বিলিয়ন ডলারের সুপার উদ্যোক্তাদের বৈশিষ্ট্যের সমাহার
এ বছর আমার বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে রয়েছে ১২টি স্টার্টআপের বিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার কাহিনী। সেই সঙ্গে সেখান থেকে আমার পাওয়া টেকআওয়ে। আমার সব বই আমি প্রকাশের আগেই অনেককেই পড়তে দেই। কেউ কেউ চ্যাপ্টার অনুসারে এবং কেউ কেউ পুরো বইটা পড়েন। তারপর তারা মতামত দেন। আমি সেই অনুসারে সম্পাদনা করি। এদেরকে আমি বলি আর্লি রিডার। আমার গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বই-এ আলাদা একটি চ্যাপ্টার আমি যোগ করেছি আর্লি রিডার গুটিপার উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজির রিউিউ-এর পর। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইজা ফিরোজের পরামর্শে আপনার সায়েন্স ফিকশন ময়ালে প্রচুর রদ-বদল, ব্যাখ্যা যোগ করতে হয়েছে।
আর্লি রিডারদের অবদান
এবারও “বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপে” অনেক পরামর্শ আমি গ্রহণ করেছি। একটি বাদে। সেটি হলো আমার বন্ধু ও ডিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান রাফেল কবীরের পরামর্শ। রাফেল কবীরের বক্তব্য হলো ১২টি গল্প থেকে একটা সামারী চ্যাপ্টার যোগ করে দেওয়া, যেখানে ইউনিকর্নের উদ্যোক্তা ও কী করে ইউনিকর্ন হয় সেটা তুলে ধরা। আইডিয়াটা আমার পছন্দ হলেও মাত্র ১২টি কেসস্টাডি থেকে সাধারণীকরণ করতে আমার মন সায় দেয়নি। আমার মনে হয়েছে কেউ না কেউ কমপক্ষে কয়েকম ইউনিকর্ন এনালিসিস করে এরকম ডেটা ড্রিভেন একটা কিছু করবে। তখন সেটা শেয়ার করলেই হবে। আমার ধারণা ছিল কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আমার বন্ধুর প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য জরিপ, ইন্টারভিউ ইত্যাদি করবে। কাজে আমি অপেক্ষা করতে রাজি হলাম। তাই বই-এ সাধারণীকরণের কোন চেষ্টা আমি করি নাই। কিন্তু আমাকে যে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না এটাও আমি ভাবিনি। দেখা যাচ্ছে আমি খুবই কম জানি।
সুপার উদ্যোক্তা
কি আশ্চর্য, আমার বই প্রকাশের কিছুদিন পরেই আমি জানতে পারলাম স্টার্টআপ এনথুজিয়াস্টিক আলী তামাসেব ঠিক এই রকম একটা স্টাডি করেছেন গত চার বছর ধরে এবং তাঁর এই এনালিসসি তিনি “Super Founders: What Data Reveals About Billion-Dollar Startups“ শিরোনামের বইতে তুলে ধরেছেন। এর হার্ডকভার আজ অ্যামাজন ডট কমে উন্মুক্ত হয়েছে। এই বইতে তিনি ২০০৫ সালের পরে প্রতিষ্ঠিত ১৯৫টি কোম্পানিকে স্টাডি করেছেন যেগুলো কোন না কোন এক সময় বিলিয়ন ডলারের মূল্যমান অতিক্রম করেছে। মোট ৬৫টি উপাদান নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ঐ বই-এ পাওয়া যাবে।
এই বইটি হাতে পেতে আমার আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কিন্তু খো্ঁজ দিয়ে দেখলাম আলী তার বিশ্লেষনের অনেককিছুই তাঁর ব্লগে প্রকাশ করেছেন। সেখান থেকেই আমি কিছু ডেটা শেয়ার করছি। আশা করি, আমার বন্ধুসহ যারা সুপার উদ্যোক্তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি জানতে আগ্রহী তাদের এটা কাজে লাগবে।
৫ বৈশিষ্ট্য
বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপে বিলিয়ন ডলার কোম্পনি ছাড়াও একটি ব্যক্তি উদ্যোগের গল্প আছে। এটি মিলিয়ন ডলার স্টার্টআপের গল্প। কলেজে পড়ার খরচ যোগাড় করার জন্য আলেক্স টিউ নামে একজন শিক্ষার্থী মিলিয়ন ডলার হোমপেজ নামে একটা ওয়েবসাইট বানায়। সেটিতে লোগো বসিয়ে সে মিলিয়ন ডলার আয় করে! সেই সময় ব্যানার এডের প্রচলন ছিল না। কাজে মাত্র ৫ মাসেই সে কোটিপতি হয়ে যায়। ঐ ঘটনার ছয় বছর পরে টিউ মেডিটেশনের একটা এপ (Calm) নিয়ে বাজারে আসে এবং সেটির ভ্যালুয়শন হয় দুই বিলিয়ন ডলার। বোঝা যাচ্ছে মিলিয়ন ডলার হোমপেজের অভিজ্ঞতাই টিউকে এগিয়ে রেখেছে।
ঠিক একই রকম ঘটনা কিন্তু ক্লাব হাউস, স্পটিফাই-এর মতো উদ্যোগগুলোর জন্যও সত্যি। এমনকি মার্ক জাকারবার্গও ফেসবুকের আগে অন্য চেষ্টাতে হাত পুড়িয়ে এসেছেন। আলীর পরিসংখ্যান বলছে, প্রথমবারেই বিলিয়ন ডলার কোম্পানি যারা গড়েন তবদের সংখ্যার চেয়ে যারা আগে আরও চেষ্টা করেছেন তারাই বরং ভাল করেন। মোটামুটি ৬০% সুপার উদ্যোক্তাই এই ধরণের।
২. যে সব উদ্যোগে ২ বা ৩ জন সহ উদ্যোক্তা তারাই বেশি সফল হয়েছে। তবে ২০% ক্ষেত্র কিন্তু একক উদ্যোক্তাও স্বপ্ন ছুতে পেরেছে।
৩. প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা কাম প্রধান নির্বাহীর অর্ধেকের চেয়ে বেশির বয়স ৩৫-এর চেয়ে বেশি। এর মানেই হলে ৫০%-এর বেশির কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল।
৪. ইন্টারেস্টিং হলো একই ধরণের সেক্টরের কাজের অভিজ্ঞতা খুব একটা ম্যাটার করে না। তবে হেলত কেয়ার বা বায়োটেকের ক্ষেত্রে সেক্টর অভিজ্ঞতাটাই আসল।
৫. দু:খজনক হলেও আমাদের মেনে নিতে হবে যে, বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য পড়ালেখাটা দরকার। কারণ বেশিরভাগই কিন্তু ব্যাচেলর বা এমবিএ ডিগ্রীধারী।
আমি অপেক্ষা করছি বইটা পড়ার জন্য। যাদের তর সইছে না তারা দ্রুত বইটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।