নিজের উদ্যোগ শুরু করুন – ১ : সাপ্লায়ার ম্যানেজমেন্ট
‘দুই ঘণ্টায় জ্বলেপুড়ে শেষ হলো আমার তিলতিল করে গড়ে তোলা কুসুমকলির কারখানা। আগুনের তীব্রতা এত বেশি যে, একটি সুতাও আমরা বের করতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে মনে হলো, কী লাভ কান্নার। আমাকে ফের দাঁড়াতে হবে।’
২০১৬ সালে বিশ্ব উদ্যোক্তা সপ্তাহের একদিনে গাজিপুরে নিজের কারখানায় আলাপ করছিলাম নাজমা খাতুনের সঙ্গে। নাজমা খাতুন আমাদের কুসুমকলির উদ্যোক্তা। ওনাকে তাকে চিনেন। আমার “নিজের উদ্যোগ শুরু করুন” বই-এর একটি অধ্যায় লিখতে গিয়ে ওনার কথাটাই সবার আগে মনে পড়লো।
আগুন লেগে জুতার কারখানা পুড়ে যাওয়ার দিন রাতেই কাগজপত্র নিয়ে বসেছিলেন তিনি। দুই দিন আগে নামীদামি জুতার একটি কোম্পানিতে জুতা সরবরাহের বিল পেয়েছিলেন ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকার। ব্যাংকে সেটিই জমা হয়েছে। আর আছে দুই খদ্দেরের দুটি কার্যাদেশ। কাঁচামাল কী কী লাগবে দুই কার্যাদেশের জন্য, রাতেই হিসাবনিকাশ করে ফেললেন। ১৬ জন কর্মী রেখে বাকি কর্মীদের বেতন চুকিয়ে দিয়ে অন্য কোথাও কাজ নিতে পরামর্শ দিলেন।
আর সাপ্লায়ারদের জন্য কী করলেন?
অনেকে হয়তো যা করতেন, নাজমা সেটা করলেন না। তিনি করর্মীদের জন্য কিছু আর জরুরী কাজের জন্য কিছু টাকা রেখে বাকী সব টাকা তার সাপ্লায়ারদের দিয়ে দেওয়ার জন্য ঠিক করলেন! তাদের প্রত্যেকের জন্য চেক লিখলেন। আগুন লাগার দুই একদিনের মধ্যে তাদের সবার সঙ্গে বসলেন। সাপ্লায়াররা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন কুসুমকলি কারখানার আগুনের কথা। কেউ কেউ মাথায় হাতও দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি হলে কে বা পাওনাদারদের টাকা ফেরৎ দেয়?
তবুও তারা হাজির হলেন নাজমার ডাকে। নাজমা তার দুর্ঘটনা, ব্যাংকে জমা টাকার হিসাব আর দুইটি কার্যাদেশের কথা বললেন। এবং প্রত্যেক সাপ্লায়ারকে টাকা দিলেন, কাউকে আংমিক আর কাউকে পুরো বিল!
এবার একটু ভাবুন। ঐ সাপ্লায়ারদের স্থানে আপনি থাকলে কী করতেন?
জি। আপনিও তাই করতেন যা ওনারা করেছেন। সবাই তাকে এই অবস্থাতে বাকীতে মালামাল দিতে রাজি হলেন। কেউ কেউ নতুন কাজের খবর দিলেন। নাজমা খাতুনের পুরো গল্পটা এখান থেকে পড়ে নিতে পারবেন। পরের অংশটুকু এ লেখার জন্য প্রযোজ্য নয়।
মূল বিষয় হলো উদ্যোক্তাদের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা। নতুন কিংবা সদ্য উদ্যোক্তাদের অনেকেই সাপ্লায়ার ম্যানেজমেন্টে মার খেয়ে যান। কারণ “তিনি জিততে চান” এবং “সাপ্লায়ারকে জেতাতে চান না”।
ফলাফল কিন্তু দুজনের জন্যই খারাপ। আর যদি আপনি নতুন উদ্যোক্তা হোন আর যদি আপনার সাপ্লায়ার সিজনড হয়, তাহলে হারটা আপনারই হবে।
তাহলে উইন উইন সিচুয়েশন করার উপায় কী?
উপায় হলো সিস্টেমেটিক্যালি, হুইমজিক্যালি নয়, সাপ্লায়ার ম্যানেজমেন্টে চোখ বুলিয়ে নেওয়া।
দেখা যাক।
[আমার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন টুইটার, লিংকডইন, ইউটিউব বা ফেসবুকে।
দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত আমার লেখা পড়তে পারেন এখান]