টয়লেট ক্লিনিং থেকে বিলিওনিয়ার
আমাদের মাইন্ডসেট এখন এমন যে, কোন ব্যবসায়িক বড় সাফল্যের কথা শুনলে আমরা ভেবে বসি আইটির কথা। এটার কারণও আছে। ২০০৬ সালেও বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানির মধ্যে এক্সনমোবিল, জেনারেল ইলকট্রিক ছিল। কিন্তু এখন অ্যামাজন, এপল, মাউক্রোসফট, গুগল হলো বিশ্বের প্রথম চারটি কোম্পানি, মার্কেট ক্যাপিটাল হিসাবে।
কাজে আমি যে দুই ভাই-এর কথা লেখার জন্য আজকে কী-বোর্ডে বসেছি তাদের কথা আমি মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে মিডিয়ামে পড়েছি। সেখানে দুই ভাই-এর হাস্যজ্বল ছবি দেওয়া, এওয়ার্ড হাতে। উত্তর ইংলন্ডের এই দুই ভাই-এর প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ এখন ৪ বিলিয়ন ডলার (৪০০ কোটি ডলার)! দুই ভাই-কে বলা হয় ঈসা ভাতৃদ্বয় – মোহসিন ও যুবের ঈসা! ওদের গ্রুপের নাম ইজি গ্রুপ।
উত্তর ইংলন্ডের ব্ল্যাকবার্ন নামে একটি শহরে ওরা বড় হয়েছে। ২০১৯ সালে এই শহরটি যুক্তরাজ্যের বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় সাফল্যের সঙ্গে দশম স্থান অধিকার করেছে। দুই ভাই কখনো ভার্সিটিতে পড়তে যায়নি। কিশোর বয়সে ওদের বাবা একটি পেট্রোল স্টেশন (পাম্প) খরিদ করে। দুই ভাই সেখানেই কাজ করতে শুরু করে।
বাবার স্টেশনে তারা কঠিন পরিশ্রম করতে শুরু করে। সারাদিন একটা পেট্রোল স্টেশনে যা যা কাজ থাকতে পারে তার সবই তারা করেছে। দুই ভাই-এর নিয়মিত কাজ ছিল পেট্রোল স্টেশনের টয়লেট ক্লিন করা। শাটের হাতা গুটিয়ে তারা এই কাজটা করেছে। করেছে বলে তারা দুইজন ব্যবসাটার খুটিনাটি টের পেতে শুরু করে এবং তখন থেকে তারা প্ল্যান করে নিজেদের স্টেশনের। তারপর তারা সেখানে এক্সট্রা আওয়ার কাজ করতে শুরু করে। টার্গেট টাকা আয় করে জমানো। কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করে ওরা মোট দুই লাখ ডলারের একটা সঞ্চয় গড়ে তোলে। তারপর ২০০১ সালে সব জমা টাকা দিয়ে নিজেদের প্রথম স্টেশন তারা স্থাপন করে ২০০১ সালে।
অচিরেই তারা কয়েকটা জিনিষ আবিস্কার করে ফেলে। প্রথমত যারা পেট্রোল স্টেশনে ফুয়েল নিতে আসে, তাদের অনেক তাড়া থাকে। এর মানে হলো তারা যদি সেখানে কেনাকাটা করে তাহলে ঐ বেচাতে অনেক মার্জিন করা যায়। দ্বিতীয়ত হলো পাম্পে সম্ভাব্য সব জ্বালানী রাখা। ওরা রাখতে শুরু করে এসো, বিপি. শেল ও টেক্সাকো ব্যান্ডের ফুয়েল। আর ওরা পেট্রোল স্টেশনে প্রচুর বাতি লাগিয়ে সেটির রাতকেও দিন করে ফেলে। ফলে তাদের পাম্পগুলো হয়ে উঠে নিরাপদ। লোকের আস্থা তাদের দিকে ফিরতে শুরু করে। কাজে তারা প্রফিট করতে থাকে, তাদের এই ছোট্ট আইডিয়া কাজে লাগে এবং ব্যাংকও তাদের ওপর আস্থা স্থাপন করে। কাজে তারা দ্রুত আরও পাম্প একোয়ার করে এবং সেখানে নিজেদের আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। যখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাম্পের মালিকানা তাদের হাতে আসে তখন তারা পরের ধাপে যেতে শুরু করে।
তারা বুঝতে পারে তাদের পেট্রোলপাম্পের দোকানটা তাদের বড়লোক করবে তবে বিলিওনিয়ার করবে না। এর সঙ্গে কিছু একটা এড করতে হবে। প্রথমত তারা দেখলো তাদের স্টেশনগুলোতে তারা বড় কোম্পানিগুলোর বিলবোর্ড বসাতে দিতে পারে। যেহেতু লোক শুধু তাদের অতিক্রম করে যায় না, সেখানে থামে কাজে তাদের বিলবোর্ডগুলোর জন্য প্রিমিয়ার চার্জ করা সম্ভব। অন্যদিকে ওরা স্টারবাকস বা কেএফসিকে বলতে শুরু করলো আমাদের পাম্পে আসো, তোমার একটি শপ খুলো। ওদের হিসাব সোজা। কেএফসি, স্টারবাকসের দোকান থাকলে লোকে তেল কেনার পর সেখানে থামার তাড়না বোধ করবে। আর একবার কফি খেতে নামলেই তাকে অনেক কিছু গছিয়ে দেওয়া যাবে। শুরুরদিকে এই পার্টনারশীপটা সহজ ছিল না। কিন্তু অচিরেই তারা কেএফসি, স্পার, ক্যারিফোর, লুইজ দেলহেইজ, স্টারবাকস, গ্রেগস, বার্গার কিং এবং সাবওয়ের সঙ্গে পার্টনারশীপ করতে সক্ষম হয়েছে।
লং স্টোরি শর্ট – দুই ভাই-এর শুরু করা সাম্রাজ্য বড় হতে শুরু করলে সেখানে হাজির হয় ইউরো গ্যারাজ এাং ইএফআর গ্রুপ, টাকা পয়সা নিয়ে। এখন ইউরোপ ও আমেরিকার ১০টি দেশে ওদের মালিকানাধীন পাম্পের সংখ্যা, উইকিপিডিয়ার হিসাবে, ৫ হাজার ৮৬৬। ২০১৯ সালে তাদের রেভেনিউ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে!!!
ঈসি ভাইদের গল্প থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। তবে, সবচেয়ে বড় শেখাটা হলো একটা ব্যবসার একেবারে ভিতরের বিষয় যদি জানা থাকে তাহলে এগিয়ে যাওয়াটা সহজ হয়। সে জানার জন্য দরকার হলে বাথরুমও ক্লিন করতে হবে (নলেজ অব দ্যা ইন্ডাস্ট্রি)। উদ্ভাবনী চিন্তা (আমাদের জায়গাতে আপনার দোকান দিন), রিস্ক (জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে প্রথম স্টেশন কেনা), ব্যাংককে কনফিন্ড করে দ্রুত এক্সপান্ড করা। এবং গ্রোথ হ্যাকিং টেকনিক ব্যবহার করা!
আরও কিছু হয়তো শেখার আছে। তবে, আপাতত আমার কাজ হলো এটা আমার সাইটে দিয়ে দ্রুত ফেসবুকে শেয়ার দেওয়া যাতে কিছু লোকের রাতের ঘুম নষ্ট হয়!
এই দুই ভাই কার গ্রোথ হ্যাক করছে? কীভাবে করছে?
এরকম প্রশ্নের জবাব খুঁজবো আমার ই-মেইলে গ্রোথ হ্যাকিং কোর্সে।