নিজের উদ্যোগ শুরু করুন -৪ : নিজের পূ্ঁজি নিজে যোগান
অনেকেই আমাদেরকে জানান তার কাছে “এতো টাকা” আছে। কোন ব্যবসাটা করলে ভাল হবে। আমি সবসময় বলি – টাকা থাকলেই ব্যবসা করা যায় না। তবে ব্যবসা করতে টাকা লাগে। দুই রকম টাকা। একটা শুরু করার জন্য, কিছু যন্ত্রপাতি, সার্ভিস কেনার জন্য। যেমন আপনার একটা ল্যাপটপ লাগবে, একটা ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে, কয়েক জায়গায় যেতে হবে ইত্যাদি। এসবের জন্য যে টাকা লাগবে সেটাকে আপনি শুরুর “ক্যাপিটাল কস্ট” বলতে পারেন। যদিও এর পুরোটা সে অর্থে মেশিনারিজের খরচ নয়। তারপর যখন আপনি কাজে নেমে যাবেন তখন আপনার লাগবে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। মানে প্রতিদিনকার খরচ!
প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে শুরুর টাকা আপনি কই পাবেন? দেখা যাব আমাদের দেশের কয়েকজন উদ্যোক্তা কোথা থেকে টাকা পেয়েছেন!
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে তাঁর বাবা ৮৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ব্যবসা শুরুর জন্য। বাবা বা মা’য়ের কাছ থেকে এই দেশে প্রথম পূঁজি পাওয়া যায়। এটির সুবিধা হচ্ছে ফেইল করলে বকা-টকা খেয়ে মাফ পাওয়া যায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও মূলধন পাওয়া যায়। অসুবিধা হচ্ছে বাবা-মা যদিও ছেলে-মেয়েদের প্রতি বায়াস থাকেন কিন্তু নিজেরা অব্যবসায়ী হলে তাদেরকে কনভিন্স করাটা কঠিন। কিন্তু এটা দরকারী। কারণ ফ্যামিলিতে পিচ করতে পারাটা উদ্যোক্তার প্রথম পরীক্ষা। এটাতে পাস করতে পারলে অনেক খানি আগানো যায়। অনেকের ক্ষেত্রে বাবা-মা’র জায়গায় ভাই-বোন হতে পারেন উৎস।
নিজের টাকা দিয়ে শুরু করতে পারলে মনটা ফুরফুরে থাকে। তো কে নিজের টাকা দিয়ে শুরু করতে পারে? ছাত্র জীবনে অনেকে টিউশনি করে কিছু টাকা জমাতে পারে। সেই টাকা দিয়ে শুরু করা যায়। অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগের পূঁজি ছুল ৬ হাজার টাকা। কারিগর ও ট্যানের উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব শুরু করেছেন ১০ হাজার টাকা দিয়ে। ঐ টিউশনির টাকা। টিউশনি অবশ্য আমিও করেছি তবে কোন টাকা জমাতে পারি নাই!!! তার মানে আমার সেই সময় টাকা বাঁচানোর কোন ধান্ধা ছিল না।
আমরা যখন বুয়েটে পড়ি, তখন আমাদের এক বন্ধু বিভিন্ন ঠিকানা থেকে টিএন্ডটি ফোনের জন্য আবেদন করতো, ১০০ টাকা খরচ করে। পাশ করার পর দেখা গেল তার হাতে বেশ কয়েকটি ডিমান্ড নোট। সেই সময় (১৯৯০ সালে) টিএন্ডটি ফোনের অনেক চাহিদা। সে কয়েকটা ডিমান্ড নোট বিক্রি করে তার ব্যবসার প্রাথমিক পূঁজি পেয়ে যায়।
খুলনাতে তিন বন্ধুর শুরু জন্য দরকার ছিল লাখ দেড়েক টাকা। তারা ৮০ জন মামা-খালা-ভাই-বেরাদর-বন্ধুর প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে নিয়ে প্রাথমিক টাকা যোগাড় করে।
২০০৬ এর পর অনেক আইটি উদ্যোক্তা ফ্রিল্যাণ্সিং করে প্রাথমিক পূঁজি যোগাড় করে। আমার দেখা এরকম দুইজন মিলে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে ২০০৯ সালে। ফ্রিল্যান্সিং-এর সুবিধা হলো এতে পূঁজি যোগাড়ের পাশাপাশি কাজের এক্সপেরিয়েন্সও হয়ে যায়।
এছাড়া অনেকেই চাকরি জীবনের সঞ্চয় দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন।
আপনার জন্য কোনটা?