি জেলায়, ইনটেনসিভ প্রোগ্রাম। এ জন্য ঐ এলাকা থেকে শুভেচ্ছা দূত বানাবো, লোকাল ক্যাম্পেইন করবো, লোকাল টিভেটেই যেন আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তার দেন দরবার করবো।

এই প্রোগ্রামটা একটি সুন্দর নাম ও একটি শ্লোগান দরকার।

যার নাম আর শ্লোগান পছন্দ করবো তাকে একদিন চারুলতার খিচুড়ি বা ভর্তা-ভাজি-ভাত খাওয়াবো।

ধন্যবাদ

12 Replies to “আমাদের কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা – সাহায্য দরকার”

  1. আমি এক হতো ভাগা —-
    স্যার,
    জানিনা আপনি অবাক হবেন কিনা আমার কিন্ত অবাক লাগে।
    আমি একজন কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করা ছাত্র,২০১৮ সালে শেষ করেছি।
    অবাক ব্যাপার হইল অন্য ডিপ্লোমাদের বৃত্তি দেয়া হলেও আমাদের দেয়া হয়না। কেনো দেয়া হয়না আজও জানিনা ! অনেক আগের সিলেবাস, বাংলার সব কিছু পরিবর্তন হলেও কৃষি ডিপ্লোমার সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হয়নি এর কারণও খুঁজে পাইনাই । যেমন করেই হোক পাশ করে বের হয়েছি, এইবার পরেছি মহাবিপদে সারা বাংলাদেশে কোথাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই । অল্প কয়েকটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ উচ্চ শিক্ষা নেয়ার সেখানে প্রশ্ন আসে টাকার।
    বাবার অর্থের দিকে চেয়ে ৬ মাস বসে ছিলাম অনিশ্চয়তার মধ্যে এক প্রাইভেটবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি ৩ মাস হইলো।
    ডিপ্লোমা শেষ মানে আমাদের পরিবার/প্রতিবেশী ভেবেই নেয় পড়াশোনা শেষ আমাদের, এ জেনো মরার উপরে খাড়ার ঘা। চাকুরীর ক্ষেত্রে আমাদের দেয়া হয় HSC এর মান, পরিবার/প্রতিবেশী দেয় পোস্ট গ্রাজুয়েট এর মান, এর মাঝে চাপে পরে আমাদের দশা যায় যায় অবস্থা।
    স্যার মনের কষ্টে লিখলাম অনেক কথা, আশা করি আমাদের দিকে আপনার সুদৃষ্টি পরবে।
    আপনার সাথে একদিন বসার সুযোগ হয়েছিল কিছু কথা আপনার আজও মাথার মধ্যে বাঝে।
    সর্বশেষ স্যার,
    আপনার সকল কাজে যেভাবেই ডাকেন আমাকে পাবেন, আপনার সাথে, পাশে থাকতে পারলে কিছুটা আগাতে পারবো আশা করি।

    ( দক্ষ যদি হতে চাও কারিগরি শিক্ষা নেও )

  2. স্যার শুভেচ্ছা জানবেন! আমি আপনার এই প্রজেক্টে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক; যদি সুযোগ থাকে দয়া করে জানাবেন!

  3. খুবই ভালো লিখেছেন স্যার,
    এখানকার ছাত্রদের নেই কোন সামাজিক মর্যাদা,ডিপ্লোমা বললে মানুষ নাক ঝারে,বলে ‘আ আ ডিপ্লোমা’ চাকরির মান খারাপ। আরো কথা কথা!
    আর অন্যান্ন গুলো না হয় আর নাই বা বললাম।
    তরে আপনি যেহেতু বিষয় টা নিয়ে ভেবেছেন তাই পলিটেকনিকের সাবেক একজন ছাত্র হয়ে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

  4. বাংলাদেশে প্রায় সকল ডিপ্লোমা সেক্টরে অরাজকতা চলছে! সেটা হোক মেডিকেল রিলেটেড ডিপ্লোমা কিংবা টেকনিক্যাল-ভোকেশনাল রিলেটেড ডিপ্লোমা। এখন আর কোনো প্রফেশনাল ডিপ্লোমাকেই এদেশে মূল্যায়ন করা হয় না। বিদেশে প্রফেশনাল ডিপ্লোমাকে কিছুটা মূল্যায়ন এখনো করা হয়। ওখানে ডিগ্রির চেয়ে ব্যক্তির মেধা, জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতাকে মূল্যায়ন করে চাকরিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হয়। বিদেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমাধারীও, স্নাতকধারীর সমান পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।

    তবে বিদেশেও অনেক ডিপ্লোমাধারীরা স্নাতক ডিগ্রি করে থাকেন। এই বাংলাদেশে এমনও অনেক ডিপ্লোমাধারী আছেন যারা চাকরিতে শুরুতে যে গ্রেডে বেতন পেতেন, ৪০ বছর পরও সেই একই গ্রেডে একই চেয়ারে আছেন, চাকরিকালীন সময় সন্তুোষজনক হওয়ার পরও এদের কোনো পদোন্নতি নেই! অপরপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি সমমান ধারীরা সরকারি চাকরিতে এন্ট্রি পদে ৯ম গ্রেডে যোগদান করে পদোন্নতি পেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে গ্রেড ১ম হয়ে যান! আবার তারও উপর সুপার গ্রেডে যান! তাহলে কেন একজন ডিপ্লোমা করে চাকরি ক্ষেত্রে এই আজন্ম বৈষম্যের শিকার হবেন…? বাংলাদেশে ৪ বছরের ডিপ্লোমাধারীরা বেশির ভাগই এন্ট্রিপদে গ্রেড ১২তম থেকে গ্রেড ১০ম এর মধ্যে যোগদান করেন। ৭৫% ডিপ্লোমাধারীর চাকরি ব্লক পোস্ট, অর্থ্যাত সারাজীবন চাকরি করবেন তবুও কোনো পদোন্নতি পাবেন না! ০.০০০১ % ডিপ্লোমাধারীর সর্বোচ্চ ৫ম গ্রেডে ও ১০% সর্বোচ্চ ৭ম গ্রেডে পদোন্নতি পান!

    আর চাকরি ক্ষেত্রে এদেশে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের সাথে সতীনের মতো খারাপ ব্যবহার সহ অবজ্ঞা, অবহেলা করেন!

    তারপরও কেন, কেউ একজন কারিগরি-ভোকেশনাল ডিপ্লোমা করবেন…? জানতে চাই…?

    #সুতরাং এদেশের প্রেক্ষাপটে প্রফেশনাল ডিপ্লোমা ডিগ্রি কে না বলুন, আর প্রফেশনাল স্নাতক ডিগ্রি কে হ্যাঁ বলুন।

    1. অসাধারন ছিলো স্যার,, নিজের কাছে অন্যরকম ভালো লাগতেছে,, আপনার এ ভাবনার জন্য 😍

  5. সিলেবাস যথেষ্ট নই। আরেক টা ব্যাপার সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। চাকরির মান খারাপ। এই প্রজেক্টর নাম দিতে পারেন ” ডিজিটাল শিক্ষা ডিজিটাল দীক্ষা “

  6. স্যার শুভেচ্ছা জানবেন! আমি আপনার এই প্রজেক্টে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক; যদি সুযোগ থাকে দয়া করে জানাবেন!

  7. খুবই ভালো উদ্যোগ। আশা করি আমি এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহযোগিতা করতে পারব। কারণ আমি টিভেট নিয়ে কাজ করি।

Leave a Reply