টার্মিনেটর এসেই গেল!!!!!
সারা কোনারের (Sarah Connor) কথা মনে আছে। ও যে, লিণ্ডা যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন? জন কোনারের মা!
আমি টার্মিনেটর সিনেমার কথা বলছি। আগামী দিনের কথা বলছি যেখানে রোবটরা মানুষের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারে। কাজেই রোবটদের উত্থান বন্ধ করার জন্য ভবিষ্যৎ থেকে এসেছে কেও। টার্মিনেটরের গল্প বলার জন্য এই পোস্ট নয়। সেটি ইচ্ছে করলে আপনি ঐ লিংকে গিয়ে পড়ে আসতে পারেন। যারা সিনেমাটি দেখেনি তাদের পক্ষে অবশ্য পরের ঘটনাবলী বোঝাটা মুশ্কিল হতে পারে। তবে, গোল বেধেছে অন্য জায়গায় আর একজন সাংবাদিকের টুইট যত গণ্ডগোলের মুলে। লন্ডনের এক সাংবাদিকের নামের সঙ্গে সারা কোনারের নামের মিল গতকাল এক অদ্ভুত ঘটনার জন্ম দিয়েছে ইন্টারনেটে।
গতকাল একটা দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে জার্মানীর ভক্মওয়াগন কারখানায়। সেখানে রোবটের হাতে নিহত হয়েছে একজন কর্মী। আর এই ঘটানাটির কথা টুইটারে প্রথম জানান সারা ও’কোনার (Sarah O’Connor )
টার্মিনেটর সিনেমার সারার সঙ্গে লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমসের এই সাংবাদিকের নামের মিলই এর পরের ঘটনার জন্য দায়ী। সবাই মনে করেছে এটি টার্মিনেটর সিনেমার “সত্যি” ঘটনা । কাজে তাকে যে সব সাজেশন দেওয়া হয়েছে তা হল – “দৌড়াও সারা”। অথবা “জন কোনারের দেখভাল কর” কারণ জনই এখন একমাত্র ভরসা!
আবার অনেকে ভেবেছে এটি টার্মিনেটর সিনেমার পরের পর্বের কিছু। লিক হয়েছে। ফলাফলতার টুইটটি ১০ হাজারের বেশিবার রি-টুইট হয়েছে!!! এবং গতকাল টুইটারে এই নিয়ে ঝড় বয়ে গেছে।
বেচারি সাংবাদিক সারা ও’কোনার টার্মিনেটর সিনেমাটি দেখেনি ফলে সে এইসবের কিছু বুঝতেও পারেনি। বলেছে সে স্কাইনেট কি জানে না। বেচারি খালি বলেছে আমরা যেন ভুলে না যায় একটা লোক মারা গেছে।
ফিনান্সিয়াল টাইমস থেকে জানা গেছে মৃত্যুর বিাশদ বিবরণ। ২১ বছর বয়সী একটি বহিরাগত ঠিকাদার আর একজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি রোবটকে জোড়া দেওয়ার কাজ করছিল। এই সময় রোবটটি তাকে বুকে থাবা দিয়ে একটা ধাতব প্লেটের সঙ্গে ঠেসে ধরে। পরে লোকটি মারা যায়। সাধারণত যেসব কারখানায় রোবট আছে সেখানে রোবটদের খাঁচার মধ্যে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় যাতে মানুষের সঙ্গে সংস্পর্শ না হয়। কিন্তু ঔ লোকটি খাঁচার ভিতর ঢুকে কাজ করছিল। অন্য লোকটি বাইরে থাকায় সে বেঁচে গেছে।
একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে রোবটটির কোন “কারিগরি ত্রুটি” পাওয়া যায় নি। তাছাড়া এটি নতুন প্রজন্মের কোন রোবট নয় যেটি কারখানায় মানুষের সঙ্গে একই উৎপাদন লাইনে পাশাপাশি কাজ করে।
সকাল বেলায় এই ঘটনা পড়ে কয়েকটা বই -এর কথা মনে পড়েছে। প্রথমটি জাফর স্যারের কপোট্রনিক সুখ দু:খ। সেখানে রোবটদের বিদ্রোহের একটি ঘটনা আছে। তার কারণ ছিল কারিগরি কোন সমস্যা। জাফর স্যারের সেই বইতে কয়েকটা বিষয় খোলাশা করে কল্পনা করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটা ছিল রোবটদের “নিজেদের বোধ-বুদ্ধি” হয়ে যাওয়া এবং এটা হওয়ার ফলে আর “মানুষের অধীনে না থাকা”। আর সবশেষে যে রোবট বিদ্রোহের কথা বলা হয়েছে সেখানে একটা কারিগরি ক্রুটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
অন্যদিকে স্যার আইজাক আসিমভ তার গল্পে রোবটদের জন্য কয়েকটি নিয়ম বেঁধে দিয়েছিলেন যেখানে বলা ছিল “কোন রোবট কোন মানুষকে কখনো আঘাত করবে না”। তবে সে অন্য রোবটকে আঘাত করতে পারবে। রোবট বিষয়ক বেশিরভাগ সাই-ফাই এই নিয়মটা মেনে চলে। ফলে সাইফাই লেখকরা শেষ পর্যন্ত মানুষকে জিতিযে দেন। আসলে কে জিতবে এই লড়াই-এ সেটা বলাটা মনে হচ্ছে একটু কঠিনই। আর একটা সিনেমার কথাও মনে পড়ছে। স্পিলবার্গের ব্যাটারিজ আর নট ইনক্লুডেট। সেখানেও রোবটদের বংশবৃদ্ধির ব্যাপারটা আছে।
কিন্তু কালকের ঘটনাতে মনে হচ্ছে স্যার আজিমভের নিয়মটা মানুষ জানে, রোবটরা জানে তো! কয়েকটা বিষয় কিন্তু গত কিছুদিন ধরে মানুষকে ভাবাচ্ছে। স্টিফেন হকিং এই চিন্তা আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এটি হল আমাদের যে ল্যাবরেটিরিগুলো আছে সেখান থেকেই না কোন ভয়ের ব্যাপার ঘটে। স্যার স্টিফেন হকিং-এর ধারণা ল্যাবরেটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং করা ভাইরাস শেষমেষ মানুষের বারোটা বাজাতে পারে।
অন্যদিকে এই ঘটনার আর একটা দিক আছে। সেটি হল সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর ক্ষমতা বা অপ ক্ষমতার প্রকাশ। আরব বসন্তের পর থেকে অনেকেই এই নিয়ে চিন্তিত। আমাদের দেশের সরকারও। বিশ্বের বেশিরভাগ স্বৈরশাসক এখন সামাজািক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ইন্টারনেটকে যরায়।
তবে, সেটা যাই হোক। আপাতত সে আশঙ্কায় আজকের ছুটির দিনটা মাটি করার কোন দরকার নাই।
শুভ সকাল।