
উদ্যোক্তার টীম : অদ্রি তলে শিলাখন্ড বহে অদ্রিভার-২
আজ ১২ মার্চ উদ্যোক্তা গ্রুপের উদ্যোগে একটা আড্ডা হয়ে গেল। বিষয়বস্তু ছিল উদ্যোক্তার টিম বিল্ডিং আর রিটেইনিং। বিষয় হিসাবে এটি একটি যন্ত্রণার নাম। বেশিরভাগ উদ্যোক্তার একটি বড় অভিযোগ হল ঠিক কর্মীকে খুঁজে না পাওয়া অথবা কর্মীকে ধরে রাথতে না পারা।
আলোচনাটা দ্বিমুখী ছিল। বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই অংশ নিয়েছেন। পুরোনোদের মধ্যে গাজী তৌহিদ, তানিয়া ওয়াহাব, সাজ্জাদ হোসেন আর সাজ্জাদ হোসেন অলি আর নতুনদের মধ্যে বেশ ক’জন বেশ সরব ছিলেন।
আলোচনাতে দুটো বিষয় ঘুরে ফিরে এসেছে। সব আলোচনা শেষে একটা সারাংশ মোটামুটি নিচের মতো দাড় করানো যায়।
টিম বিল্ডিং
সফল হওয়ার মূল মন্ত্রই হল একটি ভাল টিম গঠন করতে পারা। এক্ষেত্রে কোন ম্যাজিক ফর্মুলা নাই। তবে, নিচের পদ্ধতিগুলো কাজে লাগতে পারে-
১. ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ – এর মানে হলো নিজে যে ইনস্টিটিউশনে পড়েছে সেটার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। যেমন আইটির বেলায় ওখান থেকেই নতুনদের পাওয়া যায়। তানিয়া ওয়াহাব যেমন একটা বড় সহায়তা পেয়েছে তাঁর কয়েকবছরের একজন জুনিয়রের কাছ থেকে।
২. ট্যালেন্টেল পুলের খোঁজ রাখা – আইটি উদ্যোক্তা তারেক জানালেন ২০০৮ সালে তাঁরা কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে এসিএম আইসিপিসিতে ভাল করেছে, করছে এমন ৫৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করে তাদেরকে রিক্রুট করতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে নিজেরাও একটা জেন্টলমেন্ট এগ্রিমেন্ট করে যে, একজনের লোক আর একজন হাতিয়ে নেবে না।
৩. ব্যাপক ঘোরাঘুরি – তানিয়া এবং সাজ্জাদ দুইজনই তাদের উদ্যোগ শুরুর আগে একইরকম কারখানাগুলোতে ব্যাপকভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে, খুটনাটি জেনেছে। এই করতে করতে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে আলাপ হয় এবং যখন ওদের কেও চাকরি ছাড়তে চায় তখণ তারাই সাজ্জাদ বা তানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
৪. ইন্টার্ন নেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি করা – এটি একটি কঠিন কাজ। বিশেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন নেওয়ার সুযোগ কম। কিন্তু যেখানে সুযোগ আছে সেখানে নতুন কর্মী সরাসরি না নিয়ে নিয়মিত ইন্টার্নশীপের ব্যবস্থা রাখা যায় যাদের মধ্য থেকে পরবর্তী সময়ে লোক নেওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে কর্মীদের অবস্থানের সময়ও বেশি হয়।
৫. বিজ্ঞাপন দিয়ে – বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্রেশ লোকজন পাওয়া কঠিন। সিনিয়রদের বেলায় এটা ভাল। কিন্তু নতুনদের বেলায় ১,২ ও ৪ নম্বর পদ্ধতি বেশি ভাল।
৬. আত্মীয়-বন্ধু – সম্ভব হলে দূরে থাকা ভাল। তবে, কখনো কখনো নিজের লোকবল ভারি করলে সেটার একটা সুফল পাওয়া যায়।
ঠিক লোককে নিয়ে টিম গঠন করার পর সমস্যা হয় তাদেরকে ধরে রাখা। এ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য সবার প্রথমে উদ্যোক্তাকে নিজের ওয়ার্ক প্রসেসের সবটা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। এটার জন্য কোন কোন সময় আগে কিছু কাজ শিখে নিলেও ভাল। আজকে একজন, যিনি প্রায় সহস্রাধিক কর্মীক চাকরি দিয়েছেন, জানালেন ব্যবসাতে নামার আগে তিনি ছয়মাস পড়াশোনা করেছেন, তানপর একটা ফ্যাক্টরিতে ঐ কাজ করেছেন এবং তারপর নিজের ফ্যাক্টরিতে হাত দিয়েছেন।
টিম রিটেইনিং-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধি বের করতে হবে। সবারটা যার যার মতো হবে। তবে, আজকে যে সব আলোচনা হয়েছে-
- কর্মীদের ভাল রাখা, কর্মীরা প্রতিষ্ঠানকে ভাল রাখবে – এ কেবল বেতন-বোনাসের ব্যাপার নয়। কর্মীদের ছোটখাটো বিষয়ের প্রতিও নজর দিতে হবে। যেমন তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর পিকনিক হয়। সেখানে কর্মীরা নিজেদের নানান প্রতিভা তুলে ধরে। পরিবারও থাকে। এটা একটা ববন্ডেজ গড়ে তুলে। একজন প্রতিবছর ২০ জন কর্মীকে হজ্বে পাঠান এবং প্রসেস হেডদের সপরিবারে বিদেশ যাবার সুযোগ দেন। তবে, স্টার্ট আপদের বেলায় এমন তো সম্ভব না। সেক্ষেত্রে কর্মীর পরিবারের খোঁজ রাখা, তাদের সঙ্গে একসঙ্গে খেতে বসা, আড্ডায় অংশ নেওয়া ইত্যাদি কাজে লাগে।
- স্বপ্ন ছড়িয়ে দেওয়া – সাজ্জাত একদিন তাঁর কর্মীদের নিয়ে গেছে সাভারে। সেখানে একটা খোলা জমি দেখিয়ে বলেছে – একদিন এখানে আমাদের স্বপ্নের কারখানা হবে। সেই থেকে কর্মীরা াজে মনোযোগ দিয়েচে বেশি।
- বিশেষ বিশেষ সময়ে পাশে থাকা – সব কর্মীরই একটা খারাপ বা বিশেষ সময আসতে পারে যখন তার কর্মক্ষতা কমে যায়। এ সময় কারণ বুঝে তার সঙ্গে থাকতে হবে। তারেক বললেন – প্রোগ্রামাররা যখন প্রেমে পড়ে কঅন তারা কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারে না। এসময় প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে তার প্রেমে পড়াটাকে উৎসাহিত করা যাতে দ্রুত সে “ঠান্ডা” হয়। তাহলে সো কমো্পানির সঙ্গে থাকবে।
- প্রশিক্ষণ – তানিয়া তার প্রথম ৪০জন কর্মীর জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল্। অন্যরাও করেছে। এসব ক্ষেত্রে যারা চলে যায় তারাও কিন্তু যোগাযোগ রাখে এবং প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করে।
- কাজ শেখানো – কর্মীদের আপলিফট করার জন্য কাজ শেখাতে হবে। অনেক সময় স্কিল কর্মী আন বা সেমি-স্কিলকে শেখাতে চায় না। সে সময় মাঝখানে তখন উদ্যোক্তাকে হাজির হতে হবে যাতে সে কাজটা তাকে শেখায়। তারপর ঐ কর্মীকে শিখিয়ে দিতে হবে
- দায়িত্ব এবং ভুল করতে দিতে হবে – কর্মীরা যদি ওপরে ওঠে তার মানে হল উদ্যোক্তার আরো ওপরে ওঠা। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন কর্মীরা নিজেরা ২/৪টা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সিদ্ধান্ত নিলে তারা ভুল করবে। এই ভুল করতে দিতে হবে। না হরে ওদের শেখাটা পরিপূর্ণ হবে না।
- শেয়ার দেওয়া – ভাল ও প্রয়োজনীয় কর্মীকে ধরে রাখার জন্য তাকে শেয়ার দেওয়া যায়। তৌহিদ এতে সফল হয়েছে। তবে, আইটি কোম্পানিতে এটি খুব একটা কাজে আসে না কারণ সবার সুযোগ আরো বেশি।
এই দুই আলোচনার পাশাপাশি একটা বিতর্কও হলো সেটা হলো কোন ধরণের কর্মী দরকার – বিশ্বত্ব না দক্ষ।
কোন সিদ্ধান্তে পৌছানো গেল না। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন কোন জায়গায় বিশ্বত্বতার কোন বিকল্প নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে দক্ষতাটাই আসল।
ম্যানুয়ালের কথাও এসেছে। কারণ দিনশেষে যতই ব্যবস্থা নেন না কেন, কর্মীরা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাবে, ছোট ফার্ম থেকে বড় ফার্মে যাবেই। কাজে নিজের প্রডাকশন লাইনের কমপ্লিট ম্যানুয়াল বানিয়ে ফেলতে হবে যাতে যে কেও খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কাজ বুঝে নিতে পারে।
আজকের আলোচনাটা আমরা এখানেই শেষ করেছি কিন্তু এটি আসলে একটা চলমান কর্মকাণ্ড। আমাদের আরো আরো এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
এই বিষয়ে পরের কর্মশালাটা সাজানো হবে কিছু প্র্যাকটিস এবং গেম দিয়ে যা কিনা টিম বিল্ডিং এক্সারসাইজ নামে পরিচিত। এগুলো শেখানো হবে যাতে উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে এগুলো প্র্যাকটিস করতে পারে।
সবার জন্য শুভ কামনা।