স্যার জন উইলসন স্কুলের টেড বক্তৃতা – বৃত্তের বাইরের চিন্তা
মাসখানেক ধরেই আমার বাসায় উত্তেজনা। কারণ রুবাই ব্যস্ত। চলছে তার খণ্ডকালীন মাস্টারি। এরই মধ্যে একদিন এসে জানালো তাদের স্কুলে একটা টেড এক্স ইয়ুথের আয়োজন করছে। হবে ১৫ ডিসেম্বর।
কখনো স্পন্সরের সন্ধানে যাচ্ছে। কখনো ডিজাইন করছে। কীভাবে টিকেট বিক্রির টাকা নেওয়া যায় সেটা ভাবছে। আবার কখনো নিজেই অনেক কিছু ডিজাইন করছে। শুনলাম ওর বন্ধুরাও ভীষন ব্যস্ত। কেউ এ উপলক্ষে ভিডিও এডিটিং-এ হাত পাকাচ্ছে, কেউ শিখছে এনিমেশন।
তাদের সব কর্মকাণ্ডের সুন্দর পরিণতি হয়েছে আজ, ১৫ ডিসমে্বর ২০১৮, তাদের স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুলের মিলনায়তনে।
যথারীতি সকাল বেলাতে সে বেড়িয়ে গেছে। আমি যখন গেছি ততোক্ষণে পাঠাও-এর সিফাত হাসানের বক্তব্য শেষ। স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম তার বক্তৃতা শুরু করেছেন। এই বক্তৃতাটা শোনার জন্যই আমি গিয়েছি।
খুবই শাদামাটা ভাবে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে স্পষ্ট উচ্চারণে এমটি বলছিলেন তার ডিজাইন নিয়ে। বলেছেন বাইত উর রউফ মসজিদের ডিজাইন আর নির্মাণ নিয়ে। এই মসজিদটি ঢাকার দক্ষিণখানের ফায়েদাবাদে অবস্থিত। এই মসজিদ ডিজাইনের জন্য মেরিনা তাবাসসুম পেয়েছেন ২০১৬ সালের আগাখান ডিজাইন এওয়ার্ড। আগা খান ডিজাইন এওয়ার্ড হলো স্থপতিদের জন্য সবচেয়ে বড়ো এওয়ার্ডগুলোর একটি। প্রতি তিন বছর পরপর এটি দেওয়া হয়।
এই মসজিদের ছবি দেখলে এটিকে প্রথমেই মসজিদ ভাবতে চাইবেন না অনেকেই। কারণ এতে কোন গম্বুজ বা মিনার নেই।
কেন নেই সে কথাটা বলছিলেন মেরিনা তাবাসসুম। ইসলামের শুরুতে যে মসজিদ তাতে কিন্তু মিনার বা গম্বুজ ছিল না। মিনার বা গম্বুজ পরে মসজিদের ডিজাইনে যুক্ত হয়েছে। আর এটাতে পৌঁছানোর জন্য নিজের ডিজাইন থিংকিং প্রসেসটা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। সেটি হলো প্রশ্ন করা। প্রচলিত গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসা। বলছিলেন ইসলামের শুরুতে মসজিদ কিন্তু কেবল নামাজের জন্যও ছিল না। সেটি ছিল সামাজিক জমায়েতেরও জায়গা। বললেন ঐ জমির মালিক তার নানী। নানী তাঁকে মসজিদ বানানোর জন্য সীডফান্ডও দিয়েছেন। তবে, তাতে কাজটা হয়নি। ঐ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে কমিউনিটির দানে, সহযোগিতায়। পুরস্কার পাওয়ার পর ঐ মসজিদেই কমিউনিটির সবার সঙ্গে সে সুসংবাদ ভাগাভাগি করা হয়েছে।
মসজিদের মূল নামাজের জায়গাটি অনেক প্রসস্ত। তবে, এ মসজিদের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য আলোর ব্যবহার। “আলোর জন্য কোন টাকা লাগে না। আমি প্রাকৃতিক আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চেয়েছি”।তার বর্ণনা শুনেই ক্রমাগতভাবে একটি আশ্চর্য বোধ হচ্ছিল আমার। কতো সহজভাবে একটা অসাধারণ ডিজাইনের কথা বললেন। শেষ করলেন সে কথা দিয়ে যা স্যার জন উইলসন স্কুলের টেড বক্তৃতার শিরোনাম- থিংকিং আউট অবদি বক্স। বললেন তার জন্য দরকার – স্টেপ আউট অব দ্যা কমফোর্ট জোন।
যাদের আগ্রহ আছে তারা হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিনা তাবাসসুমের বক্তৃতাটা শুনতে পারেন।
আমি এর পর সাজিদ ইকবাল আর নগর কৃষির কামরুল হাসানের বক্তব্য শুনে বের হয়ে এসেছি।সবারটা শুনতে পারলে ভাল লাগতো। আরও ছিলেন থ্রাইভ উইমেন এর আশনা চৌধুরী, নারী গাড়ীচালক ইয়াসমিন কণা, ফটোগ্রাফার জিএমবি আকাশ, ওডু লিমিটেড এর জসীম আহমেদ, অগ্র ভেঞ্চারের ফারজিন আলম এবং খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান।
এ আয়োজনের গাইডেন্স অংশটা ছাড়া সব কাজই করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সেটা টেডের লাইসেন্স থেকে শুরু করে সেটের ডিজাইন, থিম, প্যাড, কলম সবই। তাদেরকে শুভেচ্ছা।
ওরা নিজেরা সবাই স্বাচ্ছন্দ্যের বৃত্ত ভেঙ্গে বের হয়ে আসুক এ কামনা করি।