স্টার্টআপ গন্তব্য?
বাংলাদেশে যে কোন উদ্যোগ, সেটার সঙ্গে আইটির কোন যোগাযোগ থাকলেই সেটাকে স্টার্টআপ বলার একটা বাতিক তৈরি হয়েছে। তবে, সব ব্যবসা উদ্যোগই যে স্টার্টআপ নয় সেটা জানা কথা। বাংলাদেশে স্টার্টআপকে ঘিরে আমাদের এক ধরণের স্বপ্ন আছে। আমরা এখানে স্টার্টআপের একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা বলছি অনেকদিন ধরে। এসব নিয়ে একটা লেখা লিখেছেন আমাদের শওকত হোসেন ভাই। শওকত ভাই বিডিভেঞ্চারের এমডি হিসাবে বেশ অনেকদিন ধরে নতুন উদ্যোগে অর্থায়নের চেষ্টা করেন। আফগানিস্তানে যাওয়ার আগে তিনি ব্র্যাকের এসএমই ব্যাংকিং দেখতেন। কাজে, আমাদের উদ্যোক্তাদের হাড়-মাংস কালা কালা করার লড়াইটা উনি জানেন। তার লেখাটা ছাপা হয়েছে বণিকবার্তায়, গত বৃহস্পতিবার। যারা এখনো সেটা পড়েননি, তারা পড়তে পারেন বাংলাদেশ কি পরবর্তী ‘স্টার্টআপ’ গন্তব্য হতে পারবে?।
আমি ওনার লেখা খুব মনোযোগ দিয়েই পড়ি। এই লেখাটিও পড়েছি। অনেক গুছিয়ে তিনি লেখাটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন, একটি স্টাডিকে কেন্দ্র করে। শেষ করেছেন একটু আক্ষেপ করেই- “বিশ্ব স্টার্টআপ ম্যাপে ঢাকার নাম নেই। ব্যাপারটা আমাদের জন্য দুঃখের হলেও এটি কঠিন বাস্তবতা। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম হিসেবে গণ্য হতে হলে বেশকিছু কাজ করা দরকার। আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে স্টার্টআপবান্ধব করতে হবে। ১. ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে ম্যাচিং ফান্ড ও সরাসরি স্টার্টআপকে অর্থায়ন করে এটি করা যায়। তেলআবিব, সিঙ্গাপুর, সান্টিয়াগো এ কৌশল প্রয়োগ করে, বিশেষ করে ইকোসিস্টেমের প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো সুফল পেয়েছে। ২. বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মেধা দেশে আসার পথ সুগম ও ঝামেলাবিহীন করা। ৩. স্টার্টআপের জন্য নিয়মনীতি শিথিল করতে হবে, যাতে তাদের নিবন্ধন, দেউলিয়া, শেয়ার হস্তান্তর, এক্সিট ও কোম্পানি বন্ধ করা সহজ ও সাবলীল হয়। ৪. ইকোসিস্টেমটির অনন্যতা চিহ্নিত করা। এটি সেক্টরভিত্তিক বা স্টার্টআপের বয়সভিত্তিক হতে পারে। যেমন লস অ্যাঞ্জেলস মিডিয়ার জন্য বোস্টন জীবন্ত বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত। ৫. বিভিন্ন আইন-কানুন বা পলিসি স্টার্টবান্ধব করে সাজাতে হবে। সবকিছু দেখতে হবে ‘স্টার্টআপ চক্ষু দিয়ে’। ৬. নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতিভার ওপর বাজি ধরার মতো বড় কলিজার বিনিয়োগকারী, যারা একটা আইডিয়ার ১০-১৫ কোটি টাকা বা একটি পণ্য পরীক্ষা পর্যায়ের কোম্পানিকে ১০০-১৫০ কোটি টাকা মূল্যায়ন করতে পারবে।”
মোটামুটি সব কথা তিনি বলেছেন। এই লেখার সঙ্গে দ্বিমত করার কোন কারণ নেই। আমি কেবল শিরোনামের “গন্তব্য” নিয়ে সামান্য দ্বিমত পোষণ করছি। আমরা প্রায় সবকিছুতেই নিজেদেরকে গন্তব্য বানাতে চাচ্ছি। বাংলাদেশ – দি নেকস্ট আইটি ডেস্টিনেশনের মতো। তাতে আমার মনে হচ্ছে ইদানীং আমাদের মার্কেটিং ফোকাসে ঝামেলা হচ্ছে। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করেছি, আমাদের গার্মেন্টস শিল্প কখনো গন্তব্যের ব্যাপারটা বলে নাই। তারা আগে নিজেরা বিকশিত হয়ে এমন পর্যায়ে গেছে যে, বড় গার্মেন্টসরা কোন না কোনভাবে এখানে এসেছে। এ থেকে আমার মনে হয়, অন্যদের ডেকে আনার আগে আমাদের নিজেদের আরও উন্নত করা দরকার।
আইটির বেলায় কথাটা মনে হয় বেশি সত্য। বাংলাদেশ নিজেই এখন একটি বড় বাজার এবং এ বছরই এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আমাদের লোকাল আইটি মার্কেটে খরচ হবে। তাহলে আমরা কেন ভাবছি বিদেশ থেকে আমাদের প্রথম বিলিয়ন ডলারটা আনতে হবে? এই ফাঁকে আমাদের নিজেদের বিলিয়ন ডলার চলে যাচ্ছে নাতো?
স্টার্টআপের বেলায়ও আমার একথাটা মনে হয়। আমাদের যে সমস্যা তার উদ্ভাবনী সমাধান দিয়ে নানান উদ্যোগ গড়ে উঠতে পারে। সেগুলোর জন্য একটা স্টার্টআপ সংস্কৃতি আমরা বানানোর চেষ্টা করি। আমাদের হাই-গ্রোথের পাশাপাশি কনস্ট্যান্ট গ্রোথের দিকেও নজর দেওয়ার দরকার। সে হিসাবে আমি বলি একটা উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ আমরা গড়ে তুলতে পারলে হয়। সেটা বরং অন্যদের ডেকে আনার চেয়ে ভাল হতে পারে।
আর এ কাজের অনেকগুলো পর্যায় মনে হয় আমরা নিজেরাই করে ফেলতে পারি। অন্তত চেষ্টা করা যেতে পারে।