বিজ্ঞান জয়োৎসব – সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

Spread the love

joy6অনুষ্ঠান শেষ। ছবি-তোলার পর্বও শেষ। তখনো মঞ্চের মাঝখানে শিক্ষামন্ত্রী। আমি এগিয়ে গেলাম তাঁকে ধন্যবাদ দিতে। দিন কতক আগে তাকে দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম। বলেছিলেন একটু আগেভাগে এসে পড়বেন। তবে, সেটি যে সকাল সকাল হবে তা কখনো ভাবিনি। মন্ত্রী মহোদয় যখন আজকের অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌছেন তখন কুইজ প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা কাওকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। আমি একটু বাইরে এসে দেখলাম একটা মন্ত্রীর গাড়ি ক্যাম্পাসে ঢুকছে, পাশে একজন বললো -শিক্ষামন্ত্রী এসে পড়েছেন।

দৌড়ে গেলাম। বললেন ব্যস্ত হওয়ার দরকার নাই। আমি বাইরে বাচ্চাদের সঙ্গে থাকি। সময় হলে ঢুকবো। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রায় সাড়ে তিনঘন্টা সাড়াদেশ থেকে আসা হাজার খানেক বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। বিজ্ঞানাগার গড়ার ব্যাপারে আমাদের উদ্যোগটাকে এগিয়ে নেবেন বলেছেন আর বলেছেন কলসিন্দুরের স্কুলে পাকা ভবন গড়ে দেবেন।
তো, আমি স্যারকে গিয়ে বললাম – ধন্যবাদ স্যার, এতোক্ষণ থাকলেন। তাপর হাত মেলানোর জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।

কিন্তু তিনি আমার হাতটা ধরলেন না।

আমি হতবিহবল হয়ে যাবো ভাবলাম। কিন্তু ততক্ষণে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন।

একটা লম্বা যাত্রা। শেষ হয়নি। তবে, তার প্রথম মাইল ফলক অতিক্রম করেছে, সাফল্যের সঙ্গে। আহামদুলিল্লাহ।

joy1আজ ২৮ ডিসেম্বর আমাদের সিটি ব্যাংক-প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসবের ২০১৫ সালের আয়োজনের যবনিকা পড়লো। খুব মনে পড়ছে এ আর খান স্যারের কথা। স্যার থাকলে আজকে সবচেয়ে বেশি খুশী হতেন স্যারই।

joy3গতকাল  মাননীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এসেছিলেন। প্রজেক্টগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। যাবার সময় আমাকে বললেন ওদেরকে আরো কীভাবে সাহায্য করা যায়? বললাম – সায়েন্স ল্যাবরেটরীর সঙ্গে বাচ্চাদের একটা সংযোগ করে দিতে পারলে মন্দ হতো না। বললেন – এটা তো কঠিন কোন কাজ না। তারপর আমাকেই বললেন কীভাবে সেটা করা যাবে তা ঠিক করে ওনার কাছে যেতে। সেই সঙ্গে এও জানালেন আইসিটি মন্ত্রণালয় যে রকম ল্যাব করছে সারাদেশে সেরকম দেশজুড়ে হাইস্কুলে সায়েন্স ল্যাব করার জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। আরো কিছু উদ্যোগ নিতে চান।

আমাদের প্রিয় জেবা ম্যাডাম আজ-কাল দিনমান আমাদের সঙ্গে থাকলেন। বেশিরভাগ প্রজেক্ট খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছেন। ভাল-মন্দ খোঁজ নিয়েছেন। এবং আগামীতে আরো কী করা যায় সেটা নিয়ে ভেবেছেন। আজ সকালেও টাইম মতো এসেছেন এবং চেয়ার পারসনের বক্তব্য রেখেছেন। তবে, সবকিছু ছাপিয়ে পুরো বিজ্ঞান জয়োৎসব সবসময় তাঁর ছায়া পেয়েছে, সেটাই আমাদের এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগাবে। রেজাউর রহমান স্যারও ছিলেন।

শোধু এই অণুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজশাহী থেকে এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদৃল্লাহ শাসম বিন তারিক। দীর্ধদিন পরে আবার আমাদের কোন অনুষ্ঠানে আসলেন জেনেটিক ইঞ্জিনি

সিটি ব্যাংক কেন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেটা তাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন। আজ তার একটা বোর্ড মিটিং আছে।  সেটার জন্য তিনি আগেভাগে চলে যাবেন বলে সিটি ব্যাংকের লোকজন আমাকে একাধিকবার রিমাইন্ড করে রেখেছে। কিন্তু তিনি আর যাননি। এক মুহুর্তের জন্য তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জানিয়েছেন আগামীতেও তাঁরা এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকবেন। মন্ত্রী মহোদয় যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের কথা বলেছেন এটা তারই বহি:প্রকাশ কিন্তু।  সিটি ব্যাংককে ধন্যবাদ আমাদের মনের একটি ইচ্ছাকে পল্লবিত করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। এই আয়োজন না হরে আমরা সারাদেশে গিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে হাওকাও করার কোন সুযোগই পেতাম না।

প্রথম আলোর সম্পাদক মতি ভাই-এর কথা আসরে সেভাবে না বললে হয়। অনেকেই জানে গনিত ালিম্পিয়াডকে বড় করার পেছনে এই লোকটার অবদান কতোটুকু। আমি যখন সব ছেড়ে-ছুড়ে প্রথম আলোত থিতু হয়েছি, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন – মুনির, আরো দুইটি প্রোগ্রাম করার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। একটি বিজ্ঞানের। আজেকে মতিভাই খালি বলেছেন – ঠিক আছে। ধন্যবাদ মতি ভাই।  (মতি ভাই -এর আর একটা প্রোগ্রাম আমি মুরু করেছিলাম কিন্তু আগাতে পারি নি। আবার শুরু করবো সহসা)।

joy5 joy2 SCI1

সবশেষে যাদের জন্য এই আয়োজন। আসলে আমাদের হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে তোমরা আছো। আর তোমরা ঠিকমতো সাড়া দাও বলেই আমরা এতো কিছু করার সাহস পাই। কারণ তোমাদের মধ্যেই আমরা আমাদের সত্যেনবসু, মাকসুদুল আলমকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

তোমাদের বাবা-মা, শিক্ষক। সবাইকে জানাই আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। এই শীতের মধ্যে তোমরা দূর দূরান্ত থেকে এই আয়োজনে এসেছো। অনেকেই রাতের গাড়িতে এসে আবার রাতের গাড়িতেই ফিরে যাবে। তোমাদেরকে নিয়েই আমাদের ভরসা। আমাদের স্বপ্ন। তোমাদের স্বপ্ন পূরণ হোক।

এবং একাডমিক টিম ওবং বিচারকরা। কাল ১১৫টি প্রকল্প যাচাই বাছাই করতে হয়েছে। সেখান থেকে সিনিয়র জাজদের জন্য তালিকা করতে হয়েছে। আজকে মাত্র ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে কুইজের খাতা দেখে ফলাফল তৈরি করতে হয়েছে। এই চমৎকার একাডেমিক টিমের সবার নাম যেহেতু আমি জানি না তাই ওদের সাধারণ নাম টিম এসপএসবি নামেই ওদের জন্য ধন্যবাদ। (ভাগ্য ভাল যে, আমাদের গণিত উৎসবের শুরুতে আমাদের এমন কোন টিম ছিল না!)।

joy4

সবশেষে আমাদের ভলান্টিয়ারা। ওরা হল এক কথায় অসাধারণ। তেমন কোন বিশেষন ছাড়াই ওরা ব্যাপক খেতে পারে। আগে ওরা চারুলতা আর স্টারের খাওয়াতে খুশী ছিল। এখন ওরা বারস্তিার কফিও চিনে ফেলেছে।

যে কোন বড় কাজের সাফল্য হলো পরের কাজের জন্য তৈরি হওয়া। সে চেষ্টাই অব্যাহত থাকুক।

এই লেখা শেষ হতে পারে জন লেননের ইমাজিনের শেষ প্যারা দিয়ে। আজ প্রেরণা ও তার মা এই গানটি করেছে আমাদের অনুষ্ঠানে।

“You may say I’m a dreamer
But I’m not the only one
I hope someday you’ll join us
And the world will live as one.”

 

সবার জীবন পাই-এর মতো সুন্দর হোক।

 

 

 

Leave a Reply