ন্যারেটিভ ন্যারেটিভ ন্যারেটিভ

Spread the love

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিঙ্ক সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি সম্ভবত কোন বিজ্ঞান বইতে। কারণ তিনি ঘুড়ির সঙ্গে চাবি বেঁধে দিয়ে বিদ্যুতের একটা পরিক্ষা করেন। ঘোরতর বজ্রবিদ্যুতের দিনে তিনি এই কারবার করেছেন। বেশিরভাগ বই-এ তার এই অসীম সাহসী পরিক্ষার কথা আছে। যাহোক তারপর তো পড়বি পড় মালির ঘাড়ে। পড়েছি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং!!!

তো, যারা বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না তাদের জন্য উইকিপিডিয়া থেকে তুলে দিচ্ছি –“বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন এফআরএস, এফআরএসএ, এফআরএসই (জানুয়ারি ১৭, ১৭০৬-এপ্রিল ১৭, ১৭৯০) একজন আমেরিকান পলিম্যাথ (জ্ঞানের অনেকগুলো শাখাতে যাদের অবাধ বিচরণ তাদের বলা হয় পলিম্যাথ) এবং আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম (জাতির পিতাদের একজন)। ফ্র্যাঙ্কলিন একজন প্রাগ্রসর লেখক, মুদ্রক, রাজনৈতিক দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, ফ্রিম্যাসন, পোস্টমাস্টার, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, কৌতুকক, সিভিক একটিভিস্ট, এবং কূটনীতিক। বিদ্যুতের নানাবিধ তত্ত্বের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িত। লাইটনিং রড, বাইফোকাল চশমা, ফ্র্যাঙ্কলিনের চুলাসহ তাঁর একাধিক আবিস্কার। এমনকি তিনি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়ারও অন্যতম প্রতিস্ঠাতা।

তো, এরকম একজন লোক কীভাবে এরকম হয়ে উঠেন?

বেন যখন ছোট তখন তিনি ঘোষণা করেন বড় হয়ে তিনি সমুদ্রে যাওয়া যায় এমন কিছু করবেন। এতে তাঁর বাবা একটু ভয় পেয়ে যান। তখন তিনি একদিন বালক বেনকে বোস্টন শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। বেছে বেছে তিনি তাকে এমন সব প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান যেগুলোর সঙ্গে সমুদ্রের যোগ নেই। ঘুরতে ঘুরতে তরুণ বেন এমন কিছুর খোঁজ পান যা তিনি পছন্দ করেন – বই। বেনের বাবা তাকে একটি ছাপাখানায় এপ্রেন্টিসশিপের কাজ জুটিয়ে দেন।

আমেরিকার ইতিহাসে বিশেষভাবে এবং মানবজাতির ইতিহাসে সাধারণভাবে বিশেষ স্থান অধিকারী বেন ফ্র্যাঙ্কলিনের কাছে যদি আপনি জানতে চান – কেমন করে, ম্যান?

তিনি বলতেন এই ছাপাখানায় আমার ব্যপক ও হাবিজাবি পড়া এবং ততোধিক হাবিজাবি লেখা!!! নিজের আত্মজীবনীতে তিনি এই কথাটাই লিখেছেন। সহজ ভাষায় – পড়ো, পড়ো, পড়ো।

কিশোরকালে তার লেখার স্কিল ছিল খারাপ আর ম্যাথ স্কিল – ভয়াবহ। এই জায়গা থেকে উত্তরণের তার বুদ্ধি কী?

কোন টিউটরের সাহায্য ছাড়া নিজের লেখার স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা তিনি শুরু করেন। এজন্য তিনি যোগাড় করেন ব্রিটিশ কালচার এন্ড পলিটিক্সের ম্যাগাজিন দ্য স্পেকটেটর। সে সময়ের একটি বিখ্যাত পত্রিকা। সেখানকার গদ্যকে তিনি রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চেষ্টা করতেন।

তিনি লিখেছেন আমি কতোগুলো পেপার নিতাম। তারপর সেখানকার নিবন্ধের কিছু নোট নিতাম। নোট মানে মূল সেন্টেন্স-এর ভাবটা ছোট করে লেখা। এরকম করে করে ফেলে রাখতাম। মাঝে মধ্যে নোটগুলো দেখে মাথায় গেথে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কয়েকদিন পরে, সেই হিন্টগুলো দেখে পুরো নিবন্ধটি নিজেই লেখার চেষ্টা করতাম।

তারপর বেন তাঁর লেখার সঙ্গে অরিজিনাল স্পেকটেটরের লেখা মিলাতেন। নিজের ভুলগুলো ধরতে পারতেন এবং সংশোধন করতেন। করতে গিয়ে টের পেলেন তাঁর নিজের শব্দ ভান্ডার সীমিত এবং যা জানেন তাও প্রয়োগ করতে পারেন না।

তারপর তিনি আবিস্কার করলেন তার গদ্য কহতব্যই নয়। তখন তিনি ভিন্ন রাস্তা ধরলেন। তিনি এবার তার নোটগুলো দিয়ে নিবন্ধের পরিবর্তে কবিতা লিখতে শুরু করলেন। “আমি কিছু গল্পকে কবিতায় পরিবর্তন করলাম। তারপর যথারীতি গল্প ভুলে গেলেও কবিতা থেকে আবার গল্পটা ফিরিয়ে আনতে পারলাম”।

এভাবে যখন কিছুটা আগালেন তখন তিনি পরের স্টেজে গেলেন। এখন করলেন কি, তার নোটগুলোকে উল্টাপাল্টা করে ফেলে রাখলেন। কিছুদিন পর এই উল্টাপাল্টা নোট থেকে  নিবন্ধটা লেখার চেষ্টা করলেন!!!

এতে কী লাভ?

আপনি একটা নিবন্ধ পড়ার সময় নোট নিলেন। তারপর নোটগুলো এলোমেলো করে দিলেন। মানে প্রথম পাতার নোট নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় পাতায়, দ্বিতীয় পাতারটা ৫ম পাতায় এভাবে। তারপর ফেলে রাখলেন এবং নিবন্ধটা ভুলে গেলেন। তারপর যখন আবার ঐ নোটগুলোকে কম্পাইল করার চেষ্টা করবেন তখন আপনার কী হবে?

তখন আপনি আসলে কিছু বিচ্ছিন্ন, এলোমেলো চিন্তাকে সাজাতে শিখবেন।

তারপর উনি মেলাতেন। কখনো হতো, কখনো হতো না।

এভাবে তিনি বারবার করতেন। বেশিরভাগ লেখক তাদের লেখা ইমপ্রুভ করার জন্য অনেক বেশি পড়েন। কিন্তু বেন ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি বারবার লিখতেন। এখানে শুদ্ধতা আনার জন্য খুবই ডিটেইলে ওনাকে মনোযোগ দিতে হতো।

অরিজিনালের সঙ্গে তূলনা করতে করতে আমি দেখতাম আমার দুর্বলতা, আবার ঘাটতি। সেগুলো আমি সংশোধন করতাম। কিন্তু একই সঙ্গে আমি উপলব্ধি করলাম আমার লেখাও একটা ভাব প্রকাশ করতে শুরু করেছে। আমি সেটা উপভোগ করতেও শুরু করলাম। এবং এভাবেই আমি একজন সহনীয় ইংরেজ লেখক (tolerable English writer) হয়ে গেলাম।”

নিজেকে সহনীয় বলাটা ওনার বিনয় তো আমরা জানি।

এই নিরলসভাবে পড়া ও লেখার কারণে তিনি হয়ে উঠেন একজন ভাল শিক্ষার্থী। যে কোন বিষয়েই। এডভোকেসি হোক বা ফীডব্যাক হোক তিনি হয়ে উঠেন সিদ্ধহস্ত। “এর ফলে আমি একদিন স্কুলের পাটিগণিত বইটি হাতে নিলাম যে বই-এর পরিক্ষাতে আমি আগে দুই দুইবার ফেল করেছি। কিন্তু এবার আমি কারো সাহায্য ছাড়াই সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি”।

মার্কেটিং-এর সঙ্গে কিসের সম্পর্ক ন্যারেটিভের?

গল্পের। স্টোরিটেলিং-এর। উদ্যোক্তাদের অনেক বেশি এখন সড়গড় হতে হয় গল্পবলাতে সবাই চাইলে সহজে ভাল কথক হতে পারেন না। কিন্তু যারা বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের মতো পড়বেন আর লিখবেন তাদের কথক হয়ে ওঠা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

 

One Reply to “ন্যারেটিভ ন্যারেটিভ ন্যারেটিভ”

Leave a Reply